ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সাহাবুদ্দীন আহমদের বর্ণাঢ্য জীবন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২২
সাহাবুদ্দীন আহমদের বর্ণাঢ্য জীবন ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতির ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। শনিবার (১৯ মার্চ) সকালে রাজধানীর সিএমএইচে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়ার পেমই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম তালুকদার রিসাত আহমেদ, তিনি একজন সমাজসেবী ও এলাকায় জনহিতৈষী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সাহাবুদ্দীন নান্দাইলে তার বোনের বাড়িতে বড় হন।

সাহাবুদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আইনবিদ ও ষষ্ঠ প্রধান বিচারপতি। তিনি দুবার দোশের  রাষ্ট্রপতি দায়িত্বপালন করেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এরশাদের পদত্যগের পর তিনি প্রথমে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাকে রাষ্ট্রপতি করে। এ সময় ১৯৯৬ সালের ২৩ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ১৯৯০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৯৫ সালের ৩১ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন।

সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৪৫ সালে নান্দাইলের চন্ডীপাশা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪৮ সালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।  

১৯৫৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। প্রথমে পাকিস্তানের লাহোরের সিভিল সার্ভিস একাডেমি এবং পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রশাসনে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

সাহাবুদ্দীন আহমদের কর্মজীবনের সূচনা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। এরপর তিনি গোপালগঞ্জ ও নাটোরের মহকুমা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি সহকারী জেলা প্রশাসক হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর ১৯৬০ সালে তিনি প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগে বদলি হন। তিনি ঢাকা ও বরিশালের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে এবং কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  

১৯৬৭ সালে তাকে ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭২ সনের ২০ জানুয়ারি হাইকোর্টের বেঞ্চে তাকে বিচারক হিসেবে উন্নীত করা হয়। ১৯৭৩-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তাকে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়।  

১৯৮০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তাকে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ঢাকা ল রিপোর্ট, বাংলাদেশ লিগ্যাল ডিসিশন এবং বাংলাদেশ কেস রিপোর্টসে তার প্রচুরসংখ্যক রায় প্রকাশ করা হয়। চাকরিসম্পর্কিত, নির্বাচন নিয়ে কলহ, শ্রম ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক ইত্যাদি কেসে তার গৃহীত বিচারের রায় বহুল সমাদৃত হয়।  

বাংলাদেশের সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী সম্পর্কিত কেসে তার দেওয়া রায় যুগান্তকারী এবং বাংলাদেশের সংবিধানের পরিশোধনের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৩ সালের মধ্য-ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে বেশ কিছু লোক নিহত এবং অনেক লোক আহত হয়েছিল। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ সেই ঘটনার তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।

সাহাবুদ্দীন আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। তিনি তিন মেয়ে ও দুটি ছেলের জনক। তার জ্যেষ্ঠ মেয়ে ড. সিতারা পারভীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। দ্বিতীয় মেয়ে সামিনা পারভীন একজন স্থপতি। তার ছেলে শিবলী আহমদ একজন পরিবেশ প্রকৌশলী। আরেক পুত্র সোহেল আহমদ। সর্বকনিষ্ঠ কন্যা সামিয়া পারভীন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২২
এসকে/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।