ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

অগ্নিপরীক্ষার বছরে মহাজোট: অঙ্গীকার পূরণ সম্ভব হবে কি!

বিশ্বজিৎ পাল, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৩
অগ্নিপরীক্ষার বছরে মহাজোট: অঙ্গীকার পূরণ সম্ভব হবে কি!

দেখতে দেখতে মহাজোট সরকারের চারটি বছর পেরিয়ে গেল। আর এক বছরও হাতে নেই।

তাই এ বছরে বাকী অঙ্গীকারগুলো পূরণে পুরোপুরি মাঠে নেমেছে মহাজোট সরকার। এক বছরে সরকার বিভিন্ন বাধা বিঘ্ন মোকাবেলা করে তাদের বাকী অঙ্গীকার পূরণ সম্ভব হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এদিকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের রেখে যাওয়া শীর্ষ সংকটগুলো তাড়াতে মহাজোট সরকার গেল চার বছর উদ্যোগী হলেও কিছুটা হোঁচট খেয়েছে। সরকার দেশ উন্নয়নের পাশাপাশি  সংঘাতময়, ঊর্মিমুখর গত চারটি বছর শেষে গত ৭ জানুয়ারি শুরু হলো নতুন একটি অগ্নিপরীক্ষার বছর।

ঘটনার ঘনঘটায়, সাফল্য-ব্যর্থতার মিশেলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ৪ বছর পেরিয়ে ওই দিন (৭ জানুয়ারি) ৫ বছরে পা দিল। এখন চলছে তাদের অগ্নিপরীক্ষার বছর।

দেশের  সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের অখণ্ড প্রত্যাশা, এ বছরের শেষেই জাতীয় নির্বাচন হবে। পাঁচ বছর পরপর জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিজেদের প্রিয় দলকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। দুর্ভাগ্য, জনপ্রত্যাশা ও বাস্তবতার মধ্যে ব্যবধান প্রায় অলঙ্ঘনীয়ই থেকে যায়।

কিন্তু মহাজোট সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে। তবে গত চার বছরে শীর্ষ ১০ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ পড়ার ঘটনা অবশ্য সরকারের সাফল্যের পালক বাড়িয়েছে।

গত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি বিশাল জনপ্রিয়তা নিয়ে, বৃহৎ অঙ্গীকার দিয়ে মহাজোট সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। মহাজোট নির্বাচনী ইশতেহারে যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে তার অনেকগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলেও অনেক অঙ্গীকারই পূরণ হয়নি। নির্বাচনের আগে হাতে এক বছর সময়ও নেই।

এ সময়ে অপূর্ণ অঙ্গীকার পূরণ মহাজোটের অগ্নিপরীক্ষাই হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। এ বছর সরকারি দল যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে থাকবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এ জন্য তারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আরেক দফায় নতুন মেরুকরণ সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন দলের বিদায়ী কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য।

তার ভাষায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করাটা বর্তমান সরকারের প্রধান অঙ্গীকার। এরই মধ্যে গত ২১ জানুয়ারি বিচারের প্রথম রায় মিলল। এ বছরে যুদ্ধাপরাধ মামলার আরো কয়েকটির রায় ঘোষণা হতে পারে বলে জানা গেছে।

অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, দেশে যে সরকার ক্ষমতায় আসে, দুর্নীতির ডালপালা বিস্তার করে; সরকারি দলের ক্যাডাররা লুটপাট, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, এমনকি হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। সরকার বদল হয়, এ চিত্রের বদল হয় না।

মহাজোট সরকারের চার বছরে সফলতা থেকে ব্যর্থতার পাল্লা ভারি বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে দুর্নীতি ঠেকাতে স্বাধীন ও কার্যকর দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনে সরকারি উদ্যোগের বিষয়টি সাধুবাদ পেয়েছে। এর মধ্যে দুর্নীতির তদন্ত, অনুসন্ধান, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দুদক মন্ত্রী-আমলাসহ অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সরকারের চতুর্থ বছরে পদ্মাসেতু নিয়ে দুর্নীতি, কিংবা দুর্নীতির ষড়যন্ত্রে দেশ তোলপাড় হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের শুরুর দিকে চাল, ডাল, ভোজ্যতেলসহ দ্রব্যমূল্য কমানোর ক্ষেত্রে বড় ধরনের সফলতা দেখালেও পর্যায়ক্রমে তা ক্রমশ মিলিয়ে গেছে। বর্তমানে একমাত্র চাল ছাড়া প্রায় সব দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঘটনা শিরঃপীড়ার কারণ। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ছিল মহাজোটের নির্বাচনী ইশতেহারের অগ্রাধিকারের পাঁচটি বিষয়ের একেবারে শীর্ষে।

বর্তমানে কিছু কিছু মন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী ও দলীয় ক্যাডারদের অপকর্ম ও দুর্নীতির বিস্তারে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের অনেক সুকৃতিই ধূসর হয়ে গেছে। জনমন থেকে সরকারের এই বিবর্ণ ভাবমূর্তি দূর করে আর একবারের জন্য ক্ষমতায় যাওয়ার পদটি ক্ষমতাসীনদের জন্য কুসুমাস্তীর্ণ নাও হতে পারে, এমনকি সন্দেহাতীত বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

এ সরকারের অনেক সাফল্য বিবর্ণ হলেও চোখে পড়ার মতো বড় সাফল্য বিদ্যুৎ সংকটের আপাত সমাধান। এটা ছিল মহাজোটের নির্বাচনী ইশতেহারের অগ্রাধিকারের তৃতীয় বিষয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শেষের দিকে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ হচ্ছে। শিক্ষাবর্ষ শুরুর দিনেই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই পৌঁছে দিয়ে সরকার সাধুবাদ কুড়িয়েছে। কৃষিপণ্য উৎপাদনেও এসেছে বড় ধরনের সাফল্য। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়টিও সরকারের দিক থেকে সাফল্যের নতুন মেরুকরণ।

জোট সরকারের রেখে যাওয়া শীর্ষ সংকটগুলো তাড়াতে সরকার বিগত বছরে উদ্যোগী হলেও কিছুটা হোঁচট খেয়েছে। তবুও `ভিশন-২০২১ বাংলাদেশ: সমৃদ্ধ আগামী`থ এ শপথ বাস্তবায়নে বন্ধুর পথে এগুচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি অপরাজনীতির বিপক্ষে সোচ্চার হয়ে সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রবর্তনের চেষ্টা করছেন। যা মাঠ পর্যায়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ সরকারের আমলে বিগত দিনে প্রশাসনিক সংস্কারের উদ্যোগ ছিল বেশ প্রশংসনীয়। তবে বিপথগামী কিছু নেতাকর্মীর দখল, ভর্তি ও টেন্ডারবাণিজ্য এবং চাঁদাবাজির ঘটনা সরকারের বড় অর্জনগুলোকে ম্লান করেছে।

তাদের অপকীর্তির কারণে গোটা আওয়ামী লীগ পরিবারের মুখে চুনকালি লেগেছে। কয়েকজন এমপির দখলবাণিজ্যসহ কয়েকটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল বড্ড বেমানান। বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন কয়েকজন মন্ত্রীও।

দুর্নীতির বিষয়টি ঘুরেফিরে আলোচনার শীর্ষে এসেছে। অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল দ্বিতীয়। পদ্মাসেতু কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পদত্যাগ করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। এ কারণে তাকে আওয়ামী লীগের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতেও রাখা হয়নি বলে জানা গেছে।

`ভোট ও ভাতের অধিকার, দারিদ্র্য বিমোচনের হাতিয়ার` শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহারের নাম দেওয়া হয়েছিল `দিনবদলের সনদ`। এতে অগ্রাধিকারের চতুর্থ বিষয় ছিল  ‘দারিদ্র্য ঘোচাও বৈষম্য রুখো’। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী অনেক বাড়িয়ে এ লক্ষ্যে কিছুটা এগিয়েছে সরকার। মানুষের জীবনযাত্রার মান এখন অনেকটা উন্নত হয়েছে। তবে তৃণমূল পর্যায়ে এ নিয়ে দুর্নীতিও কম হয়নি। অনেক সাংসদ এবং তাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ মিডিয়ায় বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষায়, সরকার অনেকটা আমলানির্ভর হলেও বর্তমান পরিবেশ প্রগতির অনুকূলে।

অন্ধকারের অপশক্তি কিছুটা নিষ্ক্রিয় । তবে নির্বাচনী ইশতেহার পুরোপুরি বাস্তবায়ন নিয়ে অবিশ্বাস রয়েছে। `ভোট ও ভাতের অধিকার, দারিদ্র্য বিমোচনের হাতিয়ার` শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহার `দিনবদলের সনদ` অনেকটাই ফিকে হয়ে আছে। পাঁচ বছরের মেয়াদকালে নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়ন না হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে সরকারকে বড় ধরনের হোঁচট খেতে হতে পারে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সাফল্য এনে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের পথে বেশ এগিয়েছে সরকার। অত্যন্ত ব্যয়বহুল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আমদানি এবং বাণিজ্যিকভাবে ছোট ও মাঝারি বিদ্যুৎকেন্দ্র  চালু করায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতির বেশ উত্তোরণ ঘটেছে। ৩ হাজার ৫৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ায় বিদ্যুতের বেহাল অবস্থা অনেকটাই নেই। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি চাহিদাও বেড়েছে। শিল্পে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দু’টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার এবং দু’টি গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার ঘটনাও সরকারের জন্য স্বস্তির ঘটনা।
তবে পাঁচ দফায় তেল ও ছয় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।

অগ্রাধিকারের পঞ্চম বিষয়, সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ শক্ত হাতে দমনের বিষয়টি বেশ ইতিবাচক। সরকার ও বিরোধীদলীয় নেতাদের বেসামাল কথাবার্তায় জনগণ বীতশ্রদ্ধ, বিব্রত।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোও প্রশংসনীয়। জনগণ বিশ্বাস করে, বর্তমান সরকার তার মেয়াদকালেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে সমর্থ হবে।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ক্রসফায়ার বন্ধ হয়নি। গুমহত্যার ঘটনাও জনগণকে শঙ্কিত করেছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশাপ্রদ উন্নতি হয়নি। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতি ৩৪ বছরের কলঙ্কের দায় থেকে মুক্তি পেয়েছে। জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের পুনর্বিচার প্রক্রিয়া চলছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার নিশ্চিত করার উদ্যোগে স্বস্তি এসেছে।

জানা গেল, সংসদের প্রথম অধিবেশনেই প্রতিটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠনের মাধ্যমে ইতিহাস তৈরি হলেও সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলের দূরত্ব বেড়েছে। বিরোধী দলকে আস্থায় আনা সম্ভব হয়নি। সংসদে বিরোধী দলের অনুপস্থিতি অব্যাহত রয়েছে। বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের ঘটনা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও সংসদ কার্যকরের বেলায় সরকারি দলের মনোভাবও তেমন একটা ইতিবাচক নয় বলেই মনে করছেন অনেকে।

এ সময়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শিষ্ঠাচার ও সহিষ্ণুতা গড়ে ওঠেনি। এ সময়ে ন্যায়পাল নিয়োগ করা হয়নি।

মানবাধিকারও লঙ্ঘিত হচ্ছে। ক্রমেই অস্থির হয়ে পড়ছে পোশাকশিল্প। গত বছরের নভেম্বরে পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন ১১১ জন। জাতীয় জীবনে এ এক বড় ট্র্যাজেডি।

শেয়ারবাজারে ধস ও ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা ভাব চলছে। আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর নির্মাণের ঘোষণা কার্যকর হয়নি। গত বছরের জানুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা সরকার ব্যর্থ করে দিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের দায়ও সরকারের। সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতির মন্ত্রিত্ব প্রত্যাখ্যানের ঘটনায় সরকার বেকায়দায় পড়ে। তবে গত চার বুছরে খুন, গুম বেড়ে গেছে। বিশেষ করে সরকারের গত চার বছরে ১৯ সাংবাদিক খুন হয়েছে। যা দেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত রেকর্ড স্থাপন করেছে।

নির্মম হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে শুধু সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ দম্পতির বিচার হয়েছে। বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ ১৮টি হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয়নি। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোকে এক কাতারে আনার প্রক্রিয়া পাকাপাকি হয়েছে। ১৯৭২ সালের সংবিধান ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় রাজনীতিকে সঠিক পথে আনার এক অনবদ্য কাজ হয়েছে গত চার বছরে।

ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের টানাপড়েন কাটতে শুরু করেছে। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার শুরুতেই বিডিআর হত্যাকান্ডের মতো নৃশংস হত্যাযজ্ঞ পরিস্থিতির বড় চ্যালেঞ্জ শক্ত হাতে মোকাবেলা করেছেন শেখ হাসিনা। গত বছরের মার্চে বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয়ের ঘটনা সরকারের এক অনন্য সাফল্য।

হলমার্ক কেলেঙ্কারি সরকারকে বিপাকে ফেলেছে। ডিসেম্বরে বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তবে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি ও মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বেশ প্রশংসীয়। উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ ও সংসদের কয়েকটি উপনির্বাচনে কারচুপির কোনো ঘটনা ঘটেনি।

গত চার বছরে গ্রামীণ অর্থনীতি দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। কৃষিখাতে অব্যাহত সহযোগিতার পাশাপাশি নানা প্রণোদনা দেওয়া হলেও উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়াটা ছিল হতাশাজনক।

এখন নির্বাচনের বছর। তাই সরকারের সামনে অগ্নিপরীক্ষার দিন। সরকারও এ নিয়ে বেশ সজাগ। এ কারণে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন করা হয়েছে। দলীয় কাঠামোতে এসেছেন নতুন নেতৃত্ব। দল গোছাতে প্রধানমন্ত্রী নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। দুই মাসের মধ্যে সব সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বজিৎ পাল:  লেখক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী, [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৩
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।