ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘আপনাদের ছোট আপসেও বুকে সুনামি হয়’ (ভিডিও)

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
‘আপনাদের ছোট আপসেও বুকে সুনামি হয়’ (ভিডিও) ডা. নুজহাত চৌধুরীর বক্তব্য

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের সঙ্গে আপস না করার আহ্বান জানিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আব্দুল আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেছেন, ‘ছোট ছোট আপসে শহীদ পরিবারের সন্তানদের বুকে সুনামি হয়ে যায়।’

শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আব্দুল আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আয়োজিত এক সভায় অশ্রুসজল বক্তব্য রাখেন তিনি।

তার বক্তব্যের ভিডিও বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে দেওয়া হলো।

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের সঙ্গে আপস না করার আহ্বান জানিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আব্দুল আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেছেন, ‘ছোট ছোট আপসে শহীদ পরিবারের সন্তানদের বুকে সুনামি হয়ে যায়। ’

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
 
উপস্থিত রাজনৈতিকদের উদ্দেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আব্দুল আলীমের কন্যা বলেন, ‘আপনারা ক্ষমতার বিভিন্ন পদে আসীন আছেন। ...রাজনৈতিক কারণে হয়তো আপনাদের অনেক কিছু ম্যানেজ করতে হয়। ছোট ছোট আপস আপনার চেয়ারে বসে হয়তো কিছু নয়। একটা উপজেলা বা তৃণমূলের কাছে হয়তো এটা কিছু না।

কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধে রক্তে দিয়েছে তাদের সম্মানে কী বিশাল সুনামি হয়ে যায়, কী বড় আঘাত আসে! একটা সুনামি যখন হয় তখন মাঝ সমুদ্রে সেটা ২ বা ৩ ফিট। কিন্তু যখন তীরে আছড়ে পড়ে তখন সেটা ৭ মিটার বা ৭০ মিটার হয়। ’

নুজহাত চৌধুরী ‌আরও বলেন, ‘অর্থ, যোগাযোগ সব কিছু স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে। এসবের বিনিময়ে একটা নিয়োগ যখন হয়ে যায়। ... তৃণমূলে কত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, কত বীরাঙ্গনা ধুকে ধুকে মরছে। আমরা কি করে আপনাদের কাছে পৌঁছাবো। আপনাদের আমাদের কাছে আসতে হবে। আমাদের বুকে টেনে নিতে হবে। ’
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ডা. নুজহাত চৌধুরীক্ষোভ প্রকাশ করে শহীদ বুদ্ধিজীবীর এই কন্যা আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে জানতে চাই আপনারা যদি সোনার বাংলা, বঙ্গবন্ধুর আর্দশের লোক হন তাহলে মুক্তিযোদ্ধার গায়ে কিভাবে রডের বাড়ি পড়ে। শহীদ সন্তানদের বুকে এটা যে কত বড় আঘাত। সম্মানে যে কত বড় অপমান। আশা করি আপনারা এটা বুঝবেন। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা এই বাংলাদেশ চাই না। আমরা চেয়েছি যত শোক, যত বিচারহীনতার সংস্কৃতি সব চলে যাক। আমরা তো ত্রিশ লাখ মানুষের রক্ত দিয়ে এ মাটি পবিত্র করেছি। তাহলে কেন আরেকটা দীপন হবে? কেন আরেকটা অভিজিৎ হবে? কেন আমাদের ভাইয়দের মেরে ফেলা হবে। একজন সাংবাদিককে কেন বোমা মেরে ‍উড়িয়ে দেবে?’
 
সাম্প্রদায়িকতাকে ৭৫-এর পর সাংবিধানিকভাবে এ দেশে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিলো বলেও মন্তব্য করেন নুজহাত চৌধুরী।
 
শহীদ বুদ্ধিজীবী কন্যা আরও বলেন, ‘আমাদের বাবারা চলে গেছেন মাথা উঁচু করে। আমাদের মায়েরা কোনো অভিযোগ ছাড়াই, অনুযোগ ছাড়া চোখের জল গোপন করে দীর্ঘ ৪৫ বছর সংগ্রাম করছেন। একটি সুন্দর সোনার বাংলা দেখবো বলে এ ত্যাগ আমরা হাসিমুখে মেনে নিয়েছি। ’
 
রাজনৈতিক বিজয় আমাদের অর্জন হয়েছে। আদর্শিক যুদ্ধ কিন্তু চলছে উল্লেখ করে সবাইকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান নুজহাত চৌধুরী।
 
শহীদ বাবার স্মৃতিচারণ করে নুজহাত চৌধুরী বলেন, ‘বাবার আদরের মেয়ে ছিলাম। ঠিক এক বছরের বড় একটা বোন আছে। এক বছর পর হয়েছিলাম। আমার মা আমাকে ঠিক মতো সময় দিতে পারতেন না। আমার বোনটা একটু অসুস্থও ছিলো। মায়ের অজান্তে বাবার বুকে বড় হচ্ছিল‍াম। এত ব্যস্ত একজন ডাক্তার রাতের বেলা ফিরে এসে বুকে নিয়ে ঘুমাতেন। ’
 
নুজহাত বলেন, ‘আমার বাবাকে ধরে নিয়ে যায় ১৫ ডিসেম্বর বিকেল বেলায় ... আমার বাবার লাশটা যখন ১৮ তারিখে পাই। বুকটা ঝাঁঝরা ছিলো গুলিতে। তার কপালে বেয়োনেট চার্জ করা ছিলো। বঙ্গবন্ধু কিন্তু দেশে নেমেই বলেছিলেন, ওরা আমার চোখের ডাক্তারকে কি মেরে ফেলেছে?’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী, শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিনের ছেলে শাহীন রেজা নূর।

এ সময় মঞ্চে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিমসহ দলটির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
এমইউএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।