সিরাজগঞ্জ: স্বপ্নের পদ্মাসেতু দক্ষিণাঞ্চলের পাশাপাশি উত্তরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর চাপ কিছুটা কমবে।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা ছাড়াও খুলনা বিভাগের ৫/৬টি জেলার যানবাহন চলাচল করছে।
এসব জেলার পণ্যবাহী পরিবহণ ও যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করে। বঙ্গবন্ধু সেতুতে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০-২২ হাজার যানবাহন চলাচল করে। আর ঈদযাত্রায় এই গাড়ীর পরিমাণ দিগুণেরও বেশি হয়। অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে এ রুটে প্রায়শই যানজট আর দুর্ভোগ লেগে থাকে। ঈদকে ঘিরে দুর্ভোগের যেন শেষ থাকে না।
বঙ্গবন্ধু সেতু টোলপ্লাজার ট্রাফিক কন্ট্রোলার আব্দুল হালিম বলেন, সেতুর ওপর দিয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা ছাড়াও খুলনা বিভাগের অনেক গাড়ী বর্তমানে চলাচল করছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসাদ্দেক হোসেন ও হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান জানান, বর্তমানে তিন বিভাগের ২২ জেলার যানবাহন এ রুটে চলছে। রাজশাহীর ও রংপুরের ১৬ জেলা ছাড়াও খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া, যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা জেলার গাড়ীও চলে। কখনো কখনো মাগুড়া জেলার গাড়ীও এ রুটেই ঢাকায় যায়। ধারণা করা যাচ্ছে পদ্মাসেতু হবার পর খুলনা বিভাগের গাড়ীগুলো আর এ রুট যাবে না। এতে বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর চাপ অনেকটা কমবে।
কুষ্টিয়া জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মাসুদ শেখ বলেন, ঢাকার প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, নারায়ানগঞ্জ, কাঁচপুর ও চট্টগ্রামসহ ওই অঞ্চলের গাড়ীগুলো এখন পদ্মা সেতু দিয়ে চলবে। তবে গাজীপুর ও ময়মনসিংহ রুটের গাড়ীগুলো বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়েই চলাচল করবে।
যশোর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. বাবলু বলেন, আমাদের গাড়ীগুলো সাধারণত দৌলদিয়া, মাওয়া ঘাট দিয়ে যাতায়াত করে। যখন এসব রুটে জ্যাম থাকে তখন শতকরা প্রায় ১০ থেকে ১৫ ভাগ গাড়ী চলে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে। পদ্মা সেতু হলে সেটাও বন্ধ হবে।
ঝিনাইদহ জেলা বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান খোকন জানান, ঝিনাইদহের যানবাহনগুলো ঢাকা ও চট্টগ্রামে তিনটি রুটে যাতায়াত করতো। সেগুলো হলো দৌলদিয়া ও মাওয়া ফেরিঘাট এবং বঙ্গবন্ধু সেতু। মাওয়া ও দৌলদিয়া ঘাট রুটে হয়ে রাস্তা কম হলেও যানজটের কারণে অনেক গাড়ী সিরাজগঞ্জ হয়ে যাতায়াত করতো। পদ্মাসেতু হওয়ার কারণে সব গাড়ীই এখন মাওয়া রুটে যাবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে জেলার ১২০টির মত যাত্রাবাহী বাস মাওয়া রুটে যাতায়াত করে। পদ্মাসেতু হওয়ার পর ২শ’ও বেশি বাস ওই রুটে যাবে।
রাজশাহী বিভাগীয় মালিক শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের সভাপতি আমিনুর রহমান জানান, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সব যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়েই চলাচল করে।
এছাড়াও খুলনা বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলার কিছু গাড়ী এ রুটে চলাচল করে। পদ্মাসেতু হলেও বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে আমাদের গাড়ীগুলো ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট বা চট্টগ্রামের যাবে। তবে খুলনা বিভাগের গাড়ীগুলোকে আর এ রুটে চলাচল করতে হবে না।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পী বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের গাড়ীগুলোই বেশি চলাচল করে। সেই সঙ্গে খুলনা বিভাগের কয়েকটি জেলার গাড়ীও কিছু এ রুটে চলে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বোঝা যাবে বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর চাপ কতটা কমবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২২
এনএইচআর