ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

দূত ভজনার রাজনীতি ও দেশপ্রেম!

অজয় দাশগুপ্ত, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১২
দূত ভজনার রাজনীতি ও দেশপ্রেম!

কত ভাবে যে দেশকে অপমান করি আমরা। রামুর সাম্প্রদায়িকতা সহিংস ঘটনার কারণে এমনিতেই মন খারাপ।

পৃথিবী জুড়ে শান্তি ও কল্যানের ধর্ম হিসেবে বৌদ্ধ ধর্মের খ্যাতি সদা উজ্জ্বল। আমাদের দেশের বৌদ্ধরা ও শান্তির প্রতীক। এমনকি ৭১ এও তাঁদের প্রতি পাশবিক আচরণে উন্মাদ হতে পারেনি পাকিস্তানিরা।

অধিকন্তু বৌদ্ধ ধর্মপ্রধান এলাকায় চৈনিক বুড্ডিষ্ট সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বহু বাংগালির প্রাণ বাচিঁয়েছিলেন তারা। সেই বৌদ্ধরা আজ নিজদেশে নির্যাতীত। রামুর ঘটনা সহজে নিরাময়  হবার নয়। প্রায় এক বছর ঐ এলাকায় কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। নব্বই দশকের গোড়ার দিকে রোহিংগা আগমনের সূচনাকালে  বিপদের পদধ্বনি শুনে চমকে উঠলেও একদিন যে এমন ভয়াবহ পরিস্হিতি হতে পারে অনুমান করতে পারিনি। এ কোন মন্দির বা পুঁথি পোড়ানোর উৎসব (!) ছিলনা। আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো পুড়ে যাওয়া নারকেল গাছের মত ই মাথা তুলে আছে বিপজ্জনক আগামী। প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন ও জ্বলে ছাই হয়ে যাওয়া বুদ্ধমুর্তি আর কোনদিনও আগের মত করে ফিরে আসবে না। ফিরে আসবে না বিশ্বাস আর সহমর্মী প্রতিবেশীর ভালোবাসা। এমন ই বিপদ, বাচ্চা মেয়েটিও জেনে গেছে তাকে কেউ মারতে আসবে কারন সে বৌদ্ধ। আর যারা মারতে আসবে তারা ধর্মের জন্যই তা করবে।

এমন কঠিন বিপদে আগে কি পড়েছি আমরা? মনে পড়েনা। হিন্দু-মুসলমানের সংঘাত মারামারি বয়সে বুড়ো। তা ছাড়া প্রতিবেশী ভারত সেখানে বড় ফ্যাকটর। কিন্তু এবারের দাংগা একতরফা হিংসার আগুন পৃথিবীর বহু দেশে ভাবমুর্তিকে বিপদে ফেলেছে। অনেক দেশে প্রতিবাদ হয়েছে কোথাও কোথাও মিছিল হয়েছে ইট পাটকেলও পড়েছে বাংলাদেশ মিশনে।

এই যখন অবস্হা তখন রাজনীতির ভূমিকা কি হওয়া উচিৎ? দুনিয়ার প্রায় সবদেশে একেবারে অসভ্য বর্বর বা জংগি দেশ না হলে এজাতীয় ঘটনায় জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠে। সরকারি বা বিরোধী দল নির্বিশেষে সহমত হয়ে একই নীতি গ্রহণ করে. সবার আগে সামনে এসে দাঁড়ায় দেশ।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সে কাজটুকুও করতে পারলোনা। একে অপরের দোষ খুঁজতে খুঁজতেই দিন গুজরান। প্রধানমন্ত্রী রামু ঘুরে আসলেও খালেদা জিয়া রামুর চাইতে চীনকে নিকটবর্তী ভাবলেন। অন্যদিকে বিএনপির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের দোষ ত্রুটি খোঁজার পরিবর্তে মওদুদ কে এক হাত নিলেন শেখ হাসিনা। অত:পর? মওদুদ কি ছেড়ে দেওয়ার মানুষ? ১৭  অক্টোবরের মিডিয়া জুড়ে থাকা মওদুদীয় কর্মকাণ্ডের খবর রীতিমত উদ্বেগের। বাঘা বাঘা দেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি ও তাঁর দল কি দেখালেন? কারা ছিলেন সে দলে? ড: সুকোমল বড়ুয়ার মত লোক, যিনি পূর্ণিমা ধর্ষিত হবার পর  হাজার হাজার হিন্দু নির্যাতিত হবার পর বলেছিলেন কোথাও কি্ছু হয়নি। বাগিয়ে নিয়েছিলেন দালালীর একুশে পদক।

এই সব বর্নচোরারা কি সত্যি দেশের জন্য বা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য কাঁদছেন? কাঁদলে তাঁরা এখনো  ভয়ে কম্পমান নিরীহ মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতেন। শান্তি কমিটি বানিয়ে পাহারা দেওয়া বা জীবন ফিরিয়ে দেওয়া, আস্হা ফিরিয়ে দেবার রাজনীতি করতেন। তা না করে বিদেশি প্রভুদের মনোরন্জন আর মন গলানোর ধান্দায় নেমেছেন তাঁরা। এমনি বৈঠক দুয়ারে খিল, মাছিও  ঢোকা বারণ।

রামুর ঘটনা কি গোপন কিছু না?  এই এক নতুন উৎপাত। কিছু ঘটলেই প্রভুর শরণাপন্ন হওয়া। দেশের রাজনীতিবিদরা জেনে গিয়েছেন জনগণ তাঁদের ওপর আস্হা রাখেনা। জনবিচ্ছিন্ন হবার কারনে উভয় দলে এখন প্রভু ভজনার জোয়ার বইছে। হিল্লি দিল্লী চীন মধ্যপ্রাচ্য আমেরিকা মুখি হবার ভেতর ই তার প্রমান দেখছি আমরা।

যুক্তি কি বলে? আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া কানাডার দূতরা রামু পাহারা দেবেন? না তাঁরা বললেই দাংগাবাজরা সুড়সুড় করে অস্ত্র ফেলে মশাল তরবারী পায়ের কাছে জমা দিয়ে  বলবেন আজ থেকে আমরা সবাই গান্ধী হয়ে গেলাম? ঘটনা কারো অজানা নয়, আওয়ামী বি এন পি মিলে মিশে দাংগা করেছে। তারপর ও এই রুদ্ধদ্বার ভিডিও প্রদর্শনীর মানে ছলে বলে নিজের তখত তাউস ফিরে পাওয়া। অথচ এর ভেতর যে নিজের কাপড় খুলে যাচ্ছে লজ্জা সরম বেরিয়ে পড়ছে সে ব্যাপারে হুঁশ নেই। যা ঘটেছে তা নিন্দনীয়, ভাষায় অবর্ননীয়। কোন দলই তা রুখতে পারেনি পারছে না। তাই মওদুদের মত নেতারা এখন দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ও লজ্জাহীন. বিদেশি দূতদের দেশের লজ্জা বা অপমান দেখিয়ে তখত হাসিলের এই নোংরামী বাংলাদেশকে বিপদে ফেলবে। বিপদে ফেলবে আমদের ভাবমূর্তিকে। এতে রামু বৌদ্ধ বা সম্প্রীতির কোন লাভ হবেনা।

ঈশ্বর নিজেই মুখ লুকিয়ে হাসছেন। দেশের রাজনীতির সাম্প্রদায়িক শক্তি জামাতের সহচররা ও এখন বিদেশিদের কাছে সেক্যুলার হবার অভিনয় করছে। বুদ্ধ বেঁচে থাকলে পুনর্বার সন্যাস নিতেন। ঘরবাড়ী ছেড়ে বনে গিয়েছিলেন এবার বংগদেশেই থাকতেন না। হায়রে রাজনীতি তবু তুই এখনো নিয়ামক।

বাংলাদেশ সময় ১০২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১২
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।