সিলেট: বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে সিলেট নগরী। নগরের প্রধান প্রধান সড়কের সরকারি-বেসরকারি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও আড়াল হয়ে গেছে নেতাকর্মীর ব্যানার ফেস্টুনে।
বিধি বহির্ভূতভাবে সাঁটানো এসব ব্যানার পোস্টার লাগাতে ভয়ে প্রতিবাদ করছেন না সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদেরও মাতামাতি লক্ষ্য করা যায়নি। প্রতিক্রিয়া জানতে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনের মোবাইলে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অথচ সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে বিধি লঙ্ঘন করে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার লাগিয়ে প্রচারণার অভিযোগ এনে ১০ প্রার্থীকে শোকজ করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।
সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদেরকে সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রচারণা চালানোর জন্য আইন মেনে নির্ধারিত হারে কর পরিশোধ করার জন্য এ নোটিশ দেওয়া হয়। ওই সসময় প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টার হুমায়ুন রশিদ চত্বর, পারাইরচক পীর হাবিবুর রহমান চত্বর, কদতলী বাসটার্মিনাল ও চন্ডিপুল এলাকায় সাঁটানো ছিল। বিষয়টি নগর কর্তৃপক্ষ আমলে নিয়ে কঠোর হলেও বিএনপির সমাবেশে এ ব্যাপারে তাদের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
নগরজুড়ে সড়কে সড়কে শোভা পাচ্ছে বিএনপির নেতকর্মীদের হাজার হাজার বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার। খোদ সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ছবি সম্বলিত পলিসাইন নগরীর বিলবোর্ডগুলোতে শোভা পাচ্ছে। ওইসব বিলবোর্ড নগর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপনী প্রচারণায় ভাড়া দিয়ে থাকে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের নিজস্ব স্থাপনাও বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টারে ঢেকে গেছে।
এছাড়া সমাবেশ সফলে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে নগর কর্তৃপক্ষ। বিএনপির সমাবেশস্থল মাটি বসাতে ব্যবহৃত হয়েছে সিটি করপোরেশনের রোলার। মাঠের ধুলোবালি মুক্তকরণে সিসিকের বিশুদ্ধ খাবার পানি গাড়ি দিয়ে এনে ছিটানো হয়েছে মাঠে। বৃহস্পতিবার রাতে নেতাকর্মীর ব্যবহারের জন্য আনা হয় সিসিকের ভ্রাম্যমাণ ভিআইপি টয়লেট।
সিসিকের পানি শাখার গাড়ি চালক ওমর আলী বলেন, সিসিক মেয়রের পক্ষ থেকে পানির গাড়ি ফ্রি দেওয়া হয়েছে। যাতে সমাবেশস্থলে (মাঠে) যাতে ধুলোবালি না উড়ে, মানুষ স্বাচ্ছন্দে চলাচল করতে পারে!
এসব বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের কনজার্ভেটিভ শাখার প্রধান হানিফুর রহমান বলেন, সিলেট-৩ আসনে উপ-নির্বাচন চলাকালে এমপি প্রার্থীদের আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেইনি, নোটিশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
তবে নগরীর অভ্যন্তরে বিলবোর্ড ব্যানার-পোস্টারে সয়লাব হয়ে গেলেও কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়া, বিএনপির সমাবেশস্থলে সিটি করপোরেশনের রোলার-মাঠের ধুলোবালি মুক্তকরণ, বিশুদ্ধ খাবার পানি গাড়ির ব্যবহার এবং নেতাকর্মীর জন্য সিসিকের ভ্রাম্যমাণ ভিআইপি টয়লেট ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ছুটিতে আছি। এসব কিছুই জানি না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের রিকাবিবাজার থেকে চৌহাট্টা পয়েন্ট, ভিআইপি সড়কটি ঢেকে গেছে নেতাকর্মীর বিলবোর্ড, ব্যানার পোস্টারে। বড় বড় বিল বোর্ডগুলোতে মেয়রের ছবি সম্বলিত বিশাল ব্যানার সাটানো হয়েছে। আলিয়া মাদরাসা সংলগ্ন শহিদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালও ঢাকা পড়েছে নেতাকর্মীর ব্যানার পোস্টারে।
এমনকি চৌহাট্টা ও পশ্চিম দরগাহ গেইটের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোও ঢেকে দেওয়া হয়েছে ব্যানার পোস্টারে। সেসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মধ্যে ক্ষোভ কাজ করলেও কেউ প্রতিবাদী হতে পারছেন না ভয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট-৩ আসনে নির্বাচন চলাকালে নোটিশপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই ছিলেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। মিউনিসিপ্যালিটি ও সিটি করপোরেশন ট্যাক্স রুল ১৯৮৬ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী সিসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন নাহার রুমা তাদের নামে নোটিশ ইস্যূ করেন। এদের মধ্যে কয়েকজন প্রার্থীকে ব্যানার, পোস্টার সাঁটানোর জন্য সিসিক আইনে জরিমানা প্রদানের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।
ওই সময় সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে যাদের শোকজ করা হয়েছিল তারা হলেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক ও ওই আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব মন্টু, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা স্যার এনাম উল ইসলাম, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক, কেন্দ্রীয় সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুল, স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মোস্তাকিম রাজা চৌধুরী ও মো. সেলিম মিয়া। তখন গণমাধ্যমকে নোটিশ ইস্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছিলেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নিজেই।
ওই সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, সিটি করপোরেশনের ভেতরে কেউ প্রচারণা চালাতে হলে করপোরেশনকে কর পরিশোধ করার বিধান রয়েছে। সিলেট-৩ আসনের অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী তাদের নির্বাচনী এলাকার বাইরে নগরীর হুমায়ূন রশিদ চত্বর, কদমতলী ও উপশহরসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার লাগিয়েছেন। এজন্য বিধি অনুযায়ী তাদেরকে রাজস্ব প্রদানের জন্য নোটিশ করা হয়।
অথচ বিএনপির সমাবেশ ঘিরে পক্ষকাল আগে থেকে বিলবোর্ড, ব্যানার পোস্টারে নগরী ছেয়ে গেলেও নির্বিকার নগর কর্তৃপক্ষ। নগরবাসীর অনেকে জানিয়েছেন, মেয়র বিএনপি নেতা হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য সিসিক’র এ আইন বাস্তবায়ন তো দুরের কথা নিজেই আইন লঙ্ঘন করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
এনইউ/জেএইচ