দীর্ঘ আট মাস ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম তাণ্ডবে শহীদ হয়েছেন বহু মানুষ। শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত স্থান গণকবরগুলো নির্ধারণ করে সংরক্ষণের দাবি সবার।
১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রথম অতর্কিত বিমান হামলা চালায় পটুয়াখালী শহরের কালিকাপুর এলাকায়। এতে মাতবর বাড়ীর ১৬ জন নারী-পুরুষ ও শিশুসহ শহীদ হন ১৯ জন নিরীহ মানুষ। নির্বিচারে চলে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে চোরাগুপ্তা হামলা চালাতে থাকলে ১৮ নভেম্বর গলাচিপা উপজেলার পানপট্টিতে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা আহত ও নিহত হয়। পরিস্থিতি বুঝে সেখান থেকে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনারা।
এ বিজয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল আরও বেড়ে যায়। তারা বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শুরু করেন। ৭ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের কোণঠাসা করে ফেলেন। ওই রাতেই একটি লঞ্চে করে পটুয়াখালী থেকে পালিয়ে যায় হানাদার বাহিনী।
৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয় পটুয়াখালী। দলে দলে মুক্তিযোদ্ধারা জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে শহরে প্রবেশ করতে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে শহীদ আলাউদ্দিন শিশুপার্কে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।
দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে জেলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও তরুণ সংগঠনগুলো। এর মধ্যে সকালে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল নিবেদন করবে সমকাল সুহৃদ, সকাল ৯টায় শহীদ আলাউদ্দিন শিশু পার্কে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও মুক্ত র্যালী করবে পটুয়াখালী ইয়ুথ ফোরাম, বিকেলে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী গল্প শোনার আয়োজন করেছে পটুয়াখালীবাসী এবং সন্ধ্যায় আলোর মিছিল করবে পটুয়াখালী খেলা ঘর ও সুন্দরম।
এছাড়া, উপজেলা পর্যায়েও নানা আয়োজনে তরুণ প্রজন্মের কাছে দিবসটি গুরুত্ব তুলে ধরতে কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে যুদ্ধকালীন শহীদদের গণকবর ও স্মৃতি বিজরিত স্থানগুলো অরক্ষিত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা ও দেশেপ্রেমিক জনতা।
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর বলেন, বহু মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমাদের দেশ আজ স্বাধীন।
শহীদদের অরক্ষিত গণকবরগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।
জাতীয় সংসদ নারী আসন ৩২৯ এর কাজী কানিজ সুলতানা হেলেন বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময় আমাদের এ বাংলাদেশ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীন হয়েছে এ দেশ।
দেশের বিভিন্ন জেলা মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স ভবন অসমাপ্ত রয়েছে। সেগুলো সমাপ্ত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৯
এফএম