ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাদক বিরোধী অবস্থানের কারণে খুন হন পুলিশের সোর্স নাইম 

তৈয়বুর রহমান সোহেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২২
মাদক বিরোধী অবস্থানের কারণে খুন হন পুলিশের সোর্স নাইম  মহিউদ্দিন সরকার নাইম

কুমিল্লা: এক সময়ে সাংবাদিকতা করতেন মহিউদ্দিন সরকার নাইম (২৮)। কিন্তু বিগত দিনগুলোতে কাজ করতেন পুলিশ, র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সোর্স হিসেবে।

বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক বিরোধী শক্তিশালী অবস্থানের কারণে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তাকে।  

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী রাজাপুর ইউনিয়নের শংকুচাইল এলাকা সংলগ্ন হায়দ্রাবাদনগরে বুধবার (১৩ এপ্রিল) রাতে হত্যা করা হয় তাকে। নাইম এক সময় আনন্দ টিভির ব্রাহ্মণপাড়া প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন৷ পরে কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত কুমিল্লার ডাক নামে একটি পত্রিকায় কাজ করতেন।  

নাইম জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের অলুয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোশারফ সরকারের ছেলে।  

গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণপাড়া হলেও তিনি পরিবারের সঙ্গে কুমিল্লার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বসবাস করতেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বুড়িচং এলাকায় হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হলেও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় মাদক বিরোধী কার্যক্রমে বেশ তৎপর ছিলেন নাইম। তিনি পুলিশ, র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের ইনফরমার হিসেবে কাজ করতেন। মাদকের চোরচালান ধরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যরকম গুণ ছিল তার। সে কারণে তাকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে চাকরি দেওয়ারও চেষ্টা ছিল বিভিন্ন সংস্থার। বুড়িচং এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী রাজুর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরপর তিনটি স্ট্যাটাস দেওয়া এবং সীমান্ত এলাকায় বেশ কিছু মাদকের চালান ধরিয়ে দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাহায্য করার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি মাদকের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রশাসন। তারা সীমান্তে কড়া নজরদারি সৃষ্টি করে। গেল কয়েক মাসে ওই উপজেলায় মাদকের বেশ কিছু বড় চালান ধরা পড়ে। ওইসব অভিযানে নাইম অংশ নিতেন। এছাড়া ওইসব অভিযানের অন্যতম সোর্স ছিলেন তিনি। নাইম এক সময় সক্রিয়ভাবে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মারা যাওয়ার বেশ কিছু দিন আগে থেকে সাংবাদিকতা না করলেও সাংবাদিকদের মাদক সংশ্লিষ্ট তথ্য দিয়ে সাহায্য করতেন তিনি। মাদক ব্যবসায়ী রাজুর সঙ্গে কয়েকদিন আগে বুড়িচং এলাকায় নাইমের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। মাদক ব্যবসায়ী রাজুর বাড়ি বাংলাদেশে হলেও ভারতে তার বহু আত্মীয়স্বজন রয়েছেন। সেই সঙ্গে তার দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে কি-না, সে বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। ভারতের চোরা কারবারিরাও সীমান্তে মাদক ও অস্ত্র চোরা চালানের চেষ্টা করছিলেন। সব মিলিয়ে নাইম দুই দেশের সীমান্ত সন্ত্রাসীদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে ওঠেন। আতঙ্কের কারণ হয়ে ওঠা ও উপজেলা প্রশাসনের মাদক বিরোধী কড়া অবস্থানের কারণে পাল্টা চ্যালেঞ্জ মনে করে নাইমকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, নাইমের মরদেহে পাঁচটি আঘাতের চিহ্ন আছে। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজু নামে এক মাদক ব্যবসায়ীর সংশ্লিষ্টতার কথা উঠে আসছে। তাকে ধরতে অভিযান চলছে।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল রানা জানান, মাদকের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণপাড়া এলাকায় অভিযান আরও জোরালো করা হবে।

কুমিল্লা জেলার পাঁচ উপজেলার পাশ দিয়ে ভারতের ১০৫ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। যার বেশিরভাগই ব্রাহ্মণপাড়া ও বুড়িচং উপজেলায় পড়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।