ঝালকাঠি: ঝালকাঠি-রাজাপুর উপজেলা শিক্ষক-কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের নামে চেক প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী রাজাপুর সরকারি কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আনোয়ার হোসেন এ অভিযোগ করেন।
অভিযোগে জানা গেছে, রাজাপুর উপজেলা শিক্ষক-কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড থেকে পারিবারিক অস্বচ্ছলতার জন্য ২০১০ সালের ২৯ জুন ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন আনোয়ার হোসেন। শর্তমতে প্রতিমাসে এক হাজার টাকা করে ৬০ কিস্তিতে ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা। সমিতির নিয়মানুযায়ী ২০১৫ সালের জুন মাসেই সম্পূর্ণ ঋণের টাকা পরিশোধ হয়। কিন্তু প্রতিমাসে দুই/তিন হাজার টাকা এবং কোনো কোনো মাসের বেতনের সম্পূর্ণ টাকাও তুলে নেন তারা। ঋণ নেওয়ার পর চার মাসে চারটি কিস্তি পরিশোধের পরে ব্রেন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এতে সবকিছু স্বাভাবিকভাবে স্মরণ রাখতে কিছুটা অক্ষম হয়ে পড়েন আনোয়ার হোসেন।
সমিতির ব্যবস্থাপক ও ঋণ আদায়কারী এ দুর্বলতার সুযোগে পাশ বইতে কোনো টাকা জমা না দেখিয়ে চেক বইয়ের পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর নিয়ে ব্যাংকের জমাকৃত টাকা তুলে তাদের ইচ্ছেমতো পরিশোধ করতো। মাঝে মধ্যে বাকি থাকা কিছু টাকাও গ্রাহককে দিতো। গত অক্টোবর মাসে বেতনের সম্পূর্ণ টাকা সমিতির ব্যবস্থাপক আত্মসাৎ করলে পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজন তা জানতে পারে। ১৩ নভেম্বর আনোয়ারের স্ত্রী নিলুফা বেগম সমিতিতে গিয়ে হিসাব চাইলে ব্যবস্থাপক হালিমা বেগম অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে অফিস থেকে বের করে দেন। পরে ১৪ নভেম্বর অফিসে গিয়ে জানতে চাইলে ব্যবস্থাপক ছুটিতে আছেন জানিয়ে অফিস সহায়ক কাম ঋণের কিস্তি আদায়কারী শ্যামল পরে সাক্ষাতের জন্য বলেন। পরের দিন ১৫ নভেম্বর জামাতা জাকির হোসেন গণমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে গেলে ব্যবস্থাপক অফিসে নেই বলে অফিস সহায়ক শ্যামল অস্পষ্ট একটি হিসাব দেন।
উল্লেখ্য, সমিতির কাছে চাকরির বেতন উত্তোলনের দুইটি চেক বইয়ের ২০টি পৃষ্ঠার ১০টি ব্লাঙ্ক চেকের পাতায় স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। বাকি ১০ পৃষ্ঠা এখনও ওই সমিতিতেই আছে। ঝঊ- ১০-৬৪১৯৯১১-৬৪১৯৯২০ এবং ৬৪১৯৯৩১-৬৪১৯৯৪০= মোট ২০টি চেক রাজাপুরের সোনালী ব্যাংক সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর-০৩২৯১০০৩০০২৫৪। ২০১০ সালের জুন মাস থেকে গত অক্টোবর-২২ পর্যন্ত মোট ১৩৬ মাসে ৩ লাখেরও বেশি টাকা নিয়ে যায় তারা। প্রতিমাসে এভাবে বেতনের টাকা নিয়ে
যাওয়ার কারণে পরিবারের ভরণ-পোষণ ও চিকিৎসার খরচ মেটানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইনের আওতায় এনে বিচার ও বেতনের চেক বই এবং সমুদয় টাকা
পরিশোধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান তিনি।
রাজাপুর উপজেলা ব্যবস্থাপক হালিমা বেগম জানান, ২০১০ সালে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেওয়ার সময় জামানাত স্বরূপ আনোয়ার হোসেনের নিকট থেকে চেক বইয়ের স্বাক্ষরকৃত ৪টি পৃষ্ঠা নেওয়া হয়। ১২ বছরে তিনি ১৪ হাজার ৭শ টাকা পরিশোধ করেছেন। ৩৫ হাজার ৩শ টাকা এখনও তার কাছে পাওনা আছে। ঋণের অনুকূলে লভ্যাংশ হিসেবে আরও তিন হাজার ৮১৭টাকা পাওনা আছে। তিনি আমাদের সমিতি থেকে মানবিক দৃষ্টিতে সবধরনের সুবিধা নিয়ে এখন মনগড়া ও কাল্পনিক অভিযোগ দিচ্ছেন।
রাজাপুর উপজেলা শিক্ষক-কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. ফরিদ উদ্দিন আকন বলেন, রাজাপুর উপজেলার স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ সরকারি-বেসরকারি ৬শ শিক্ষক আমাদের সঙ্গে জড়িত। তারা সবাই শিক্ষিত ব্যক্তি। সরকারের সমবায় নীতিমালা অনুযায়ী গ্রাহক বই অথবা রসিদের মাধ্যমে আমাদের লেনদেন হচ্ছে। ঋণ গ্রহণকারী আনোয়ার হোসেন অসুস্থতার কারণে গ্রাহক বই অথবা রসিদ না নিলেও আমাদের লেজার বইয়ে সবকিছু স্পষ্ট উল্লেখ আছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২২
আরএ