ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

বিমানে হয়রানি ও আমার অভিজ্ঞতা

এম. আমজাদ চৌধুরী রুনু, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১২
বিমানে হয়রানি ও আমার অভিজ্ঞতা

কুয়ালালামপুর:গত ৮ মে (রোববার) ভোর ২টা ১৫ মিনিটে আমার ফ্লাইট ছিল কুয়ালালামপুর টু ঢাকা বিজি৮৭। দেশে যাব, তাই মনে আনন্দ একটু বেশিই।

সেই আনন্দ মনে নিয়ে বন্ধু মো. রাজ্জাককে সঙ্গে নিয়ে কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম। সঙ্গে আরেক বন্ধু ওসমানও যাচ্ছে দেশে।

সবাই একই গাড়িতেই এয়ারপোর্টে কফি খেলাম। সময় একটু রয়ে গেছে, বাড়তি সময়টুকু কফি শপেই কাটালাম। রাত ১২টার পর আমরা বুকিং কাউন্টারে গেলাম লাগেজ ও বোর্ডিং পাস নিতে। এজন্য লাইনে দাঁড়ালাম। বন্ধু ওসমান লাগেজ বুকিং দিয়ে বোর্ডিং পাস নিয়ে নিল। আমি অপক্ষো করতে লাগলাম।

বলা বাহুল্য, আমি মালয়েশিয়ার অভ্যন্তীরণ একটা এয়ারপোর্টে ফ্রন্ট ডেস্কে চাকরি করি। আমার বস মালয়েশিয়াতে একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। মালয়েশিয়া সরকার তাকে ‘তানশ্রী’ উপাধি দিয়েছে। কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিতে আমাকে এয়ার টিকেট দেওয়ার কোনো উল্লেখ ছিল না। তবু আমার কাজে বস খুব সন্তুষ্ট হওয়ায় আমাকে ডেকে বললেন, “আমজাদ চৌধুরী, তোমার বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার এয়ার টিকেট আমি দেব। ” বসের এ কথা শুনে মনে দারুণ আনন্দ লাগল। বস তার ব্যক্তিগত সহকারীকে ডেকে বলে দিলেন, “আমজাদ চৌধুরীকে আপ-ডাউন এয়ার টিকেট দিয়ে দাও। ” পিএ আমার কাছ থেকে যাওয়ার তারিখ ও পাসপোর্ট নম্বর নিলেন। এরপর তিনি অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আমার টিকেট কিনে দিলেন।

সেই টিকেটের একটা কপি আমি কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট কাউন্টারে জমা দিলাম। বোর্ডিং পাসের জন্য আমার পাসপোর্ট নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ আমাকে বলা হলো, “আপনাকে যিনি টিকেট দিয়েছেন, তার ক্রেডিট কার্ড নিয়ে আসতে হবে। ” তখন সময় রাত ১২টা পেরিয়ে গেছে। এত রাতে আমার বসকে ফোন দেওয়া সম্ভব না। আমার বস একজন সম্মানিত ও বয়স্ক মানুষ। তাই তার ব্যক্তিগত সহকারীকে ফোন করে আমার টিকেট সংক্রান্ত সমস্যার কথা বললাম। শনি ও রোববার মালয়েশিয়াতে সাপ্তাহিক ছুটির দিন। আমার ফ্লাইট ছিল রোববার রাতে। পিএ ম্যাডাম বললেন, তিনি তার গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন। সেখান থেকে ক্রেডিট কার্ড নিয়ে এ সমযের মধ্যে এয়ারপোর্টে আসা কিছুতেই সম্ভব নয়। আমি নিজেও বিষয়টি জানি। তাই পিএ ম্যাডামকে আর কিছু বললাম না। কিন্ত তিনি আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বললেন, “আমজাদ তুমি বাসায় ফিরে যাও। আগামীকাল আমি টিকেট দিয়ে তোমাকে এয়ারপোর্টে দিয়ে আসব। ”

৫৫ কেজি লাগেজ নিয়ে আবার ফিরে আসাটা খুবই কষ্টের। আমার সঙ্গে আরও ছিল এলসিডি টিভি। ততক্ষণে দেশে ফোন করে পরিবারকে বললাম যে, মনে হয় আমার আজকে আসা হবে না। ”

এক সময় কাউন্টার থেকে আমাকে বলা হয়, “স্যার, আপনি বিমানের ম্যানেজার স্যারের সঙ্গে কথা বলে দেখেন, উনি বললে আমি আপনাকে বোর্ডিং পাস দিতে পারব। ” এ কথা শুনে আমি ম্যানেজার মো. আলিয়ার রহমানের কাছে গেলাম। তাকে আমি সালাম দিয়ে আমার পরিচয় দিলাম। বললাম, “স্যার, আমার একটা সমস্যা হয়েছে, আপনি দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন। ” আলিয়ার রহমান বললেন, “আপনারা শিক্ষিত মানুষ হয়ে কেন এমন করেন?” আমি বললাম, “স্যার টিকেট আমার বস দিয়েছে। ” আমার বসের পরিচয় দিলাম। কিন্তু ম্যানেজার সাহেব আমার কথার কোনো কথার কর্ণপাত করলেন না। আমাকে উনি রক্তচক্ষু দেখালেন।

শেষ পর্যন্ত আমি বাসায় ফিরে যাব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। হঠৎ মনে হলো, মালয়েশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কমবেশি সবাই আমার পরিচিত। ভেবেচিন্তে আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতাকে ফোন দিলাম। ভাগ্য ভালো ছিল বলে তাকে ফোনে পেয়ে গেলাম। তাকে সব খুলে বললাম। তিনি বলেন, “আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দেন। ” কিছুক্ষণ পর তিনি (আ’লীগ নেতা) আমাকে ফোন করে বললেন, “আপনি যেতে পারবেন। নেতার কথায় শুনে একটু আশার আলো খুঁজে‍ পেলাম। এর কিছুক্ষণ পরই কাউন্টার থেকে একজন এসে আমাকে বললেন, “স্যার আপনার পাসপোর্ট ও টিকিট আমাকে দেন। ” এরপর আমার বোর্ডিং পাস ও লাগেজ বুকিং হয়ে গেল।

আমার প্রশ্ন বিমান বাংলাদেশের ম্যানেজার মো. আলিয়ার রহমান সাহেবকে এত অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি কর্ণপাত করলেন না। অথচ একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির সাহায্য নিয়ে সব সহজে হয়ে গেল। ধন্যবাদ রাজনৈতিক নেতাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১২
সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।