ঢাকা, রবিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

রাজাপুর স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বাড়ি নিয়ে তোলপাড়, স্বেচ্ছায় বদলির চেষ্টা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২২
রাজাপুর স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বাড়ি নিয়ে তোলপাড়, স্বেচ্ছায় বদলির চেষ্টা

ঝালকাঠি: ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল খায়ের মাহমুদ রাসেলের বরিশালে নির্মিত বিলাসবহুল পাঁচ তলা বাড়ি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এছাড়াও সরকারি গাছ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছবিসহ ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

এরপরই শুরু হয় নানা গুঞ্জন। যদিও এ সম্পদ ও বাড়ি বৈধভাবেই করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।  

এসব অভিযোগের বিষয়ে সিভিল সার্জন গঠিত তদন্ত কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন ও সাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। এমন বিতর্ক থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর বদলীর আবেদন করেন। গত ২১ মার্চ তার আবেদনের বিষয়টি জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করে স্থানীয়রা।  

রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল খায়ের রাসেল বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে খুলনা-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়ক মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর সামনের আঞ্চলিক মহাসড়কে এ কর্মসূচি পালন করে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী ও স্থানীয়রা। এসময় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন মৃধা, ছাত্রলীগ নেতা মুদুল হাসান, সামসুল হক বাচ্চুসহ অনেকে।  

বক্তারা বলেন, স্থানীয় একটি ক্লিনিক ব্যবসায়ীর নানা অপপ্রচারে ক্ষুব্দ হয়ে নিজেই আবেদন করে বদলি হন ডাক্তার রাসেল। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় জনতা এ কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তা-কমর্চারীরাও যোগ দেন। এসময় তার বদলির আদেশ প্রত্যাহার না করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা। পরে রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোক্তার হোসেন ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।  

ইউএনও মোক্তার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, জনসাধারণের ভালোবাসা ও আবেগের স্থান থেকে ডা. রাসেলের বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছি।

তিনি আরো জানান, ঝালকাঠি সিভিল সার্জন মহোদয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানীয়দের দাবির বিষয়টি জানানো হবে। অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের ডহরশংকর গ্রামের বাসিন্দা ডা. রাসেল। প্রশ্ন উঠেছে তিনি রাজাপুরে চাকরি করে কীভাবে এই বিশাল সম্পদের মালিক হলেন? এই টাকার আয়ের উৎস কী? স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে এখান থেকে তিনি অবৈধভাবে অনেক অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাছ কেটে বিক্রি, রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, সরকারি বরাদ্দ গাড়ির অপব্যবহার, সরকারি বাসভবনের দুটি ফ্লাট ব্যবহার করলেও একটির ভাড়া কর্তন, কমপ্লেক্সের বাসভবনে রোগী দেখে ফি নেওয়া, তার গাড়ি চালকের জরুরি বিভাগে রোগীদের সেবা দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। প্রায়ই এসব অভিযোগের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হতেও দেখা যায়। সম্প্রতি তার বরিশালে পাঁচ তলা বাড়ির ছবি ভাইরাল হওয়ার পরেই এসব অভিযোগ ব্যাপকভাবে সামনে ওঠে আসে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে।

বরিশাল বাংলাবাজার এলাকায় পাঁচতলা বাড়ির ছবিসহ ফেসবুকে ভাইরাল পোস্টে উল্লেখ করা হয়, নির্মিত ভবনের জমিসহ ফ্লাটের মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। ডা. রাসেল ২০০৯ সাল থেকে রাজাপুরে কর্মরত। এরমধ্যে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে কয়েক মাসের জন্য বদলি হলেও আবার তিনি রাজাপুরেই চলে আসেন। ওই সময় তার পরিবার রাজাপুরেই ছিলেন। মেডিক্যাল অফিসার পদে রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। পরে এখানেই আরএমও পদে ফিরে আসেন। এরপর বরিশালে ২০২১ সালে বাড়ির কাজ শুরু করে একই বছর শেষ করা হয়।

রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবুল খায়ের মাহমুদ রাসেল বাংলানিউজকে বলেন, এটি আমার বাড়ি। আমি কি বাড়ি করতে পারি না? তবে তিনি তার বাড়ির ছবি ভাইরালের বিষয়ে রাজাপুরের সোহাগ ক্লিনিকের মালিক আহসান হাবিব সোহাগকে দোষারোপ করেন। তার ক্লিনিকে ডা. রাসেলকে চেম্বার কররা জন্য চেষ্টা করেও না পাওয়ায় এসব করা হয়েছে। সোহাগ ক্লিনিকে বিভিন্ন সময় নানা অনিয়মের কারণে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়াও ক্লিনিক মালিক তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ব্যাংক ও ব্র্যাক থেকে লোন এবং বন্ধুর কাছ থেকে ধার নেওয়া টাকায় এ বাড়ি করেছেন বলে জানান তিনি। এছাড়াও তার স্ত্রীর শেয়ার আছে এই সম্পদে। ইনকাম ট্যাক্স, ভ্যাটসহ সরকারের যাবতীয় নিয়ম মেনে বৈধ উপায়ে সম্পদ ও বাড়ির মালিক বলে দাবি করেন ডা. রাসেল।

তবে রাজাপুর সোহাগ ক্লিনিকের মালিক আহসান হাবিব সোহাগ বলেন, তিনি (ডা. রাসেল) তো কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নন। আমার এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অল্প ভিজিটে রোগী দেখেন। ডা. রাসেল ৫০০ টাকা ভিজিট নেন সরকারি বাস ভবনের চেম্বারে। তিনি আমার ক্লিনিকের প্যাথলজি রিপোর্ট দেখেন না। কেউ নিয়ে গেলেও তা ছুড়ে ফেলেন। তাকে আমার ক্লিনিকে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এখন তার বিলাসবহুল বাড়ির ছবি ভাইরাল হওয়ায় এসব বাজে বকছেন। তিনি নিজে বদলির জন্য আবেদন করে জনপ্রিয়তা দেখাতে ভাড়া করা লোক দিয়ে কথিত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। হাসপাতালের সেবা বিঘ্নিত করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি দায়িত্ব পালন ফাঁকি দিয়ে মানববন্ধনে অংশ নিতে বাধ্য করেছেন।

সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ডা. রাসেলের বাড়ি ও সম্পদের বিষয়ে ঝালকাঠি সিভিল সার্জন ডা. সিহাব উদ্দিন বলেন, ফেসবুকে আমিও দেখেছি। তিনি কীভাবে কী সম্পদ করেছেন এসব বিষয়ে তদন্ত করা আমার দায়িত্বে পরে না। বাড়ি বা সম্পদ যে কেউ করতেই পারে। একটা অভিযোগ এলে তার ভিত্তিতে সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. আবুয়াল হাসানকে প্রধান করে একটি তদন্ত টিম করা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে তদন্তও করেছেন। প্রতিবেদন পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।