ঢাকা, শনিবার, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বেতনের টাকা আটকে দেওয়ায় স্ট্রোক করলেন প্রভাষক! 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২২
বেতনের টাকা আটকে দেওয়ায় স্ট্রোক করলেন প্রভাষক!  রনজিৎ কুমার মণ্ডল।

ফরিদপুর: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফরিদ আহমেদ তার অধীনস্থ এক প্রভাষককে কলেজ প্রদত্ত বেতনের অংশ থেকে বঞ্চিত করায় ওই প্রভাষক স্ট্রোক করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।  

বর্তমানে ওই প্রভাষক জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

 

নন এমপিও ওই প্রভাষকের নাম রনজিৎ কুমার মণ্ডল। তিনি বোয়ালমারী পৌরসভার কামারগ্রামে অবস্থিত কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের সমাজকর্ম বিষয়ের অনার্সের প্রভাষক।  

তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রভাষক রনজিৎ কুমার মণ্ডলের বর্তমান অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজটির একাধিক শিক্ষক জানান, গত ১৯ এপ্রিল কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সিরাজুল ইসলাম নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজটিতে যান। তখন কলেজে কর্মরত উপস্থিত শিক্ষকদের সঙ্গে সভাপতি মতবিনিময় করেন তিনি। একপর্যায়ে কলেজের অনার্স শাখার নন এমপিও শিক্ষক রনজিৎ কুমার মণ্ডল কলেজ প্রদত্ত তাদের আঠারো মাসের বেতন বকেয়া থাকার বিষয়টি সভাপতিকে অবহিত করেন। পরে সভাপতি কলেজ ত্যাগ করলে বেতন বকেয়ার বিষয়টি সভাপতিকে অবহিত করায় অধ্যক্ষ মো. ফরিদ আহমেদ ওই শিক্ষককে ডেকে মানসিক নিপীড়ন করেন। এর দুই দিন পর কলেজ সভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলাম অনার্স শাখার নন এমপিও শিক্ষকদের বেতন বাবদ নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ লাখ টাকার চেক দেন।  

গতকাল রোববার (২৪ এপ্রিল) সভাপতি প্রদত্ত ওই টাকা থেকে কলেজের নন এমপিও শিক্ষকদের তিন মাসের বেতন বাবদ ৫৪ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু বেতন বকেয়ার বিষয়টি সভাপতিকে অবহিত করার অপরাধে রনজিৎ কুমার মণ্ডলের বেতনের প্রাপ্য অংশ আটকে দেন অধ্যক্ষ। এ সময় রনজিৎ কুমার মণ্ডল তার বেতনের অংশ তাকে না দেওয়ার বিষয়ে অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ তাকে জানান, সভাপতিকে বকেয়া বেতনের বিষয়ে জানানোয় তার বেতন দেওয়া হবে না। অধ্যক্ষ এ সময় দুর্ব্যবহার করে ওই শিক্ষককে কক্ষ থেকে বের করে দেন। এ ঘটনায় শিক্ষক রনজিৎ কুমার মণ্ডল মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তিনি শিক্ষক মিলনায়তনে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন।  

শিক্ষক রনজিৎ কুমার মণ্ডলের স্ত্রী শিরগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হীরা সরকার বলেন, আমি শিক্ষকদের মাধ্যমে জেনেছি সবাইকে ওই দিন বেতন দেওয়া হলেও তাকে (রনজিৎ) দেওয়া হয়নি। অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনা না করে সভাপতির কাছে বেতনের বিষয়ে বলায় বেতন না দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জেনেছি। পরে অধ্যক্ষর কাছে এ বিষয়ে আমার স্বামী ক্ষমা চাইলেও তিনি ক্ষমা না করে তাকে কক্ষ থেকে বের করে দেন। এরপর কলেজে তার ডিপার্টমেন্টে এসে স্ট্রোক করেন।  

এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ মো. ফরিদ আহমেদ বলেন, ওই শিক্ষককে বেতন দেওয়া হবে না, তা বলিনি। তিনি এক বছর ছুটিতে থাকায় বেতন দেওয়া হয়নি। তার মানসিক চাপের কারণে রনজিৎ কুমার মণ্ডল স্ট্রোক করেছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাকে মানসিক চাপ দেওয়া হয়নি, তবে বেতনের বিষয়টি সভাপতিকে বলা তার উচিত হয়নি-এটা বলেছি।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।