ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

তুমি আর কবে জাগিবে বাঙালি?

অজয় দাশগুপ্ত, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১২
তুমি আর কবে জাগিবে বাঙালি?

আগের মত আর উদ্বেগ বা উৎকন্ঠা গ্রহণ করিতে পারি না। মেঘে মেঘে বেলা তো আর কম হয় নাই।

কানের পাশের কেশে চুনকালির ছোপ, দাড়ি রং না করিয়া অফিস যাই না, মধ্যরাত্রিতে দু:সংবাদ বা ভীতিকর খবরের ভয়ে ফোন অন করিয়া রাখি না। সবচাইতে বড় ব্যাপার হৃদয়পিণ্ডটির দোলাচল! তাহার দোলা ঠিক রাখিবার জন্য সকালের সংবাদপত্র খুলি বেলা দশ ঘটিকার পর। সপ্তদশ বৎসর বিদেশ বসবাসের পরও দেশই প্রধান ও মুখ্য বিষয়। কিন্ত শান্তি নাই! এই তো সেইদিন কাগজ খুলিয়া অনলাইন নিউজ মিডিয়ায় চোখ রাখিবার পর শরীর তো বটেই, মাথাও ঝিমঝিম করিয়া উঠিল। উঠিল তো উঠিল আর থামিতে চাহে না।

আমি বিশ্বজিৎ কে চিনি না, জানিও না বয়সে পুত্রবৎ কিংবা খানিকটা বড় কিনা। যৌবনের সার সময়টুকু টেইলারিং শপে কাটাইলেও তাহার নিশ্চয়ই স্বপ্ন ছিল, সে স্বপ্ন হয়তোবা সাদা কালো। হয়তো ছিল আটপৌঢ়ে ও এনালগ। প্রত্যেক দেশে মানুষ রাস্তা পার হয়, অফিসে যায়, দোকান করে; সে-ও তাহাই করিতেছিল। একজন সাধারণ নাগরিকের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্হানের নিরাপতা বিধান করা সেদেশের সরকারের দায়িত্ব। কম দেশেই মুখে বড় বড় বুলি আর ডিজিটাল ডিজিটাল ফাল পাড়ার রেওয়াজ রহিয়াছে। এই বুলিবাজদের সাগরেদরা বিশ্বজিৎ নিধনের যে উল্লাস দেখাইল তাহাতে আমার মত কমজোরি  মানুষের হৃৎকম্পন থামিয়া যাইতে চাহে, হাত-পা ঠাণ্ডা হইয়া আসে, মুখে পানিও রোচে না। এককালে ছাত্রলীগ নামের দলটি দেশ ও দশের সহায় বা প্রেরণার কাজ করিত। স্বাধীনতার পর হইতে তাহার অতীত থাকিলেও বর্তমান লোপ পাইতে থাকে। এখন তাহার ভবিষ্যৎ বেবাক ফরসা। খুনির হস্তে কোনো দল বা ছাত্র সংগঠন নিরাপদ থাকিতে পারে না, সে খুনি যদি হয় সরকারী দলের মানুষ ভাবিতে বাধ্য তাহারা আছে গডফাদারের ছায়ায়। আইন তো আইন বিচারেরও সাধ্য নাই, তাহাদের একটি কেশাগ্রও স্পর্শ করিতে পারে. সে তো তাহাদের আচরণেই প্রকাশ্য।

একজন নিরীহ পথচারীর উপর এই হামলা অবলোকনকারী সারি সারি দর্শক, ক্যামেরাম্যানদের তৎপরতা পরবর্তী সময়ের কভারেজ যেন হিন্দী ছবির ঢাকাইয়া চিত্রায়ন.  কাহারো আগাইয়া আসার সাধ্য হয় নাই. হইবার কথাও নহে. কাহারো গর্দানে যে একটির বেশি মস্তক নাই। কিন্তু ইহাও সমাজ বা জাতির মেরুদণ্ডহীনতার ই প্রমাণ। এই দেশে রক্তপাত,মৃত্যু, লাশ নিত্য ঘটনা। হুমায়ূন আজাদ আর বিশ্বজিৎ তখন এক। এক ধারায় মিশিয়া যায় হিন্দু মুসলমানের রক্তপ্রবাহ।

কিমাআশ্চর্যম! তাহার নেতৃত্বে আজ প্রগতিশীল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ!!

সর্বাধিক  ভয়ের কারণ অন্যত্র, খুনিদের পরিচয়  দেখিয়া আমরা কি বুঝিলাম?  তাহারা কেহই মূর্খ নহে, সকলেই সার্র্টিফিকেটধারী। সমাজে তাহারা সকলেই উচ্চ শ্রেণীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের  নামভারী বিষয়ে পড়াশুনা করা ছাত্ররা আজ পেশাদারী খুনির ভূমিকায়, ইহার চাইতে ভয়ের আর কি হইতে পারে? ইহারা মুরগী-মিলন, কানকাটা রফিক, গালকাটা সুনীল গোছের মস্তান নয়. রীতিমত পড়াশুনা জানা। তাহারাই আজ খুনি। এই দেশের কি আসলেই কোনো ভবিষ্যৎ আছে?

আওয়ামী লীগ দায় লইতে রাজি নহে। তাহার বলিয়াছে, আনন্দ মিছিলের পর কে খুন হইল আর কে হইল না, সেই দায় তাহাদের নহে। মারহাবা! মারহাবা!!

অন্য দিকে বিএনপি পাতে নিজেদের পাতে ঝোল টানিবার জন্য মায়াকান্না কাঁদিতেছে মাত্র। মধ্যখানে সাধারণ মানুষ ক্লাউনের ভূমিকায়। আরো বিশ্বজিৎ বলি যাইবে, আরো লাশ পড়িবে, এই লাশের উপর দিয়া পাওয়ার বদলাইবে; তাহাতে রাজনীতির কিচ্ছু আসিবে যাইবে না. বাঙালি তুমি জাগিয়া দেখো, তোমার ছাত্ররাও আজ খুনি, রাজনীতি দেশে বিদেশে খুন আর খুনির জন্ম দিয়া সব গ্রাস করিতে উদ্যত। তবু কি তুমি বিকল্প খুঁজিবে না?

* অজয় দাশগুপ্ত: অস্ট্রেলিয়া-প্রবাসী সাংবাদিক
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।