ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

লাউয়াছড়া থেকে খাসিয়া পুঞ্জি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৬
লাউয়াছড়া থেকে খাসিয়া পুঞ্জি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত ছবি- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

 অবশেষে লাউয়াছড়ার ‘বিষফোঁড়া’ হিসেবে চিহ্নিত খাসিয়া পুঞ্জি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোর জোন থেকে সরিয়ে বাফার জোনে নেওয়ার বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ সূত্র।

লাউয়াছড়া জাতীয় ‍উদ্যান (মৌলভীবাজার) থেকে ফিরে :  অবশেষে লাউয়াছড়ার ‘বিষফোঁড়া’ হিসেবে চিহ্নিত খাসিয়া পুঞ্জি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোর জোন থেকে সরিয়ে বাফার জোনে নেওয়ার বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ সূত্র।


 
সম্প্রতি লা‌উয়াছড়ার কোর জোনে পুঞ্জির অবস্থান নিয়ে একাধিক রিপোর্ট আপলোড করে বাংলানিউজ। রিপোর্টে উঠে আসে লাউয়াছড়ার ভয়ঙ্কর চিত্র, যা এতোদিন ছিল প্রশাসনেরও অজানা। আর বাংলানিউজে এসব ভয়ঙ্কর চিত্র উঠে আসার টনক নড়ে প্রশাসনের। যে কারণে এ কঠোর সিদ্ধান্ত এসেছে বলে জানিয়েছেন একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা।
 
লাউয়াছড়া বাঁচাতে খোদ প্রধানমন্ত্রী পুঞ্জি স্থানান্তরের পক্ষে বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন বন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা। বাফার জোনে স্থানান্তর করার বিষয়ে সমীক্ষার কাজও শুরু হয়েছে। জায়গা দেখা শেষ হলেই খাসিয়া পুঞ্জি স্থানান্তরের কাজ শুরু হবে বলে জানান তারা।  
 
খাসিয়া পুঞ্জি স্থানান্তরে প্রাথমিকভাবে বাফার জোন কালাছড়া ও চাউতরির বিষয়ে সক্রিয় বিবেচনা করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর দফতরে প্রস্তাব পাঠানো হবে। তবে তার আগে খাসিয়াদের সঙ্গেও আলোচনা করতে চায় বন বিভাগ।
 
সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দো বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, খাসিয়াদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষেই পুঞ্জি স্থানান্তরের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’ থেকে খাসিয়াদের পুর্নবাসনের সব অর্থ যোগান দেওয়া হবে।  
 
পুর্নবাসন করতে প্রত্যেকটি পরিবারকে বাড়ি করে দেওয়া হবে বলেও জানান মিহির কুমার দো।
 
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবীর বিন আনোয়ার। ওই বৈঠকে লাউয়াছড়ার বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কোর জোনে থাকা লাউয়াছড়া ও মাগুরছড়া পুঞ্জি স্থানান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।  

ওই বৈঠকে বলা হয়েছে, পুর্নবাসনে যা অর্থের প্রয়োজন, সব দেওয়া হবে। কিন্তু লাউয়াছড়ার বিষয়ে কোনো ছাড় নয়।
 
খাসিয়ারা লাউয়াছড়ার আদিবাসী ও মালিক দাবি করলেও কাগজপত্র তাদের পক্ষে সায় দেয় না। বন বিভাগের নথি বলছে, ১৯৮৩ সালে ভিলেজার হিসেবে ৬৩টি পরিবারকে জমি লিজ দেওয়া হয়। সেই সময়ে ৪০টি পরিবারকে ৮ নম্বর কম্পাটমেন্টে আর ২৩টি পরিবারকে দুই নম্বর কম্পাটমেন্টে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। প্রত্যেক পরিবারকে আড়াই একর করে আর দুই পুঞ্জির দুই হেডম্যানকে সাড়ে ৪ একর করে জমি লিজ দেওয়া হয়। যা দিয়ে তাদের জীবিকা নির্ধারণ করার কথা ছিল।
 
বন বিভাগের হিসেব অনুসারে মাত্র ১৬১.৫ একর জমি লিজ দেওয়া হয় খাসিয়াদের। কিন্তু খাসিয়ারা ঠিক কতোটুকু জায়গা দখল করে রেখেছেন তার হিসেবে নেই খোদ বন বিভাগের কাছেও। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দো নিজেও স্বীকার করেছেন, যে পরিমাণ জমি লিজ দেওয়া হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি জমিতে তারা পান চাষ করছেন।
 
সরেজমিনে ঘুরে লাউয়াছড়া ও মাগুরছড়া পুঞ্জির চারপাশের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে পান চাষ করতে দেখা গেছে। রেললাইন ধরে হাঁটলে সীমানা পিলার ২৯৩ থেকে ২৯৬ কিলোমিটার পর্যন্ত মাঝে আধা কিলোমিটার ছাড়া পুরোটাতেই পান চাষ হতে দেখা গেছে।
 
কেউ কেউ পান চাষকে বনের জন্য সহায়ক দাবি করলেও বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। পান চাষের উপযোগী করতে গাছগুলোর ডালপালা ছেঁটে বনসাই করে ফেলা হয়েছে। কোথাও কোথাও সুর্যের আলো প্রবেশের জন্য ডগাও ছেঁটে দেওয়া হয়েছে। আর ডগা কেটে দেওয়ায় অনেক গাছ ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। এতে উজাড় হয়ে যাচ্ছে সংরক্ষিত এই বনটি।  
 
অন্যদিকে খাসিয়াদের যে লিজও প্রতি বছর নবায়ন করার কথা। যথারীতি ১৯৯০ সাল পর্যন্ত নবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু এরপর থেকে আর নবায়নের অনুমোদন দেয়নি বন বিভাগ। কেন নবায়ন করা হয়নি বা নবায়ন করেননি খাসিয়ারা, তার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। তবে বন বিভাগের লোকজন দাবি করেছেন, লাউয়াছড়াকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণার প্রস্তাব তৈরি করা হয় নব্বই এর দশকের শুরুতে। ফলে আর সংরক্ষিত বনের জমি লিজ দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। হয়তো সে কারণেই লিজ নবায়ন করা হয়নি।
 
লাউয়াছড়া পুঞ্জির মন্ত্রী পিলা পতমী বাংলানিউজকে বলেন, ‘পুঞ্জি স্থানান্তরের বিষয়ে আমরা এখনও কিছু জানি না। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত হলে অবশ্যই আপত্তি থাকবে আমাদের। আমরা আশা করবো, সরকার অবশ্যই আমাদের দিকটাও বিবেচনা করবে। কারণ, এই বন সৃষ্টির পেছনে আমাদের অবদান অনেক বেশি’।
 
**লাউয়াছড়ার গহীনে কি আছে

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৬
এসআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।