ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কাক ডাকা ভোরে ঘুম ভাঙে তাঁত পল্লীর মানুষের

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
কাক ডাকা ভোরে ঘুম ভাঙে তাঁত পল্লীর মানুষের ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মকবুল হোসেন ও হাবিবা খাতুন, সম্পর্কে বাবা-মেয়ে। দু’জনেই বসা তাঁত মেশিনের চালকের আসনে। মেশিনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে তাদের কর্মযজ্ঞ।

আদমদীঘির শাঁওইল গ্রাম থেকে ফিরে: মকবুল হোসেন ও হাবিবা খাতুন, সম্পর্কে বাবা-মেয়ে। দু’জনেই বসা তাঁত মেশিনের চালকের আসনে।

মেশিনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে তাদের কর্মযজ্ঞ।

দু’পা মেশিনের নিচের অংশ পরিচালনা করছে। ওপরে ঝোলানো দঁড়ির মাথার নিচপ্রান্ত ধরে টানাটানিতে সচল একহাত। আরেক হাত দিয়ে সুতোর কাঠি ‘আকু’ মেশিনের এপাশ-ওপাশে করা হচ্ছে। মোটামুটি খাবারের সময়টুকু ছাড়া তাঁত মেশিনে ব্যস্ত থাকেন তারা।

এভাবে একটা সময় পর মেশিন থেকে বেরিয়ে আসছে রং-বেরংয়ের বাহারি ডিজাইনের কম্বল, তোয়ালে, চাদর, গামছাসহ বিভিন্ন ধরনের তাঁতের বস্ত্র।

বগুড়া শহর থেকে বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়ক ধরে প্রায় ৩০কিলোমিটার পশ্চিমে গেলে আদমদীঘি উপজেলা সদর। সদর থেকে ৫-৬ কিলোমিটার উত্তরে নশরৎপুর ইউনিয়নের শাঁওইল গ্রাম।
প্রায় ৪২টি গ্রাম নিয়ে এ ইউনিয়ন। চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম ভাঙে এ গ্রামের হাজারো তাঁতীর। কাকডাকা ভোর থেকে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েন হাজারো কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষেরা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাদের কর্মযজ্ঞ।

পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় একে-অপরের সহায়তাসহ বিভিন্ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত ইছাহাক আলী ও বৃদ্ধ জরিনা বিবি। তাদের সঙ্গে লাটাই, চরকি ও ড্রাম ঘুরিয়ে সুতা গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন নূরজাহান বিবি, তার মেয়ে নাজমা আক্তার এবং কিশোরী রাজিয়া খাতুন। এসব কাজে তাদের সহযোগিতা করছিলেন ইছাহাক আলী। শাঁওইল গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চলে এ ধরনের কর্মযজ্ঞ।

এছাড়া বস্ত্র তৈরিতে আঁচ, রও, নলি, আকু, চরকা, চরকি, লাটাই, সুতো, রংসহ  প্রয়োজন হয় বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী।
১৯৭৯-৮০ সালের কথা। তখন এ গ্রামের হাতে গোনা কয়েকজন ব্যক্তি কম্বল বানাতে তাঁত মেশিন স্থাপন করেন। বর্তমানে এ গ্রামে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি তাঁত মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে ‘মনোরঞ্জন’ মেশিন তৈরিতে ১৫ থেকে ২০ হাজার ও ‘ঠকঠকি’ তৈরিতে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়।

সময়ের ব্যবধানে আশপাশের এলাকাসহ দুপচাঁচিয়া উপজেলার শেষপ্রান্ত থেকে শুরু করে সান্তাহারের শুরুর গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত ঘটেছে এ শিল্পের।

ঠিকমত কাজ করলে দিনে ১৮ থেকে ২০টি কম্বল তৈরি করা যায় বলে জানান এ গ্রামের তাঁতীরা। বাংলানিউজকে জানান, একইভাবে চাদর ১৮ থেকে ২০টি, তোয়ালে ১০৫ থেকে ১২০টি ও গামছা ১০ থেকে ১৫টি তৈরি করা সম্ভব।
রকমভেদে প্রতি পিস কম্বল ২৫০ থেকে ৭শ’ টাকা, তোয়ালে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, চাদর ৪শ’ থেকে ৭শ’ টাকা, গামছা ১৪০ থেকে ২৫০ টাকা (এক থান চার পিস) দামে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে বাজারে।

মোজাহার আলী ও শাহীনুর আলম বাংলানিউজকে জানান, ঢাকার বিভিন্ন গার্মেন্টেসের অপ্রয়োজনীয় সুতো দিয়ে তৈরি করা হয় এসব বস্ত্র।

তারা জানান, সুতোগুলো আনার পর নানাভাবে তা উপযোগী করে তোলা হয় বস্ত্র বানানোর কাজে। এরপর সুতোর সঙ্গে অন্যান্য জিনিসের সমন্বয় ঘটিয়ে তৈরি করা হয় কম্বলসহ আকর্ষণীয় সব বস্ত্র।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
এমবিএইচ/ওএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।