ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

উপহারের ‘বালা’ দেখিয়ে চা শ্রমিকদের আনন্দে ভাসালেন প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২
উপহারের ‘বালা’ দেখিয়ে চা শ্রমিকদের আনন্দে ভাসালেন প্রধানমন্ত্রী ছবি: সংগৃহীত

সিলেট: ঘড়ির কাটায় বিকেল ৪টা। ভার্চ্যুয়ালি চা শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিয় করবেন প্রধানমন্ত্রী।

সেই অপেক্ষায় অধীর আগ্রহভরে পর্দায় চোখ হাজার হাজার চা শ্রমিকদের। নগরের লাক্কাতুড়া গফল ক্লাব মাঠে বাধা প্যান্ডেলের ওপরে সামিয়ানা মধ্যে তীল ধারণের ঠাঁই নেই। পর্দায় গণভবনের চিত্র। সবার নজর সেদিকে।
 
শনিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা বেজে ২০ মিনিট গণভবনে পর্দার সামনে মতবিনিময়ে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী। প্রারম্ভিক বক্তব্যে দু’হাত উঁচু করে তুলে ধরে দেখান হাতের বালা। যে বালা জোড়া সম্প্রতি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন চা শ্রমিকরা। উপহারের বালা দেখিয়ে চির দুঃখী মানুষগুলোকে আনন্দে ভাসিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
 
হাত উঁচিয়ে বালা জোড়া দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার চা শ্রমিকরা শ্রমে-ঘামে এক পয়সা, দুই পয়সা করে জমিয়ে এই বালা আমাকে উপহার দিয়েছেন, তাই এই বালা পরে আজকে মত বিনিময়ে এসেছি। এই উপহার আমার কাছে অমূল্য। বালাজোড়া পেয়ে আমি সম্মানিতবোধ করছি। তখন তুমুল করতালি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান উপস্থিত চা শ্রমিকরা।
 
দেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের তনয়া শেখ হাসিনা মতবিনিময় করবেন। এ কারণে খুব সম্মানিতবোধ করছিলেন চা শ্রমিকরাও, এমনটি জানালেন, চা শ্রমিক নেতা রাজু গোয়ালা। আর চা শ্রমিকদের দেওয়া উপহারের বালা পরেই তিনি তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বসেছিলেন।
 
মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী মনোযোগ সহকারে চা শ্রমিকদের কথা শুনেন। তাদের ভূমি অধিকারসহ সব পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন। এসময় শ্রমিকদের মুখে তাদের দুর্বিসহ জীবন-যাপনের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী অশ্রুসিক্ত হন।  
 
এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পাত্রখোলা চা বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তাকে স্বাগত জানান মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। এরপর হবিগঞ্জ চন্ডিছড়া চা বাগান থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন জেলা প্রশাসক ইশরাত জানান। এসময় শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলেন চা শ্রমিক শিমু রানী রায়। এরপর সিলেট থেকে যুক্ত হন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মজিবর রহমান। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, চা শ্রমিকরা তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য মুখিয়ে আছেন।
 
এছাড়া চট্টগ্রামের কর্ণফুলী চা বাগানের শ্রমিকরাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। সেখান থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে কথা বলেন বান্দরবনের জেলা প্রশাসক। এসময় প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিক ও তাদের সন্তানদের নাচের তালে নৃত্য দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন।
 
মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সিলেটসহ সারাদেশের চা শ্রমিকরা টানা ১৯ দিন আন্দোলন করেছিলেন। তাদের সেই আন্দোলন যখন আরও বেশি বেগবান হচ্ছিল, দেশে-বিদেশে তাদের পক্ষে জনমত গড়ে উঠছিল, ঠিক তখনই হস্তক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
 
একপর্যায়ে তিনি চা বাগান মালিকের সঙ্গে বৈঠক করে ৫০ টাকা মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। অবশ্য এর আগে বিভিন্ন মহল থেকে চা শ্রমিকদের কখনো ২০ টাকা, ২৫ টাকা মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়ে চা শ্রমিকদের আন্দোলন বন্ধের আহ্বান জানান। কিন্তু চা শ্রমিক ও তাদের প্রতিনিধি নেতৃবৃন্দ বারবার জানিয়ে দিচ্ছিলেন তারা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে সরাসরি ঘোষণা শুনতে চান। প্রধানমন্ত্রী যে কোনো মাধ্যমে ঘোষণা দিলে চা শ্রমিকরা তার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে কাজে ফেরার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছিলেন।
 
তাদের এমন চাওয়ার প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে গত ২৮ আগস্ট ৫০ টাকা মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা তা মেনে নিয়ে কাজে যোগ দেন। তখন শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কিছু উপহার পাঠানো হয়েছিল। সেই উপহারের মধ্যে একজোড়া বালাও ছিল। সেই বালা পরে প্রধানমন্ত্রী আজ (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বসেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২২
এনইউ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।