ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

এ বছর ডেঙ্গুতে নারীরা কেন বেশি মারা যাচ্ছেন?

ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৩
এ বছর ডেঙ্গুতে নারীরা কেন বেশি মারা যাচ্ছেন?

বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের ২২ বছরের গবেষণাপত্র অনুযায়ী আমরা দেখতে পাই, এ ভাইরাসে পুরুষেরা বেশি (২ দশমিক ৭ গুণ) আক্রান্ত হন। এ বছর (২০২৩ সালে) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের ৬৩ শতাংশ পুরুষ।

সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৫৫ জন। এই উপাত্ত ঢাকার মাত্র ৫৩টি হাসপাতাল এবং জেলা শহর থেকে প্রাপ্ত।  

বাংলাদেশে কোভিডেও নারীরা তুলনামূলক অনেক কম আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যুর সংখ্যাও কম।  কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো, এ বছর ডেঙ্গুতে নারীরা হাসপাতালে কম ভর্তি হলেও তাদের মৃত্যুর হার বেশি (৫৭ শতাংশ)।  

নারীদের মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার কারণ কী কী হতে পারে?
ডেঙ্গুতে শারীরিক অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়, যদি না জ্বরের শুরু থেকে পর্যাপ্ত পানি বা ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট ঠিকমতো করা হয়।  
বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের অসুখের সময় পানীয় ও খাবার খেতে অনীহা বেশি দেখা যায়। জোর করলে কেউ কেউ রেগেও যান! পরিবারের জন্য খাটতে গিয়ে অনেক কমবয়সী মাও নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।  
অন্যদিকে নারীদের মানসিক অবস্থা বিভিন্ন কারণে পরিবর্তন হতে পারে। এ কারণে নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার আগ্রহ নাও থাকতে পারে।

অর্থাৎ পর্যাপ্ত যত্ন তথা ট্রিটমেন্টের (লেট ট্রিটমেন্ট) অভাবে নারীদের মাঝে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রত্যেক পরিবারের ছেলেদের দায়িত্ব হলো বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া।  

২০১৯ সালের গবেষণা অনুযায়ী লক্ষ্য করেছি, জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পর ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে থাকে। অনেকে ভাবতে থাকেন জ্বর ভালো হয়ে গেছে। এই সময় অলসতার কারণে অনেকের অবস্থা খারাপ হতে পারে। তীব্রমাত্রার ডেঙ্গুতে বমি ভাব, ডায়রিয়া, পেটব্যথা দেখা দেয়। এসময় পর্যাপ্ত ফ্লুইড গ্রহণ সম্ভব হয় না। এ কারণে হাসপাতালে ভর্তি করে রোগীর ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট করতে হয়।  

যে কাজগুলোতে ভুল করা যাবে না
১. এ সময়ে জ্বর হলে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। জ্বরের শুরুতে (১-২ দিনের মধ্যে) ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে।

২. পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হলেও জ্বর ছেড়ে যাওয়ার ২৪-৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানীয় (স্যালাইন, স্যুপ, ডাবের পানি, মধু পানি ইত্যাদি) খেতে হবে।

৩. দেশের চিকিৎসকরা ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় অনেক ভালো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। তাই পেটব্যথা, বমি, ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে অলসতা করা যাবে না।

৪. পরিবারের মেয়ে সন্তান, মা, বোনেরা জ্বরে আক্রান্ত হলে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। তারা যেন কোনো প্রকারে ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টে শৈথিল্য প্রদর্শন না করেন।

৫. সর্বোপরি রোগের সময় আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৩
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।