ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে কারখানার শ্রমিক টিপু সুলতান বলেন, বিকট শব্দ হয়ে মুহূর্তেই কারখানায় আগুন ধরে যায়। এসময় আমার পাশে থাকা আরো ৩/৪ শ্রমিককে নিয়ে কোনো রকম কারখানা থেকে বের হয়ে আসি।
শাহ আলম নামে কারখানার আরেক শ্রমিক জানান, তিনি কারখানার নিচতলায় কাজ করছিলেন। এসময় কারখানার তৃতীয় তলা থেকে কয়েকজন চিৎকার করে নিচে নেমে আসে। পরে তিনিও কারখানা থেকে বেরিয়ে দেখেন তৃতীয় তলায় আগুন জ্বলছে ও শ্রমিকরা চিৎকার করছে।
গাজীপুর সদর উপজেলায় কেশরিতা এলাকায় লাক্সারি ফ্যান কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ১০ জন শ্রমিক নিহত ও আরো কয়েকজন আহত হয়েছে। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে ৪ জনের নামপরিচয় জানা গেছে । তারা হলেন- রংপুরের মো. ফরিদুল ইসলাম (১৮), গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মারর্তা এলাকার রাশেদ (২৫), একই এলাকার মো. শামীম (২৬), স্থানীয় কেশরিতা এলাকার উত্তম (২৫)।
আহতদের মধ্যে স্থানীয় আনোয়ার হোসেন ও গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মারর্তা এলাকার মো. হাসান বলে জানা গেছে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ জানান, সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে কেশরিতা এলাকায় লাক্সারি ফ্যান কারখানার তিন তলায় বিকট শব্দে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় আগুন কারখানার ৩য় তলায় পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে সাড়ে সাতটার দিকে আগুন নেভায়। এসময় অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে নিহত হওয়া ১০ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আগুনে কয়েকজন আহত হয়েছে। একটি ২য় তলা বাড়ির ছাদের উপর টিনশেড করে আরো এক তলা বাড়িয়ে তৈরি করা হয় লাক্সারি ফ্যান কারখানা।
জানা গেছে, প্রথমে তৃতীয় তলায় দরজার কাছে আগুনের সূত্রপাত হলে শ্রমিকরা আত্মরক্ষায় ভেতরের দিকে চলে যায়। পরে মুহূর্তে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে শ্রমিকরা আটকা পড়েন। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর তৃতীয় তলা থেকে ১০ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। কয়েকজন আহত হলেও তাদের কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। সেখানে তখন ১৯ জন শ্রমিক কাজ করছিলো বলে জানা গেছে। প্রাথমিক আলামতে ১০ জনই ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে জানা গেছে।
শহীদ তাউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভাষন দাস জানান, এ হাসপাতালে ওই ঘটনায় দ্বগ্ধ স্থানীয় কেশরিতা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন (২০) ও জামুনা এলাকার আব্দুল মোতালেবের ছেলে মো. হাসান (১৯) ভর্তি রয়েছেন।
ঘটনার পর গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম ও জেলা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।
জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেকের মরদেহ দাফনের জন্য পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এ ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
**গাজীপুরে ফ্যান কারখানায় আগুন, নিহত ১০
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯।
আরএস/এসএইচ