ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ফিজির সঙ্গে কৃষি বিষয়ক সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২২
ফিজির সঙ্গে কৃষি বিষয়ক সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত

ঢাকা: অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমানের ফিজি সফরের দ্বিতীয় দিনে কৃষি সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত হয়েছে। এছাড়া ফিজির কৃষিমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে হাইকমিশনার আলাদা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন।

সোমবার (২৫ জুলাই) ফিজির কৃষিমন্ত্রী ড. মাহেন্দ্র রেড্ডির সঙ্গে বৈঠককালে বাংলাদেশ ও ফিজির মধ্যকার বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে আরও নিবিড় করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

বৈঠকে হাইকমিশনার সুফিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ বিগত এক দশকে কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। নিজস্ব চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃষি পণ্য বিদেশে রপ্তানি করছে। লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধান আবিষ্কারে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কাছে থেকে জলবায়ু ভঙ্গুর দেশ হিসেবে ফিজি অভিজ্ঞতা নিতে পারে বলে বৈঠকে হাইকমিশনার উল্লেখ করেন।

ফিজিতে অনেক আবাদযোগ্য কৃষি জমি রয়েছে এবং ফিজির আবহাওয়া কৃষির জন্য অত্যন্ত উপযোগী উল্লেখ করে হাইকমিশনার বাংলাদেশ ও ফিজির যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয় উত্থাপন করেন।

বৈঠকে ফিজির কৃষিমন্ত্রী ড. মাহেন্দ্র রেড্ডি বলেন, ফিজি কৃষিতে সাফল্য নিয়ে আসার জন্য বাণিজ্যিক কৃষির ওপর জোর দিচ্ছে। তিনি কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য তার দেশের সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।  

ফিজিকে প্যাসিফিক অঞ্চলের হাব হিসেবে উল্লেখ করে মন্ত্রী মাহেন্দ্র রেড্ডি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত এবং নতুন নতুন গবেষণা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। তিনি কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করে বাংলাদেশের কাছে থেকে কৃষি গবেষেণার ক্ষেত্রে সহযোগিতা কামনা করেন।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতা জন্য একটি সমঝোতা স্মারকের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। যা পরবর্তীতে দুদেশের মধ্যে সরকারিভাবে সই হবে।

একই দিনে ফিজির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী ফাইয়াজ খোয়া ও বাংলাদেশের হাইকমিশনার সুফিউর রহমান দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর আলোচনা করেন।  

বৈঠকে ফাইয়াজ খোয়া বলেন, বাংলাদেশ ও ফিজি দীর্ঘ দিনের বন্ধুপ্রতিম দেশ।  

বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে ফাইয়াজ খোয়া আরও বলেন, বিনিয়োগ সহজীকরণের জন্য ফিজি সরকারও বহুবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।  

বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে ফাইয়াজ খোয়া বলেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা ফিজি সরকারের প্রদত্ত সুবিধা গ্রহণ করে বিনিয়োগ করতে পারে।  

বৈঠকে হাইকমিশনার সুফিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ নতুন নতুন পণ্য রপ্তানি করছে। তিনি তৈরি পোশাকের পাশাপাশি, কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য, ওষুধ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, আইটি ও আইটি এনাবেল্ড সার্ভিস রপ্তানিতে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরেন।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ওষুধ ইউরোপ, আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশের ওষুধ আমদানি করে ফিজি সুলভে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে দক্ষ পেশাজীবী এবং বিনিয়োগকারীরা ফিজির উন্নয়নে অবদান রাখছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষতা ও কর্মনিষ্ঠার ভূয়সী প্রশংসা করেন। মন্ত্রী বলেছেন, ফিজির উন্নয়নের জন্য দক্ষ কর্মী ও পেশাজীবী প্রয়োজন যেখানে বাংলাদেশি কর্মীরা কাজ করতে পারেন। পেশাজীবীদের ফিজিতে কাজ করার জন্য ফিজি সরকারের গৃহীত উদ্যোগ তিনি তুলে ধরেন।

হাইকমিশনার সুফিউর রহমান বলেন, ফিজি ও বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ করে পুরো প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের পণ্যের বাজার সৃষ্টি করতে পারে। বৈঠকে উভয় পক্ষ ফিজি থেকে বাংলাদেশে একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল পাঠানোর ব্যাপারে একমত হয়।

একই দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে ফিজির রাজধানী সুভার হোটেল হলিডে ইন এ বাংলাদেশ ফিজি বন্ধুত্বের ৫০ বছর উদযাপনের জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফিজিতে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, ফিজি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, ব্যবসা ও মিডিয়ার প্রতিনিধিরা ও বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যরা।

গত ২৪ জুলাই বাংলাদেশ ফিজি অ্যাসোসিয়েশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ফিজি সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইনিয়া সেরুইরাতু, বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এবং ফিজির কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহকারী মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।  

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে ফিজির বিভিন্ন দ্বীপ থেকে আগত বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী, প্রবাসী পেশাজীবী এবং ফিজির বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২২
টিআর/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।