ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

৫০০ টাকায় মেলে সত্যায়িত! বাদ পড়ছে পাসপোর্ট ফরম

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৬
 ৫০০ টাকায় মেলে সত্যায়িত! বাদ পড়ছে পাসপোর্ট ফরম ছবি: রানা

সাভারের বিরুলিয়ার সাহানারা খাতুন (৫৫)। সকালে রাজধানীর উত্তরা মডেল টাউনে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলেন বড় মেয়ে আরজিনা খাতুনের পাসপোর্ট করাতে।

ঢাকা: সাভারের বিরুলিয়ার সাহানারা খাতুন (৫৫)। সকালে রাজধানীর উত্তরা মডেল টাউনে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলেন বড় মেয়ে আরজিনা খাতুনের পাসপোর্ট করাতে।

কিন্তু উত্তরা অফিস আগারগাঁওয়ের বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরে পাঠিয়ে দেয় তাকে।

সৌদি আরবে যেতে স্থানীয় দালাল ১৫ দিনের মধ্যেই পাসপোর্ট করতে বলেছেন। তাই এতো তাড়া সাহানারা খাতুনের।

কিন্তু কখনও উত্তরা আঞ্চলিক, কখনও আগারগাঁও অধিদফতর কার্যালয়ে ঘুরতে হচ্ছে এই বৃদ্ধাকে।

আগারগাঁও অফিসের এক দালালের মাধ্যমে ফরম পূরণ বাবদ ৩০০ টাকা ও সত্যায়িত বাবদ ৫০০ টাকা খরচও করেছেন সাহানারা। কিন্তু জাল করে সত্যায়িত করার কারণে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর ফরম বাতিল করেছে। অন্যদিকে অন্যায়ভাবে ৮০০ টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা দালালচক্র।

সাহানারা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সকাল থেকে লাইনে দাঁড়াইয়ে ফরোম জমা দিনু। পরে হ্যারা (পাসপোর্ট অধিদফতরের কর্মকর্তা) ফরোম বাতিল করছেন’।

শুধু সাহানারা খাতুনই নন, দালালচক্রের ফাঁদে পা দিয়ে বিপাকে পড়ছেন অনেকেই। সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তাদের সিল নকল করে জাল সত্যায়িত করছেন দালালরা। বিনিময়ে দুই থেকে তিনশ’ টাকা নেওয়া হচ্ছে পাসপোর্ট করতে আসা মানুষের কাছ থেকে। অথচ এসব পাসপোর্ট ফরম পরে বাতিল ঘোষণা করছে পাসপোর্ট অধিদফতর।

মধ্যবাড্ডার আরিফুল ইসলাম জানান, পাসপোর্ট ফরম পূরণ, টাকা জমা, ফরম জমা ও সত্যায়িত থেকে শুরু করে এক হাজার টাকায় চুক্তি হয়েছিল দালাল চক্রের সঙ্গে। পরে সেই ফরম বাতিল হয়েছে একমাত্র জাল সত্যায়িত করার কারণে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পাসপোর্ট করতে আসা মানুষ দেখলেই ছুটে আসছেন দালালরা। পরে পাসপোর্ট অধিদফতরের পাশে নিয়ে গিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

এর মধ্যে বেশি তৎপর দালাল সোহাগ বলেন, ‘সত্যায়িত করলে কোনো সমস্যা হবে না। আমরা অ্যাডভোকেট দিয়ে সত্যায়িত করাবো, কোনো সমস্যা নাই। ৮ দিনেই পাসপোর্ট দেবো, নেবো ১২ হাজার টাকা। তবে সত্যায়িত করতে নেবো পাঁচশ’ টাকা। আমার নিজের দোকান আছে, কোনো সমস্যা নেই। আমরা কাউকে কোনো হয়রানি করছি না’।

পাসপোর্ট অফিসের সামনে আছে নামমাত্র তথ্যকেন্দ্র। কিন্তু এখানে সঠিক তথ্য মিলছে না। এ সুযোগে হয়রানি করছে দালালচক্র।

রামপুরার তারিকুল ইসলাম পাসপোর্ট অফিসের তথ্য সেবায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কোথায় টাকা আর কোথায় ফরম জমা দেবো, সে বিষয়ে কেউ সহায়তা করছেন না। কোথায় ছবি তুলবো, সেটাও বুঝতে পারছি না। সকাল থেকে সিলিং ফ্যানের মতো শুধু ঘুরছি। পাসপোর্ট অফিসের সামনে কোনো দিক-নির্দেশনাও নেই’।

সঠিক তথ্য না পেয়েই অনেকে দালালের দ্বারস্থ হচ্ছেন। জরুরি ভিত্তিতে খরচ ৬ হাজার ৯০০ টাকা, ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যেই পাওয়া যাবে পাসপোর্ট। সাধারণভাবে খরচ ৩ হাজার ৪৫০ টাকা, ২৫ দিনেই পাওয়া যাবে পাসপোর্ট। অথচ দালাল চক্রের খরচ এর কয়েকগুণ বেশি।

দালাল হানিফ বলেন, ‘পুরো পাসপোর্ট ১২ হাজার টাকায় করে দেবো। সময় নেবো মাত্র ৮ দিন। আমাদের কাছে কন্ট্রাক্ট দেন, কোনো সমস্যা নেই। সত্যায়িত করবো সঠিকভাবে। তবে পাসপোর্ট ফরম কন্ট্রাক্ট না দিলেও সমস্যা নেই।   আমাদের কাছে দুই হাজার টাকা দিলেই ফিঙ্গার প্রিন্ট পর্যন্ত কাজ রেডি হবে। অনেক সময় ফরম বাতিল হতে পারে। তবে ১২ হাজার টাকা দিলে ফরম বাতিল হওয়ার কোনো ভয় নাই’।

বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের পরিচালক (ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস) এ টি এম আবু আসাদ বাংলনিউজকে বলেন, ‘অনেকে তাড়াহুড়া করে দালালের মাধ্যমে জাল সত্যায়িত করেন। পরে আমাদের কর্মকর্তারা তা বাতিল করে দেন। এটি প্রায়ই ঘটে থাকে। কয়েক দিন পর পর র‌্যাব ও পুলিশ এসব দালালদের ধরে নিয়ে যায়। আমরা সাধারণ মানুষদের বলবো, ‘আপনারা তাড়াহুড়া করে দালালদের মাধ্যমে সত্যায়িত করাবেন না। আশেপাশের পরিচিত সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সত্যায়িত করান’।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।