কর ফাঁকি রোধ করতে এই তিন বিভাগের সমন্বয়ে অভিন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে এনবিআর এখনও দাঁড়াতে পারেনি। দেশের সার্বিক উন্নয়নে রাজস্ব ব্যবস্থায় সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (০৮ নভেম্বর) বিকেলে দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের প্রাতিষ্ঠানিক টিমের এ রিপোর্ট অনুমোদন করে দুদক।
পরে কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব সারোয়ার মাহমুদের সই করা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের এ চিঠি ও সুপারিশ করা হয়েছে।
পাশাপাশি আয়কর বিভাগের কিছু কর্মকর্তা আইন, বিধি এবং নিয়মবহির্ভূত আয়কর প্রদানকারী ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠানের অঘোষিত পরামর্শক হিসেবে কাজ করা দুর্নীতির অন্যতম কারণ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে দুদকের ওই চিঠিতে।
দুদক সূত্র বলছে, আয়কর বিভাগ ও কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট সংক্রান্ত আইন, বিধি, পরিচালন পদ্ধতি, ট্যাক্স ও রাজস্ব ফাঁকির দিকসমূহ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে এনবিআরের সম্ভাব্য ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক এবং দুর্নীতির যেসব কারণ রয়েছে তা উল্লেখ করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে একটি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করা হয়।
এই টিম বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা, আয়কর বিভাগ এবং কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি/রেকর্ডপত্র, সরেজমিনে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন, গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
প্রতিবেদনের সুপারিশ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানায় দুদক সূত্র।
চিঠি সংস্থাটি বলছে, কর ফাঁকি ও মওকুফ বন্ধ করতে পারলে কর-জিডিপি অনুপাত আরো ৫ শতাংশ বাড়ানো যেত, যা টাকার অংকে প্রায় এক লাখ ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এমনকি তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক অগ্রগতি হলেও এনবিআর প্রায় সব কার্যক্রম এখনও সনাতন পদ্ধতিতে করছে।
করদাতাদের সেবা ও আয়কর দেওয়ার উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এক্ষেত্রে এনবিআর বিভিন্ন সমস্যারও মুখোমুখি হচ্ছে।
অনিয়মের উৎস হিসেবে দুদক উল্লেখ করেছে, আয়কর বিভাগে করদাতার তথ্য, রিটার্নের তথ্য, কর আদায়ের তথ্য সংক্রান্ত সব রেজিস্ট্রার ম্যানুয়ালি সংরক্ষণ করা হয়। ফলে রেজিস্ট্রার টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়ম/ দুর্নীতি হওয়ার সুযোগ থাকছে। নথি নিষ্পত্তি সংক্রান্ত কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমাও নির্ধারিত নেই। ফলে কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায় না। নতুন করদাতা চিহ্নিতকরণে সংশ্লিষ্টদের অতিরিক্ত স্বেচ্ছামাফিক ক্ষমতাকে অনিয়মের অন্যতম উৎস মনে করেন অনেকে।
প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে দুদকের পরিচালক প্রণব ভট্টাচার্য্য বাংলানিউজকে বলেন, নতুন করদাতা চিহ্নিতকরণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তাদের মর্জির ওপর নির্ভরশীল। কর প্রণোদনা এবং কর মওকুফের ক্ষেত্রে আয়কর বিভাগের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত স্বেচ্ছামাফিক ক্ষমতা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কর পরিদর্শকদের প্রতিবেদনের সত্যতা যথাযথভাবে যাচাই না করা, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, আয়কর আইনজীবীরা এনবিআরে নিবন্ধিত না করা, নিরীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ (সিএ ফার্ম) ও করদাতা প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে প্রণীত অডিট প্রতিবেদন জালিয়াতি, সিএ ফার্মসমূহের জবাবদিহিতা না থাকার কারণেই এক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
এছাড়া বদলি, পদায়নে প্রশাসনিক দুর্নীতি এবং অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণে শিথিলতা দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে বলে মনে করছে দুদক টিম।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৮
আরএম/এমএ