ঢাকা, শনিবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাজেট: কেউ দেখছেন আশার আলো কেউ বলছেন উচ্চাভিলাষী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২২
বাজেট: কেউ দেখছেন আশার আলো কেউ বলছেন উচ্চাভিলাষী

রাজশাহী: ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত বাজেট নিয়ে রাজশাহীতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ এ বাজেটে আশার আলো দেখলেও কেউ এটিকে বলছেন উচ্চাভিলাষী।

আবার কেউ বলছেন প্রস্তাবিত বাজেট গরিব-বান্ধব নয়।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। করোনাভাইরাস সংকট কাটিয়ে ওঠার পর দেশের ৫১তম বাজেটের আকার যেমন বড়, তেমনি এ বাজেটে ঘাটতিও ধরা হয়েছে বড়। অনুদান বাদে এই বাজেটের ঘাটতি দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশের সমান। আর অনুদানসহ বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৪০ শতাংশের সমান।

রাজশাহীর স্থানীয় আওয়ামীলীগ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরাই মূলত এ বাজেটে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু অন্ধকার দেখছেন অন্যান্য বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা। তাদের ভাষ্য, বিদেশি ঋণ নির্ভর বাজেটের কারণে ঘাটতি পূরণ হবে না।

বাজেটের ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটকে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, স্বপ্ন না দেখতে জানলে মানুষ কখনো বড় হতে পারে না। আর বাজেটে বড় ধরনের পরিকল্পনা না থাকলে আশানুরূপ উন্নয়ন হবে না। এবারের বাজেটে একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। উন্নয়ন ও  জনকল্যাণকে সামনে রেখে এই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্য ঠিক থাকলে অর্থও মিলবে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিকু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ দেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখছেন এই বাজেটে তার প্রতিফল দেখা গেছে। মূলত তার এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এবারের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার এই বৃহৎ বাজেট সময়োপযোগী এবং সরকারের সাহসী পরিকল্পনার অংশ।

বাজেট ঘোষণার পর প্রতিবারই কিছু না কিছু বৃদ্ধি পায় বলে উল্লেখ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল ওয়াদুদ। তিনি বলেন, সরকার প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ করেছে। মুদ্রাস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু আমরা দেখি বাজেট ঘোষণার পর এই মানটা সরকার ধরে রাখতে পারে না। তবে এগুলো অর্জন করতে পারলে অবশ্যই ভালো। মানুষের জীবন যাত্রার ওপর চাপ পড়তো না। সরকার মুড়ি ও চিনির দাম কমানোর কথা বলেছে। কিন্তু নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য চাল, ডাল, লবণ তেলের কথা উল্লেখ করা নেই। এগুলোর বিষয়েও উল্লেখ থাকতে পারতো।

ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু বলেন, বাজেট উচ্চভিলাসী হলে শেষ পর্যন্ত তার প্রভাব সাধারণ মানুষের ভাগ্যের ওপরেই আছড়ে পড়ে। দেশে উন্নয়ন আছে। তবে জন-প্রত্যাশার উন্নয়ন ভিন্ন। করোনার পর যখন দেশে আকাল পড়েছে, দেশের অর্থনীতিতে সংকট রয়েছে। সে সময় এমন বাজেট জন-প্রত্যাশিত বাজেট হতে পারে না। বাজেটে জবাবদিহিতার কোনো জায়গা নাই। জনপ্রশাসনে বড় বরাদ্দ ও শিক্ষা-স্বাস্থ্যের নগণ্য বাজেট দেখেই বোঝা যায় বাজেট কেমন। আর কালো টাকা অর্জনকারীদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আওতায় না এনে সাদা করার সুযোগ দিয়ে লুটেরাদের প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এই বাজেট  জন-প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ।

একই মত দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন। তিনি বলেন, ঘোষিত বাজেট উচ্চভিলাষী এবং বিদেশি ঋণ নির্ভর। এই বাজেট কখনোই সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে না। দেশে যেই নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে এই বাজেট তার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে। নিত্য-পণের দাম আরও বাড়বে। গরিব মানুষ আরও গরিব হবে। আর ধনীরা আরও ধনী হবে। ঘোষিত বাজেটে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ঘাটতি ধরা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ এই ঘাটতি কিভাবে পূরণ হবে? তাই এই বাজেট কোনোভাবেই জন-প্রত্যাশিত বাজেট হতে পারে না।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২২
এসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।