ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৩ তলা থেকে ফেলে ছাত্রীকে নির্যাতন, তারপর...

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৯ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২২
৩ তলা থেকে ফেলে ছাত্রীকে নির্যাতন, তারপর... ভুক্তভোগী ছাত্রী হালিমা

রাজশাহী: রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকায় একটি মহিলা মাদরাসার তিন তলা থেকে ফেলে এক ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গুরুতর আহত ওই ছাত্রীকে চিকিৎসা না দিয়ে টানা তিন ঘণ্টা একটি ঘরে আটকে রাখা হয় বলেও জানা গেছে।

তাহফিজুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে মহানগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ঘরের দরজা ভেঙে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (৪ জুন) দুপুরে এসব ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্ট থানায় এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ হয়েছে কিনা জানা যায়নি।

ভুক্তভোগীর নাম হালিমা খাতুন (৯)। সে মহানগরীর শ্রীরামপুর এলাকার রিকশাচালক বাদশা আলীর মেয়ে।

অভিযোগ আছে, এক মাস আগেও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল হালিমা খাতুন। পরে সে নিচের বাড়ি চলে যায়। সম্প্রতি তার মা রুপা বেগম জোর করে মেয়েকে মাদরাসায় দিয়ে যান। জাকিয়া নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষক ছাত্রীদের নির্যাতন করতেন। নিজের বাসার সব কাজ ছাত্রীদের দিয়ে করাতেন। জানা গেছে, আগেও বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে ওই মাদরাসার আরও কিছু ছাত্রী পালিয়ে গিয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বেলা ১২টার দিকে হালিমা তৃতীয় তলার একটি কক্ষের জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে নিচে পড়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই তিনতলা থেকে কয়েকজন নারী তড়িঘড়ি করে নেমে এসে তাকে নিয়ে মেডিক্যালের দিকে যান। কিন্তু ভর্তি না করিয়ে শিক্ষক জাকিয়ার ঘরে নিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

স্থানীয়রা খবর দিলে মহানগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা খুলে দিতে বলে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে সদস্যরা ওই ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে এবং বারবার দরজা খুলে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু শিক্ষক জাকিয়া দরজা খোলেননি।

দুপুর ২টার দিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নুরুজ্জামান টুকু ঘটনাস্থলে আসেন। তার উপস্থিতিতে জাকিয়ার ঘরের দরজা ভেঙে গুরুতর আহত অবস্থায় জাকিয়াকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টুকু এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমি গিয়ে দরজা খুলতে বলি। কিন্তু ভেতর থেকে দরজা খুলে দেওয়া হয়নি। পরে পুলিশ দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে।

এত কিছুর পর তাহফিজুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষের দাবি, হালিমা জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে পড়ে গেছে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কেউ ইচ্ছা করে ধাক্কা না দিলে কোনোভাবেই হালিমার নিচে পড়ে যাওয়ার কথা নয়। সাধারণভাবে দেখলেই বোঝা যায়, তাকে ব্যাপক নির্যাতন করে জানালা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আহত হলেও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। বরং ঘরবন্দী করে রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে মহানগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, তারা মাদ্রাসার এক ছাত্রী তিনতলা থেকে লাফ দিয়ে আহত হয়েছে বলেই খবর পেয়েছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কাজলকে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পর দরজা ভেঙে তারা আহত ছাত্রীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

ওসি বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময় : ২০২৫ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২২
এসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।