ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সিরামিক শিল্পে ৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১৯
সিরামিক শিল্পে ৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ

ঢাকা: উচ্চ সুদের কারণে যেখানে কিছু শিল্প তারল্য সংকটে ভুগছে, সেখানে ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর পাঁচটি করে নতুন সিরামিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে দেশে।
 

গ্রাহকের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা বিবেচনা করে আরও ১৫টি সিরামিক শিল্প কারখানা স্থাপন করা হবে। সেখানে সব মিলিয়ে বিনিয়োগ করা হবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।


 
এসব কারখানা আগামী চার বছরের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করলে তখন এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে।

দুই বছর আগে টাইলস ও সেনিটারি পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে আকিজ সিমেন্ট। খাবারের থালা-বাসন ও অন্যান্য পণ্য তৈরি করতে নতুন ইউনিট স্থাপনে ৫শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে তারা।
 
এবিষয়ে আকিজ সিরামিকের পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে মেশিনপত্র আমদানি করেছি। শিগগিরই তা বসানো শুরু হবে।
 
বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) তথ্যমতে, আকিজ সিরামিক তাদের নতুন ইউনিট থেকে ২৫০ লাখ পিস থালা-বাসন উৎপাদন করবে। এসব পণ্যের মান হবে দেশের সবচেয়ে বড় থালা-বাসন উৎপাদনকারী মুন্নু সিরামিকের পণ্যের মতোই।

থালা-বাসন ও অন্যান্য গৃহস্থালি পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে বিদেশেও। আকিজ সিমেন্টের তৈরি পণ্য দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা হবে।

সিরামিক একটি বড় ধরনের বিনিয়োগ ব্যবসা। একটি কারখানা করতে ১৫০ থেকে ২শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়।

বর্তমানে দেশে ৫৪টি সিরামিক কারখানা টাইলস, সেনিটারি ও থালা-বাসন জাতীয় পণ্য উৎপাদন করছে।
 
বিসিএমইএ’র তথ্যমতে, দেশে যে পরিমাণ সেনিটারি পণ্য উৎপাদন করা হয়, তারচেয়ে অনেক বেশি চাহিদা রয়েছে।
 
আগামী তিন মাসের মধ্যে বাজারে পাওয়া যাবে এক্সিলেন্ট টাইলস ইন্ডাস্ট্রিজ, হাইটেক টাইলস ইন্ডাস্ট্রিজ ও টপ ওয়ান সিরামিকের টাইলস পণ্য।

আগামী বছর উৎপাদন শুরু করবে আকিজ সিরামিকস, জেবি সিরামিকস, বাংলাদেশ সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ, নিউ জং ইয়ান সিরামিকস ও সারমানো সিরামিকস।

এছাড়া ২০২১ সালে উৎপাদন শুরু করার প্রস্তুতি নিয়ে আরও চারটি কারখানা স্থাপনের কাজ চলছে।
 
এবিষয়ে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সাধারণ সম্পাদক ও এফএআরআর সিরামিকের পরিচালক ইরফান উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় বাজারে সিরামিক পণ্যের চাহিদা দিনকে দিন বাড়ছে। এমনকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কারখানা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
 
‘একটি সিরামিক পণ্যের কারখানা স্থাপনে কম করে হলেও ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। তারপরেও দেশি–বিদেশি উদ্যোক্তারা এই খাতে বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন। ’

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সভাপতি ও চায়না বাংলা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিরাজুল ইসলাম মোল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, সিরামিক বর্তমানে দেশের একটি উদীয়মান খাত। এই খাতের পণ্য রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। দুই দশক আগেও আমাদের সিরামিক পণ্য আমদানি করতে হতো। এখন আমরা অন্তত নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে পারছি।
 
তিনি বলেন, পাইপলাইনে থাকা কারখানাগুলো উৎপাদন শুরু করলে ২০২৫ সাল নাগাদ আমরা এক বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে পারবো।
 
২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে সরকার সিরামিক পণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ প্রণোদনা সহায়তা দিচ্ছে। এই সহায়তা নগদ দিলে রপ্তানির পরিমাণ ৫-৭ বছরের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হবে।
 
সিরামিক শিল্পের তথ্যমতে, ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের সিরামিক পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার থাকায় রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়বে।
 
বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে স্বল্পমূল্যে শ্রমিক ও প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়ায় প্রতিযোগিতায় অনেক এগিয়ে রয়েছে। তবে সিরামিক খাতের সমস্যা হচ্ছে দক্ষ জনশক্তির অভাব।  

সংশ্লিষ্টরা জানান, দশ বছরে সিরামিক সেক্টরে ৮ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০০ শতাংশ। ৩০ শতাংশ ময়েশ্চারসহ সিরামিকের সব কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ খাতটির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে ৫৪টি প্রতিষ্ঠান সিরামিক পণ্য উৎপাদন করছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৯
এসই/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।