ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

হাতিয়ায় তলিয়ে গেছে ২২ হাজার হেক্টর আমন খেত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৬
হাতিয়ায় তলিয়ে গেছে ২২ হাজার হেক্টর আমন খেত বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ নাডার প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ২২ হাজার হেক্টর রোপা আমন নুয়ে পড়ে পানিতে তলিয়ে গেছে।

নোয়াখালী: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ নাডার প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ২২ হাজার হেক্টর রোপা আমন নুয়ে পড়ে পানিতে তলিয়ে গেছে।

পানিতে ডুবে থাকা আমন ধান আশানুরূপ উৎপাদন না হওয়ার শংকা দেখা দিয়েছে কৃষকের মধ্যে।

গত শুক্রবার (০৪ নভেম্বর) থেকে রোববার রাত পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে আমনের খেতে পানি জমে যায়। এতে বাতাসে নুয়ে পড়া রোপা আমন পানিতে ডুবে যায়।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব ধান খেতের রোপা আমন বাতাসের কবলে পড়ে পানিতে নুয়ে পড়েছে। দেখা গেছে প্রায় ধান গাছেই থোড় এসেছে। কিছুতে ফুল ও দুধ অবস্থায় রয়েছে। কৃষকরা বলছে গত শুক্রবার দুপুর থেকে আকাশে মেঘ দেখা যায়। বিকেল থেকে শুরু হয় হালকা থেকে দমকা হাওয়া। মধ্যরাতের দিকে বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হলেই ধান গাছগুলো নুয়ে পড়ে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে হাতিয়ায় প্রায় ৬৪ হাজার হেক্টরের মধ্যে ২২ হাজার ৯৪৮ হেক্টর জমির রোপা আমন বাতাসে নুয়ে পড়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা গত শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত উপজেলার নদী তীরবর্তী ইউনিয়নগুলো পরিদর্শন করেন।

দেখা গেছে, উঁচু এলাকার জমিগুলোর রোপা আমন এখনও কিছুটা দাঁড়িয়ে আছে। তবে পরিদর্শনকৃত এলাকার প্রায় ৫৫-৬০ শতাংশ রোপা আমন বাতাসে নুয়ে পড়ে পানিতে তলিয়ে গেছে। সৃষ্ট এ জলাবদ্ধতা যদি আরো ২-৩ দিন থাকে তাহলে পানিতে পড়ে থাকা ধানগুলোর প্রায় সবগুলোই পচে যাবে।

ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন কৃষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানায়, চলতি মৌসুমে রোপা আমন আবাদ ভালো হয়েছে। বর্তমানে ধান পাকতে শুরু করেছে। বাংলা আশ্বিন মাসে আবাদ করা এ ধান চলতি (কার্তিক) মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঘরে তোলার কথা ছিল। ধার ও ধানের উপর (সুদে) টাকা নিয়ে আবাদ করেছেন তারা। দুর্যোগের কবলে পড়ে এখন সবাই প্রায় সর্বশান্ত।

তারা আরো জানান, দুর্যোগের কবলে না পড়লে এ বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন ঘরে তুলতেন তারা। কিন্তু দুই দিনের অতিবৃষ্টি ও বাতাসে ধান নুয়ে পড়েছে। যদি দ্রুত পানি সরে যায় তাহলে হয়তো প্রতি একরে ৩৪ থেকে ৪০ মণ করে ধান তুলতে পারবেন। আবার যা ঘরে তুলবেন এর মধ্যেও অনেক ধান মরা পড়বে।

এরপরও তাদের আবাদের খরচ উঠবেনা। এ অবস্থায় কীভাবে ধার ও ধানের উপর নেওয়া টাকা শোধ করবেন তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা। তাদের অভিযোগ এমন ক্ষতিতে সরকারিভাবেও কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ পাননা তারা।

হাতিয়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, উপজেলায় ৩৩ শতাংশ রোপা আমন, বিশেষ করে স্থানীয় জাত ঝড়ো বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পানি সরে গেলে হয়তো অতটা সমস্যা থাকবে না। তারপরও প্রতি মূহুর্তে কৃষি বিভাগ মাঠে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

তিনি আরো জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত লিখিত রিপোর্ট করা হচ্ছে। একইসঙ্গে আমনের ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেওয়া যায় এবং রবি মৌসুমে কীভাবে আরো ভালো শস্য উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে মাঠে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন তার কৃষি কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।