ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

শিক্ষার্থী আছে ক্লাসরুম নেই, এ কেমন শিক্ষাব্যবস্থা?

ইমন রহমান, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৩
শিক্ষার্থী আছে ক্লাসরুম নেই, এ কেমন শিক্ষাব্যবস্থা?

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মানেই দেশের সবচেয়ে মেধাবীদের পাঠ্যস্থান। এক ধরনের যুদ্ধের মধ্যদিয়ে এখানে ভর্তি হতে হয় তাদের।

উদ্দেশ্য একটাই, প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে দেশের সেবা করা। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ’ বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা গত এক বছর ধরে যাপন করছেন মানবেতর শিক্ষাজীবন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কোনো বিভাগ চালু হলে কিছু সঙ্কট হয়তো থাকে। কিন্তু একটি বিভাগের ক্লাসরুম থাকবে না, এমন অবস্থা কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নিশ্চয় কাম্য নয়।

২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে গত শনিবার থেকে ক্লাস শুরু হওয়া বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা যখন ক্লাস করছে, বিভাগের বড় ভাইবোনেরা বরণ করে নিচ্ছে, মুক্তমনে বিচরণ করছে ক্যাম্পাসজুড়ে, তখন জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষের দাবিতে আন্দোলন করছে রাস্তায়। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের জন্য এর চেয়ে লজ্জা আর কি হতে পারে?

অনেক আশা নিয়ে যারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছে, তাদের মনে যে স্বপ্ন রয়েছে তা আজ পরিণত হয়েছে অনেকটা দুঃস্বপ্নে। বিভাগটিতে বলতে গেলে কিছুই নেই। জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা নামেই জার্নালিজম বিভাগে পড়ে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ছিলো বিভাগটিকে সর্বোচ্চ দৃষ্টি দেওয়া।

এসব সমস্যা নিয়ে গত সোমবার থেকে আন্দোলনে নেমেছেন বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যকে স্মারকলিপি, মানববন্ধন, মৌন মিছিল করছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীরা যে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন তা হলো- নতুন কলাভবনে শ্রেণীকক্ষ বরাদ্দ ও বিভাগের অবস্থান নিশ্চিতকরণ, সুষ্ঠু উপায়ে শিক্ষা প্রদানের লক্ষে দ্রুত সেমিনার লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরিসহ পূর্ণাঙ্গ বিভাগ গঠন এবং বিভাগের ইংরেজি নামের সঙ্গতিপূর্ণ বাংলা নামকরণ।

আন্দোলনরত জার্নালিজম বিভাগের চলতি শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী সুবর্ণা জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “গত শনিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করেছি। অন্য বিভাগে ভর্তি হওয়া সহপাঠীরা যখন আনন্দে ক্লাস করছে, তখন আমাদের শ্রেণীকক্ষের দাবিতে রাস্তায় আন্দোলন করতে হচ্ছে। এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে। ”
বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী প্রিয়াংকা দত্ত বলেন, “আমরা গত একটা বছর মানবেতর ভাবে ক্লাস করছি। অন্য বিভাগের ক্লাস কখন শেষ হবে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হয় আমাদের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু আশ্বাস দিয়ে যায়। কোনো বাস্তবায়ন হয় না। ”

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে যদি শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হতে হয় শিক্ষার্থীদের, তবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে সার্বজনীন হবে?

কেউ আরাম আয়েশে ক্লাস করবে আর কেউ ক্লাসরুমই পাবে না, এটা হতে পারে না। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতাও আমাদের কাম্য হতে পারে না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন যথেষ্ট বিচক্ষণ ব্যক্তি বলেই আমরা জানি। উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক ভালো কাজ করেছেন তিনি। প্রশংসিতও হয়েছেন সর্ব মহলে। তিনি একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্বও। তাই তার কাছে জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশাও একটু বেশি।

শিক্ষকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্দোলনে প্রায় অকার্যকর একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে যেভাবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন, আশা করবো জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সমস্যাও অতি দ্রুত লাঘব করবেন তিনি।

বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু হওয়া এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা এখনও কোনো শ্রেণীকক্ষ পায়নি। কখনও নতুন কলাভবনে অন্য বিভাগের ক্লাস শেষে ক্লাস করছে আবার কখনও টিএসসিতে ভাষা শিক্ষা কেন্দ্রের ৩০ আসনের কক্ষে ৬৫জন শিক্ষার্থী ক্লাস করছেন, পরীক্ষা দিচ্ছেন। শিক্ষকদেরকে নতুন কলাভবনের কনফারেন্স রুমে অস্থায়ীভাবে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দেশের অন্যতম একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অবস্থার মধ্যেই শনিবার থেকে শুরু হয়েছে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।