ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মায়ের খোঁজে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন মোস্তাকিন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২
মায়ের খোঁজে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন মোস্তাকিন

যশোর: ২০ বছর পর মায়ের খোঁজে যশোরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন মুন্সিগঞ্জ জেলার মোস্তাকিন আহমেদ (২৫)। স্মৃতি হিসেবে সঙ্গে এনেছেন মায়ের সঙ্গে কাটানো শিশু বয়সের কয়েকটি ছবি।

মায়ের ওই ছবিগুলোই বড় করে পোস্টার বানিয়ে ‘মাকে খুঁজছি’ এমন শিরোনামে শহরের সড়কের মোড়ের বৈদ্যুতিক খুঁটিতে, বাড়ির প্রাচীরে সাঁটছেন তিনি। বিলিও করছেন সাধারণ মানুষের মধ্যে।

সেই পোস্টারে তিনি লিখেছেন এই মহিলা আমার মা, আমার মা আজ ২০ বছর যাবৎ হারিয়ে গেছে। আমার মায়ের বাড়ি যশোর জেলায়। আমার মাকে যদি কোন স্ব-হৃদয়বান ব্যক্তি চিনে থাকেন, তাহলে আমাকে ফোন দিয়ে আমার মাকে খুঁজে পেতে দয়া করে সাহায্য করুন।  

পোস্টারে দুটি মোবাইল নম্বরও দেওয়া হয়েছে। গত দুই দিন ধরে মায়ের অনুসন্ধান করেও কোনো সূত্র না পেয়ে হতাশ ছেলেটি। তারপরও মনের কোণে আশা, হয়তো ফিরে পাবেন হারানো মাকে।

মোস্তাকিনের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার কামারগাঁও গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত আবদুল খালেক। মুন্সিগঞ্জের দোহায় কুয়েত মাদ্রাসা থেকে অষ্টম শ্রেনি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। বেঁচে থাকার তাগিদে মাওয়া ফেরিঘাটে এখন বিক্রি করেন ডাব।  

রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে যশোর শহরের মুজিব সড়কে মুস্তাকিনকে দেখা যায় সড়কে বিভিন্ন দেয়াল ও বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ‘মাকে খুঁজছি’ শিরোনামে পোস্টার লাগাতে।  
যুবকের সঙ্গে কথা কথা বলে জানা গেল তার অতীত ইতিহাস।

প্রেসক্লাব যশোরের মিলনায়তনে তিনি বলেন, তার বাবা আবদুল খালেক প্রথম স্ত্রীকে রেখে ভারতে চলে যান প্রায় ২৫ বছর আগে। ভারতে গুজরাটে অবস্থানকালে তার মায়ের (যশোরের মেয়ে) সঙ্গে পরিচয় হয়। সেখানে আবদুল খালেক (বাবা) ও তার মা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সেখানেই মোস্তাকিনের জন্ম হয়। তার (মোস্তাকিন) বয়স যখন পাঁচ বছর তখন তার বাবা স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে দেশে ফিরে আসেন।

সংসারে প্রথম স্ত্রী থাকা ও ভারতে অবস্থানকারী মেয়েকে বিয়ে এবং সন্তান থাকায় পরিবারের লোকজন মেনে নিতে পারেননি। একপর্যায়ে প্রায় ২০ বছর আগে মোস্তাকিনকে তার সৎ মায়ের (বাবার প্রথম স্ত্রী) কাছে রেখে দ্বিতীয় স্ত্রী (মোস্তাকিনের মা) ডিভোর্স/ তাড়িয়ে দেন। মু মোস্তাকিন এতটুকুই জানেন তার নানাবাড়ি যশোরে। তবে, সঠিক ঠিকানা জানেন না। আর ছোটবেলায় এতিম শিশু হিসেবে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন। তার বাবাও সঠিক ঠিকানা কখনো বলেননি। কয়েক বছর আগে মোস্তাকিনের বাবা আবদুল খালেকও মারা গেছেন। অষ্টম শ্রেনি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন মোস্তাকিন। এখন ডাব বিক্রি করে জীবিকানির্বাহ করেন।

মোস্তাকিনের দাবি, তার নানাবাড়ি যশোরে শুধু এতটুকু তথ্য জানতেন। এক সপ্তাহ আগে বাড়ির পুরাতন বাক্সে অনেকগুলো পুরাতন ছবি পান। তার মধ্যে দুটি ছবিতে দেখতে পান এক নারীর কোলে ও পাশে একটি ছেলে। আর সেই ছবিটি ভারতের কোন এক জায়গার (ছবি পেছনের দোকান ও পারিপার্শ্বিক চিত্র)। মোস্তাকিনের এক চাচা মেহেদী হাসান তাকে নিশ্চিত করেছেন এই ছবি দুটি তার (মোস্তাকিনের) মায়ের। এরপর মোস্তাকিন মায়ের সন্ধানে নেমে পড়েছেন রাস্তায়। তিনি যশোরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন।

মোস্তাকিন বলেন, বাবা ও সৎ মায়ের সঙ্গে ২০ বছর আগে (যখন মায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়) তখন যশোরে এসেছিলেন। শহরের একটি সিনেমা হল সংলগ্ন কবরস্থানের পাশের একটি বাড়িতে তাকে রেখে তার মায়ে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল (বিচ্ছেদ বাবদ)। তখনও তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়েছিল না। এতটুকুই স্মৃতি মনে আছে তার।

এ বিষয়ে মোস্তাকিনের সৎ মা (বাবার প্রথম স্ত্রী) রেশমা খাতুন ফোনে বলেন, মোস্তাকিনের বাবা ও মায়ের বিয়ে হয় ভারতে। পরে তারা দেশে আসে। মোস্তাকিনের বয়স যখন ৪/৫ বছর তখন তার মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়। আমার দেবর ২০ হাজার টাকা দেয় মোস্তাকিনের মাকে। তিনি মোস্তাকিনকে আমার কাছে রেখে চলে যায়। ওর বাবা মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। তিনি কখনো মোস্তাকিনের নানাবাড়ির পরিচয় বলে যাননি। শুধু এইটুকু জানি তার বাড়ি যশোরে ছিল।

তিনি আরও বলেন, মোস্তাকিনের মা আবারও ভারতে চলে গেছে হয়তো। ওকে বলেছি তোর মা বেঁচে থাকলে ফিরে আসবে। যদি ফিরে আসে, তার থাকার জায়গা করে দেবো ও আমাদের কথা শোনে না।

এ বিষয়ে মোস্তাকিনের চাচা অ্যাডভোকেট মেহেদী হাসান বলেন, মোস্তাকিন তার মায়ের সন্ধান করছে। ওই ছবি দুটো তার মায়ের । তার বাবার সঙ্গে মায়ের ডিভোর্স হয়েছিল। আর মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২
ইউজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।