ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আজ আকাশে একটিই সূর্য

তামীম রায়হান, কাতার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৬ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১২
আজ আকাশে একটিই সূর্য

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে কাতারের দোহার দূরত্ব প্রায় চার হাজার কিলোমিটার। বছর দুয়েক আগে প্রথম যখন দোহায় গেলাম, নিজেকে প্রায়ই নিঃসঙ্গ মনে হতো।

আশেপাশে কেউ নেই, দেশের খবর জানারও তেমন কোনো সুযোগ নেই। কীভাবে যে সে দিনগুলো পার করেছি, তা ভোলার মতো নয়, বলারও নয়।

নিউজ পড়তে গিয়েই বাংলানিউজের সঙ্গে পরিচয় হয়। দেশ ও পৃথিবীর যে কোনো বিষয়ে এর দ্রুত নিউজ আপডেট/আপলোড আমাকে আকৃষ্ট করলো। আমিও অবাক হলাম, প্রযুক্তিময় বাংলানিউজ কি সত্যিই বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হচ্ছে!

তারপর থেকেই বাংলানিউজ আমার হোমপেজ। যে কোনো ব্রাউজার থেকে অনলাইন হলেই বাংলানিউজে চোখ বুলাই। ঢাকার সামান্য বৃষ্টিপাত থেকে নিয়ে দেশের সুদূর কোনো প্রান্তের যে কোন দুর্ঘটনা- এত দ্রুত আপডেট সবার কপালে জুটেনা।

বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখ থেকে নিয়ে রাজনৈতিক হরতাল আর দাঙ্গা মারামারিতে বাংলানিউজের কল্যাণে মনে হয় আমিও যেন খোদ উত্তপ্ত রণাঙ্গনে কিংবা উৎসবের রমনা বটমূলে। যারা বাংলাদেশে বসে বাংলানিউজ ভিজিট করেন, তাদের সামান্য কয়েক শব্দে বলে বোঝানো যাবে না, ঐ এত দূরের দেশ থেকে এসব লাইভ আপডেট দেখা ও পড়ার কী অবর্ণনীয় অনুভূতি! কীভাবে আমাদের তা শিহরিত করে!

এভাবেই এক সময় সাহস করে লিখে একটি লেখা পাঠিয়ে দিলাম বাংলানিউজ বরাবর। দিনটি ছিল ৯ জানুয়ারি ২০১২। এত বড় বাংলানিউজে আমার মতো ছোট মানুষের লেখা কি ছাপাবে, এমন সংশয়ে ছিলাম। আমার সব সংশয়কে উড়িয়ে দিয়ে বাংলানিউজ লেখাটি প্রকাশ করলো খুব অল্প সময়ের মধ্যেই। জীবনের যে কয়েকটি মুহূর্ত অন্যকে শুনিয়ে আনন্দ পাই, তাতে যোগ হলো আরেকটি। হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন আমাকে লিংক পাঠালেন ইমেইলে। আমার ভেতর কে যেন বলে গেল, নতুনদের কাছে টেনে নিতে পারার অসীম উদারতা না থাকলে এমন বড় হওয়া যায় না। এর প্রথম প্রমাণ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম।

আমি মূলত ইসলাম পাতায় লিখেছি। বলতে দ্বিধা নেই, এডিটর-ইন-চিফ আলমগীর হোসেনের একটি ফোনকল আমার লেখার গতিকে আমূল বদলে দিয়েছে। আমার এ বর্তমান তারুণ্যের কোনো সফলতা যদি থেকে থাকে, তবে তা বাংলানিউজে লেখার সুযোগ, আর এ সাফল্যের সবটুকু কৃতিত্ব এডিটর-ইন-চিফ মহোদয়ের। এমন ছায়া না পেলে হয়তো এতগুলো লেখা আমার লেখা হয়ে উঠতো না।

আউটপুট এডিটর আহসান কবীর আমাকে স্নেহ করেন। এ স্নেহ আমার জন্য সৌভাগ্য ও শেখার নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। আমি যে অবস্থান থেকে লিখছি, আমার আশেপাশের কেউ অমন করে লিখতে পারছে না, আমি পারছি। এটুকু আনন্দ ও অনুভূতির শেকড়ে যাদের অবদান অনস্বীকার্য, জনাব আহসান কবীর এদের মধ্যে সর্বশীর্ষ।

নিউজরুম এডিটর ও ইসলাম পাতার সম্পাদক শিমুল সুলতানার সযত্ন সম্পাদনার ভরসায় আমি আজ নির্ভয়ে লিখতে পারছি। বিশ্বময় যত পাঠক ইসলাম সম্পর্কে যেটুকুই জানতে পারছে, এর সমগ্র পার্থিব ও অপার্থিব কৃতজ্ঞতা এবং পূণ্যের প্রথম অংশীদার তিনিও।

কোনো ধরনের পূর্ব পরিচয় কিংবা কোন মাধ্যম ছাড়াই নিছক কাজের কারণে এত বড় বাংলানিউজের গর্বিত কর্মী হওয়া যায়, আমার বন্ধুদের কাছে আমার চেয়ে বড় প্রমাণ আর কেউ নেই। এখানে নেই কোনো সংকীর্ণতা কিংবা বাড়াবাড়ি, নেই কোনো স্বার্থের কারণে পিছুটান, বরং কেবলই যোগ্যতা আর উৎকর্ষের জয়ধ্বনি। নবীনদের জন্য আছে অনুপ্রেরণা ও উদার আশ্রয়, আজকের বাংলাদেশ এবং গোটা পৃথিবীতে এমনটি মোটেও সহজসাধ্য নয়।

প্রার্থনা করি, বাংলানিউজ বেঁচে থাকুক যুগ যুগান্তরে। সত্যান্বেষী পাঠকের চাহিদা মেটানোর মতো মুক্তমনা ও নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যমের আকাশে আজ একটিই সূর্য--বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। আর বাকিগুলো হয়তো চাঁদ, এ সূর্যের আলো ধার নিয়েই তো তারা আলো দিচ্ছে তাদের পাঠককে। এ সূর্যের আলোয় পালিয়ে যাক সব হলুদ সাংবাদিকতা। কোনো চাঁদ নয়, আমি আছি স্বয়ং সূর্যের আশেপাশে, এটুকু আনন্দ আর কজনের ভাগ্যে থাকে?

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১২
সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।