ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

আন্দোলন ছাড়া আমাদের গতি নেই

ফারজানা খান গোধূলি, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৩ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১২
আন্দোলন ছাড়া আমাদের গতি নেই

গত দু’তিন দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাংবাদিক পেটানো বিরোধী স্ট্যাটাসের ছড়াছড়ি। আমার দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলো পড়ে মন খারাপ হয়নি, ভয় লাগেনি, রাগ হয়নি।

অস্বস্তি লেগেছে। তবে প্রথম আলো পড়ে অবাক হয়েছি। পত্রিকাটিতে চার সাংবাদিকের উপর পুলিশের নির্যাতনের ঘটনা প্রধান সংবাদ হিসেবে বিবেচিত হয়নি। এদিকে অন্য পত্রিকাগুলো এই সংবাদকে প্রধান সংবাদ বিবেচনা করেছে।

প্রথম আলোর মালিক সম্পাদক কি নিরাপরাধী এই চারজনের পুলিশের হামলায় আহত হওয়ার খবরের চেয়ে এভারেস্ট জয়ের খবরটাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, নাকি পত্রিকার কাটতির জন্য বেশি প্রয়োজনীয় মনে করলেন?

যা ইচ্ছা মনে করতেই পারেন। নিজের স্বার্থ পাগলেও বোঝে। তার নিজের পত্রিকা। কোন খবর বেশি খাবে পাবলিক, আমার বা অন্য পত্রিকার চেয়ে উনি অনেক বেশি জানেন। শুধু তাই না, সোমবার আনিসুল হকের লেখা পড়ে মনে হল- তিনি এক সঙ্গে তিন নৌকায় পা রাখলেন। আহত সাংবাদিকদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করলেন, পুলিশের কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন ও পত্রিকার মনোভাব তুলে ধরলেন।

প্রথম আলোকে আমার নিজের পত্রিকা বলে মনে হত। আজ মনে হল আমার বা সাংবাদিকদের জন্য না, এটা শুধুই একটা প্রতিষ্ঠান- যারা শুধু লাভের কথা ভাবে। সবাই থাকলো। কেবল প্রথম আলো বদলে গেল। বদলে যাও বদলে দাও। সার্থক স্লোগান।

দুই দিন যেতে না যেতে কোর্ট প্রাঙ্গণে পুলিশের হামলার শিকার আরও তিন সাংবাদিক। এ ঘটনার প্রেক্ষাপট তৈরি হয় বিচারের জন্য আসা এক নারীকে কেন্দ্র করে। স্বামীর অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে মামলা করতে মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আসেন এক নারী। তাকে মঙ্গলবার দুপুরে কোতোয়ালী থানার এসআই জামান ও এসআই জাহাঙ্গীর পুলিশ ক্লাবে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায় বলে ওই নারী অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে পুলিশের হেনস্থার শিকার হয়েছেন ‍দু’জন আইনজীবী ও তিনজন সাংবাদিক। সাংবাদিকদের উপর পুলিশের এই হঠাৎ আক্রমণ যেন দিন দিন বেড়ে চলেছে। পুলিশের সাংবাদিক পেটানো রোগে আক্রান্ত কিনা যাচাই করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতু্ন ও তার প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু সঠিক ওষুধের ব্যবস্থা করবেন। তাদের মত হাতুড়ে যদি চিকিৎসা করতে না পারেন তবে স্পেশালিষ্ট হিসাবে সরকার প্রধান রোগ চিকিৎসার আশু ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই এই রোগ মহামারি আকার ধারণ করবে। আর তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকার নিজেই।

আইনের সাহায্যকারী, অসহায় নারীকে সাহায্য করার বদলে দিন দুপুরে পুলিশ ক্লাবে নিয়ে শ্লীলতাহানি করা, এদের অসুস্থ্য একদল জানোয়ার ছাড়া আর কিছুই ভাবা যায় না। তাদের কি দায়িত্ব, কি নীতি, কি শিক্ষা সব ভুলে গিয়েছে এই পোশাক গায়ে দিয়ে।

বিভিন্ন সরকার বিভিন্ন সময় পুলিশের মনোভাব উন্নত করতে কাজ করেছে। তার একটি হাস্যকর পদক্ষেপ ছিলো পোশাকের রঙ বদলে দেওয়া। সব কিছু বদলে যাবে যদি আমাদের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বদলে যান। বদলে দেন তাদের মনোভাব, ক্ষমতায় যেয়ে দমন-পীড়ন, আখের গোছানোর তুলনায় দেশটাকে গোছানের দিকে মনোনিবেশ করেন।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়েছেন- দূর থেকে সংবাদ সংগ্রহ করতে। ভালো কথা। উন্নত দেশগুলোতে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে পুলিশ নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করেন ফিতে দিয়ে। এই বেষ্টনীর বাইরে সাংবাদিকরা অপেক্ষা করেন। পুলিশের এক জন মুখপাত্র দফায় দফায় ঘটনা বা দুর্ঘটনার ফলোআপ অবহিত করতে থাকেন। এই মুখপাত্রকে সব ধরনের প্রশ্ন কারা হয় এবং সে ঘটনার যথাসম্ভব সাংবাদিকদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানাতে থাকেন । কিন্তু টুকু সাহেব ভুলে গেছেন, পাবলিক প্লেসে কোন মিছিল মিটিঙে বা হঠাৎ কোন ঘটনায় পুলিশের আগে সাংবাদিক পৌছুলে কত দূর দাঁড়াতে হবে তা উল্লেখ করেননি বা পুলিশের নিরাপত্তা বলয় না থাকলে কতদূর দাঁড়াতে হবে তা বলেন নি।

যেহেতু আমাদের দেশের পুলিশ নিরাপত্তা বলয় টলয়ের ধার ধারেন না, তাই সাংবাদিকদের পরামর্শ না দিয়ে বরং অসুস্থ্য মনের পুলিশদের উনি যদি মানুষের আচরণ করার পরামর্শ দেন তাহলে কিন্তু অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। পুলিশ কে যদি ভালো করে জানান তারা জনগণের সেবক, জনগণের টাকায় তারা বেঁচে থাকে, সেই জনগণের উপর লাঠি ঘোরানো মানে অন্নদাতার উপর লাঠি ঘোরানো। আচরণ শোধরানোর ক্লাসে তাদের ভর্তি করান, যাতে অন্তত মানুষের ব্যবহার শেখে তারা। আপনারা না পারলে সাদা চামড়া ওয়ালাদের ডাকেন। আপনাদের তো আবার সাদা চামড়া মোহ আছে। তারা যা বলেন, আপনারা তাই জি হুজুর করে মানেন। পুলিশ কে মানুষের আচরণ শেখাতে দরকার সাদা চামড়ার মানুষ। যদিও আমাদের দেশে অনেক মানুষ আছেন যারা এই সাদা চামড়ার মানুষদের থেকে অনেক যোগ্য ও মানবিক। এমনকি পুলিশ যাদের গায়ে হাত তুলছে তারাও অনেক মানবিক।

পুলিশ অমানবিক, কারণ বিনা উস্কানিতে সাংবাদিকদের বেধড়ক পেটান। একজন অসহায় নারীকে দিন দুপুরে শ্লীলতাহানি করতে বাধে না। ভাবতে অবাক লাগে আমার প্রতিবেশিনী তার স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশকে অভিযোগ করা মাত্র পুলিশ তাকে সব ধরনের প্রটেকশন দিচ্ছে। রাতে দিনে খোঁজ নিচ্ছে তার স্বামী কোন রকম অসুবিধা করছে কি না। এক বছরের জন্য তার স্বামীকে বাড়িতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন কোর্ট।

এখানে একা একজন নারীকে রাতে দিনে পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, আর আমার দেশের পুলিশ দিনদুপুরে নিজেদের ক্লাবে নির্যাতনের প্রতিকার চাইতে এলে তাকে শ্লীলতাহানি করছে, এর থেকে বড় লজ্জার কি হতে পারে পুলিশের জন্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতু্ন ও তার প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর জন্য!!!।

সাংবাদিক কে কেন বার বার মারবেন আর সাংবাদিকরা কেন বার বার মার খাবেন, কেনই বা এই নিয়ে বার বার আন্দোলন হবে আর সেই আন্দোলন মাঝ পথে থেমে যাবে?

আমার দেখা এটা বিশাল আন্দোলন থেমে গেল যা হতে পারতো একটা সফল আন্দোলন। একটু পিছিয়ে যাই, ২০০৬ সালের ১৬ এপ্রিল। চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ চলাকালে বিনা কারণে খেলা শুরুর আগে গেটে পুলিশ সাংবাদিক শামসুল হক টেংকু কে মারতে থাকে, আমি ও আমার ভারতীয় সহকর্মী রাজ শেখর রাও ঠেকাতে পারিনি। এমনকি আমাকেও মারতে উদ্যত হয়েছিল পুলিশ। যদিও ধাক্কাধাক্কিতে প্রচণ্ড ব্যাথা লাগে আমার হাতে, আমার ক্যামেরা ৪০০ মিলি লেন্সসহ মাটিতে পড়ে যায়। টেঙ্কু ভাইকে মারার প্রতিবাদে সাংবাদিকরা লাঞ্চ বিরতিতে মাঠে প্রতিবাদ করতে চাইলে হঠাৎ সাংবাদিকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। তৎকালীন ডিসি (পোর্ট) আলী আকবরের নির্দেশে পুলিশ সার্জেন্ট আনোয়ার ও এনামুল হকসহ ১৪/১৫ জন পুলিশ সাংবাদিকদের নির্যাতন করেন। সার্জেন্ট আনোয়ারের রাইফেলের বাঁটের আঘাতে মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত পান ফটো সাংবাদিক অনুরূপ টিটু। পুলিশের নির্বিচার লাঠিপেটায় আরো আহত হন আরিফুর রহমান বাবু, রুহুল আমীন রানা, সাইদুর রহমান শামীম, অভিজিৎ, লিসা, জহিরসহ ২০ জন। সেই সময় আন্দোলন তুঙ্গে উঠে, সব পত্রিকা ক্রিকেটের নিউজ ও ছবি ছাপা বন্ধ রাখে। সাংবাদিকরা বয়কট করে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ, সে সময় আন্দোলনের হাল ধরেন আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা। বার বার সাক্ষী দিই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে। এর মাঝে একদিন ডাক আসে প্রেসক্লাব থেকে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আহত সাংবাদিকদের আলোচনা। আমি রুমে ঢোকার আগেই আমাদের নেতাদের একজন আমাকে বলে দিলেন- তোমার ক্যামেরা, সেলফোন ও ল্যাপটপ নষ্ট হওয়া ছাড়া তোমার চিকিৎসায় অনেক খরচ হয়েছে তা বলবে।
আমি উনাকে প্রশ্ন করেছিলাম- কেন একথা বলবো?

উনি বললেন, সরকার আহত সাংবাদিকদের ক্ষতিপূরণ দেবে।

ভেতরে যেয়ে বিশাল টেবিলের একপাশে বসলাম। আমার আগেই সব আহত সাংবাদিক এসে গেছেন, ওইদিন যারা আহত হননি তারাও আছেন। সবাই ঘটনা কি হয়েছিল তা না বলে তাদের কত কি ক্ষতি হয়েছে তা তুলে ধরছেন। আমার পালা এলে স্বরাষ্ট্র সচিব জিজ্ঞেস করলেন- আপনার চিকিৎসাতে কত খরচ হয়েছে আর কি কি নষ্ট হয়েছে বলেন আমি লিখেনি।

আমি বলেছিলাম- টাকা দিয়ে কি আমাদের উপর পুলিশের মারটাকে জায়েজ করে নিতে চান। এরপর পুলিশ সাংবাদিকদের মারবে, আর আপনারা টাকা দেবেন পিটানি হালাল করার জন্য।

ধন্যবাদ আপনাকে, আমার প্রতিষ্ঠান আমাকে ভালো বেতন দেয় এবং আমার চিকিৎসা খরচও তারা দেয়। আমার নষ্ট জিনিষও আমার প্রতিষ্ঠান রিপ্লেস করে দেবে। আমি কোন টাকা পয়সা চাই না, কিন্তু এই অপমানের সঠিক বিচার চাই।

এ কথা বলে আমি ওই দিন ফিরে গিয়েছিলাম অফিসে, পরে শুনি একই কথা আরিফুর রহমান বাবু ভাই বলেছিলেন। আমরা দু’জন ছাড়া আর কেউ বিচার চাইনি, বাকিরা টাকা নিয়ে মারের ব্যথা ভুলে গেলেন। ডিসি আকবর কে নিয়ে লেখাও বন্ধ হয়ে গেল। আন্দোলনও থেমে গেল। কেউ ৬৭ হাজার, কেউ দুইটা সেল ফোন, কেউ চিকিৎসা খরচ ৫ হাজার টাকা থেকে ৪৫ হাজার টাকা নেন।

আমাদের সহকর্মীরা যদি ওই দিন টাকা না নিয়ে মারের ব্যাথাটা মনে রাখতো, আন্দোলন চালাত। তাহলে হয়ত বারে বারে এভাবে পথে ঘাটে আমাদের সাংবাদিকদের মার খেতে হতো না। সাগর-রুনির হত্যার বিচার আদৌও হয় কিনা সন্দেহ। কারণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চায়ের মিষ্টিতে ওদের হত্যার বেদনা-তিক্ততা মুছে দিয়েছে নেতাদের অন্তর থেকে।

গত তিন দিনে ৭ সাংবাদিকের উপর এই নির্যাতনের বিচারে সবাই ঐক্য না রাখলে আবার আমরা পথে পথে মার খাব পুলিশের হাতে। পুলিশ আমাদের আসতে যেতে পেটাবে। বলবে তোদের পাশে কেউ নেই। আমাদের সব আছে- নেতা আছে, মন্ত্রী আছে, সরকার আছে।

পুলিশ চাইলেই যখন তখন পথেঘাটে সাংবাদিক পেটাতে পারে। কিন্তু আইন বলে- পুলিশ তা পারে না।

সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আইনের আশ্রয় লাভ এবং বিশেষত আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোনো ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে। ’

৩২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হইতে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না। ’

তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো? যা দাঁড়ালো তা তো আরো ভয়ংকর। আইনের লোকই আইন মানে না। মানে পুলিশ সংবিধান মানে না। পুলিশ কেন সংবিধান মানে না? কারণ, আমাদের রাজনীতিতে পুলিশ ব্যবহার হয় হাতিয়ার হিসেবে। যারা যখন ক্ষমতায় থাকে তারাই পুলিশকে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।

রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত পুলিশ ভুলে গেছে আইন ও আদর্শ। দিনের পর দিন পুলিশ তাদের ব্যবহার খারাপ করে চলেছে। এতে ওদের পূর্বসূরিদের কারো কারো ভালো কাজের অবদান ধুলায় মিশিয়ে দিচ্ছে। আগামীতে কেউ আপনজনকে পুলিশ পেশায় দেখতে চাইবে বলে মনে হয় না।

আমার এক সাংবাদিক বন্ধু সবসময় বলতো- আর যাই করিস, পুলিশ কে কখনো কাছের বন্ধু বানাবি না। ওরা যে কোন সময় বিশ্বাসঘাতকতা করে। ওরা প্রচণ্ড স্বার্থপর, নিজের ছাড়া কারো কিছু বোঝে না। সে বাবা ভাই হোক বা বন্ধু হোক এবং বন্ধু সেজে শ্ত্রুতা করতেও এদের বাধে না। তারপরও আমি বন্ধুতা করতে চাই। চাই তারা সাংবাদিকদের সহযোগিতা করুক। সাংবাদিকরাও পুলিশ কে সহযোগিতা করুক।

সেই সঙ্গে সাংবাদিকের আপন কর্মস্থান হোক সহযোগী। সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকরা এক থাকুক। নিরাপত্তাসহ সব ধরনের অধিকার সাংবাদিকদের প্রাপ্য হোক। মালিক সম্পাদকরা সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মী হিসেবে না দেখে পারিবারিক সদস্যের মত করে দেখুন, তাদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। যাতে বাংলাদেশে ১/১১ পর যে খারাপ সময় এসেছিল তা শুধু সাংবাদিকদের উপর নয় সাংবাদিকতার উপরে আঘাত এসেছিল। দুটো বছরে বদলে গিয়েছিলো সব কিছু, সে সময় যেন আর ফিরতে না পরে।

আমাদের দেশের মিডিয়ার মালিক সম্পাদকরা তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা খর্ব হলে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে বলে চিৎকার করেন। কিন্তু ১/১১ পর যখন সাংবাদিকতার উপর আঘাত এসেছিল তখন কারো গলা পাওয়া যায়নি। সবাই নিজ নিজ অবস্থান পরিষ্কারে ব্যস্ত ছিলেন।

এখন মালিক সম্পাদককেও এগিয়ে আসতে হবে সাংবাদিকদের সঙ্গে সঙ্গে। যেন সাংবাদিকতার উপরে আঘাত না আসে- এতো সোচ্চার হতে হবে। কেন না দুই দিন পর পর সাংবাদিক পেটানোর আলামত ভালো নয়।

সাংবাদিকদের প্রতি সব ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, ব্যক্তিগতভাবে যার যার রাজনৈতিক আদর্শ আপন মনে রেখে, দলমত নির্বিশেষে এক হয়ে আন্দোলন করতে হবে। না হলে কাল আমাদের যে কেউ পুলিশি হামলা, মামলা বা খুনের শিকার হতে পারি। আমাদের আন্দোলন ছাড়া আর উপায় নাই।

সাগর-রুনি হত্যাসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার, সাত সাংবাদিক নির্যাতনসহ সব সাংবাদিকের প্রতি সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠুক যা আগামীতে সাংবাদিকদের কাজ করার পথ সুগম করবে।

ফারজানা খান গোধূলি, ওয়াশিংটন প্রবাসী সাংবাদিক।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৩ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১২
সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।