ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জেলেদের চালে পরিমাণে কম, তালিকা তৈরিতে অনিয়ম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২২
জেলেদের চালে পরিমাণে কম, তালিকা তৈরিতে অনিয়ম

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জে ভিজিএফ’র আওতায় জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ৮০ কেজির জায়গায় ৭০-৭২ কেজি করে চাল পাচ্ছেন জেলেরা।

রোববার (২০ মার্চ) দুপুরে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে চাল বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নিলেও চাল বিতরণ অনিয়মের বিষয়ে কোনো তদারকি করেননি।

অন্যদিকে কয়েকজন জেলে অভিযোগ করেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের পছন্দের লোকদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এছাড়া কোনো জেলেদের কাছ থেকে টাকা না পেয়ে তাদের তালিকা থেকে বাদও দিয়েছেন।  

জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, জাটকা ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস মেঘনা নদীতে সকল প্রকার মাছ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এসময় মেঘনা নদীর লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাঁটনল অংশের ১০০ কিলোমিটার এলাকাকে জাটকা ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জেলেদের মাছ শিকার থেকে বিরত রাখতে তালিকাভুক্ত কার্ডধারী জেলেদের ভিজিএফ’র আওতায় ৮০ কেজি করে দুই ধাপে ১৬০ কেজি চাল দেওয়া হয়।  

সূত্র আরও জানায়, জেলাতে প্রায় ৪৯ হাজার জেলে মেঘনায় মাছ শিকারে নিয়োজিত। এদের মধ্যে তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার। ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ৩০ হাজার ৮৫৩ জন জেলেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।  

মার্চের শুরুতে স্ব-স্ব জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রথম ধাপের চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। রোববার (২০ মার্চ) দুপুরে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদে চাল বিতরণ অনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়। এ উপলক্ষে সদর উপজেলা মৎস্য অফিসের আয়োজনে জেলেদের নিয়ে সচেতনতা মূলক সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভা শেষে নির্দিষ্ট টোকেনধারী জেলেদের মধ্যে চাল বিতরণ শুরু হয়। এতে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। তিনি চাল বিতরণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তবে জেলে প্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণে চাল দেওয়া হচ্ছে কি না সে বিষয়টি তদারকি না করেই পরিষদ থেকে চলে যান তিনি। এছাড়া তদারকির দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসারকে উপস্থিত দেখা যায়নি।  

চাল পেয়ে অনেকে জেলে পরিমাণে কম দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। মৌখিক অভিযোগের বিষয়টি ভবানীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনির অবগত করা হলে তিনি সঠিক পরিমাণে চাল দেওয়ার কথা জানান। এছাড়া পরিষদের কয়েকজন সদস্যও কম দেওয়া হয়না বলে জোর দাবি করেন। পরে কয়েকজন জেলেকে দেওয়া চাল পরিমাপ করে দেখা যায়, ৮০ কেজির জায়গায় ৭০ কেজির বা ৭২ কেজি করে দেওয়া হয়েছে। এতে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সরেজমিনে চাল বিতরণের সময় দেখা যায়, সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে ৫০ কেজি ওজনের বস্তা সরবরাহ করা হলেও সে বস্তা খুলে অন্য বস্তায় চাল দেওয়া হচ্ছে।  

চাল নিতে আসা জেলেরা জানান, ৫০ কেজির বস্তা না খুলে পুরো বস্তা এবং বাকি ৩০ কেজি আলাদা বস্তায় সরবরাহ করা যেত। কিন্তু গুদাম থেকে দেওয়া ৫০ কেজির বস্তা খুলে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বাকি ৩০ কেজি নির্দিষ্ট পরিমাণ না করে অনুমানের ভিত্তিতে দেওয়া হচ্ছে। ফলে সব মিলিয়ে ৮০ কেজির স্থলে ৭০-৭২ কেজির মতো চাল পাচ্ছেন তারা।  

ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি বাংলানিউজকে বলেন, তালিকাভুক্ত জেলেদের চাল দেওয়ার পর যদি চাল থেকে যায় সেগুলো অন্য জেলেদের মধ্যে বিরতণ করা হবে। পরিষদের কোনো প্রতিনিধি চাল আত্মসাত করবে না।  

এ বিষয়ে জানতে বিকেলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।  

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, চাল কম পাওয়া জেলেরা লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, রোববার (২০ মার্চ) সকালে ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ২০ জন জেলে সদর উপজেলা পরিষদে এসে তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে তারা স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. লিটন ও স্থানীয় জেলে প্রতিনিধি খালেক মাঝির বিরুদ্ধে জেলে কার্ডের টোকেন বিক্রি করার অভিযোগ তোলেন।  

অভিযোগ দেওয়া কয়কেজন জেলে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা লিটন মেম্বারকে ভোট না দেওয়ায় সে আমাদের টোকেন দেয়নি। টাকার বিনিময়ে সে অন্য পেশার লোকদের টোকেন দিয়েছে। এ জন্য আমরা ভিজিএফ সুবিধা থেকে বাঞ্চিত হয়েছি।  

এ বিষয়ে জানতে পরিষদে গিয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য লিটনকে পাওয়া যায়নি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।  

তবে ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি দাবি করেছেন, তালিকা তৈরীতে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। জেলের পরিমাণের চেয়ে বরাদ্দ কম। তাই সবাইকে ভিজিএফ’র সুবিধায় আনা যায়নি। তিনি জানান, পুরো ইউনিয়নে প্রায় ৭০০ জেলে আছে। কিন্তু বরাদ্দ এসেছে ৩০০ জনের।  

একই কথা জানালেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, বরাদ্দের চেয়ে জেলে বেশি। তাই কিছু জেলে বাদ পড়েছে। তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।