ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পাসপোর্ট অফিসে ধাপে ধাপে ভোগান্তি

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৬
পাসপোর্ট অফিসে ধাপে ধাপে ভোগান্তি ছবি- রানা- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

ভোগান্তি ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়া যেন জেগে স্বপ্ন দেখা। কেননা পাসপোর্টের জন্য অফিসটির প্রতিটি ধাপেই পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে।

ঢাকা: ভোগান্তি ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়া যেন জেগে স্বপ্ন দেখা। কেননা পাসপোর্টের জন্য অফিসটির প্রতিটি ধাপেই পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে।

সোমবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে সরেজমিন ঘুরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া যায়।
 
ভোগান্তির শুরু হয় তথ্য ও অনুসন্ধান কেন্দ্র থেকে। কেউ নতুন পাসপোর্ট বা পাসপোর্ট রি-ইস্যু করার জন্য ফরম সংগ্রহ করতে হলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে। ফরম সংগ্রহ করার পর দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের কাছে সহযোগিতার আশ্বাসে আগ্রহভরে কথা বলতে চান অনেকেই। কিন্তু সেই কর্তা ব্যক্তিদের একটুও সময় নেই ভুক্তভোগীদের জন্য।  
 
এমনই একজন মো. জাকির হোসেন। বাচ্চার জন্য নতুন পাসপোর্ট করতে এসেছেন মিরপুর থেকে। তিনি জানান, এখান থেকে ফরম সংগ্রহ করে পূরণ করি নিজেই। কিন্তু ফরমের প্রথম প্যারা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নাম ও ছেলের পেশা পূরণ না করায় জমা নেয়নি, পাঠিয়ে দিয়েছে তথ্য কেন্দ্রে। এখন এখানে এসে কথা বলার চেষ্টা করেও পাচ্ছি না। তথ্য ও অনুসন্ধান কেন্দ্রে দায়িত্বরত অফিসারের কাছে জানতে চাইলে ওই ভুক্তভোগীকে জানিয়ে দেন, এখন সময় নেই পরে আসেন।  
জাকির হোসেনের দাবি আমার ছেলের বয়স মাত্র ৭ বছর, ওর আবার কি পেশা। তাই খালি রেখেছি। এখন কিভাবে করলে সঠিক হবে তাও কেউ বলছেন না। পাসপোর্ট করতে এসে এতো হয়রানি হতে হয় জানা ছিলো না।  
 
পাসপোর্টের ফরম পূরণ করার পর নতুন ভবনের নিচতলায় প্রথমে একটি সিল সংগ্রহ করতে হয়। সেখান থেকে এন্ট্রি করার পর পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে পাশের লাইনে অথবা তিন তলা বা দোতলায়। সেখানে গিয়ে আবার লাইনে দাঁড়িয়ে জমা দিতে হবে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে ৪তলা অথবা ৫তলায় যেতে হবে ছবি তুলতে। এর মধ্যে একটি টেবিল থেকে ফাইল ফেরত আসলে চলে যায় আবার নিচে। ঠিক সাপ-লুডু খেলার মতো। এক লাফে নিচে নামিয়ে দেন কর্মকর্তারা।  
 
বয়স্ক লোকদের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের হয়রানি আরও বেশি। কারণ নিজের ফাইল নিয়ে নিজে দৌড়াতে হলে প্রতিটি ফ্লোরে ফ্লোরে দৌড়াতে হবে। কেউ বিনা পয়সায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন না। ভেতরে যে আনসার সদস্যরা রয়েছেন তাদের কাছে কিছু টাকা ধরিয়ে দিলেই কম ভোগান্তিতে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যায়।
 
পাসপোর্ট ফরম জমা দেওয়ার পর মো. মোজাহার হোসেন (৭০) এর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, বাবা বলে লাভ কি? সকালে আসছি একবার এই ফ্লোরে তো আরেকবার ওই ফ্লোরে পাঠিয়ে দেয়। কারও কাছে সহযোগিতা চাইলে সবাই বলে ব্যস্ত, অন্য জায়গায় দেখান। এই করে করে নিজেই হেঁটে হেঁটে পাঁচতলায় উঠেছি। ছবি তুলে এখন যাচ্ছি। লিফটে উঠতে গেলে লম্বা লাইন। এখানে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলে ওদিকে আবার লাইনের পেছনে পড়ে যাই। তাই ভোগান্তি মাথায় নিয়েই আমাকে যেতে হবে।  
 
পাসপোর্ট অফিসের এমন চিত্র প্রতিদিনের। এদিকে দালালদের একটি চক্র সর্বদাই সক্রিয়। সুযোগ পেলেই ফরম পূরণ থেকে ভুয়া সিল, স্বাক্ষর দিয়ে কাগজপত্র সত্যায়ন করে দিচ্ছেন। একটি ফরম পূরণ ও সত্যায়নের জন্য নেওয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৬
এসএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।