ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

বাংলাদেশে জাতীয় ও বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস পালনের তাৎপর্য

ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৩
বাংলাদেশে জাতীয় ও বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস পালনের তাৎপর্য

বাংলাদেশ হলো পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যে দেশে ২০১২ থেকে সরকারিভাবে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস’ (৩ এপ্রিল) পালন করা শুরু হয়েছে। তা হলে কি বাংলাদেশ আগামীতে বিশ্ব চলচ্চিত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছে? প্রশ্নটি করার সঙ্গত কারণ আছে, ১৮৯৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর তারিখে বিশ্বে প্রথম চলচ্চিত্র প্রদর্শন শুরু হলেও, খুবই সংক্ষিপ্ত পরিসরে শুধু বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও ‘বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস’ বলে কোনো দিবস পালনের খবর জানা যায়নি।

বিষয়টি অবাক করার মতো। বিশ্বের নবীনতম শিল্পমাধ্যম হলেও বিজ্ঞান ও কলা নির্ভর গণমাধ্যম চলচ্চিত্র পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের বিনোদন, শিক্ষা ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের উপকরণ যোগাচ্ছে। তা হলে চলচ্চিত্র দিবস কেন পালিত হচ্ছে না পৃথিবীর অন্য কোথাও? অথচ সুকুমার শিল্পের অন্য অনেক বিষয় সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন দিবস কিন্তু ঠিকই পালিত হচ্ছে পৃথিবী জুড়ে, যেমন বিশ্ব নৃত্য দিবস, বিশ্ব নাট্য দিবস ইত্যাদি। আর যত ক্ষুদ্র পরিসরেই হোক, বিশেষত শিল্পের অতশত অভিভাবক থাকতে, বাংলাদেশেই বা কেন পালিত হচ্ছে এমন একটি দিবস? কারা পালন করতে শুরু করেছেন দিবসটি? প্রশ্নগুলো ভেবে দেখার মতো।

বহুকাল ধরেই বলা হচ্ছে, মানুষ চায় তাঁর সজীব ও সচল উপস্থিতি নিয়ে রূপ রসে ভরা পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকতে। সম্ভবত বিশ্ব মানবের সে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে মানব জাতির হাতে সফলতম হাতিয়ারটি তুলে দিয়েছিলেন লুমিয়েঁ ভ্রাতৃদ্বয় ১৮৯৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর। বিষয়টি বিশদভাবে ব্যাখ্যা না করলেও বোধকরি চলে। ফ্রান্সের প্যারিস নগরীর ‘কাপুসিন ক্যাফে’ নামক প্রেক্ষাগৃহের উদ্বোধন অধিবেশনে সেদিন নিজেদেরই উদ্ভাবিত প্রক্ষেপণ যন্ত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের কৃতিত্ব দেখান অগাস্ট লুমিয়েঁ (১৮৬২-১৯৫৪) ও লুই লুমিয়েঁ (১৮৬৪-১৯৪৮) নামের দুই ভাই। তাদের সেদিনের প্রদর্শিত সে চলচ্চিত্র আজও জীবন্ত আছে এবং তা টিকে থাকবে, যতদিন মানব সভ্যতা বেঁচে আছে। এভাবেই নিজের সৃষ্ট চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মানুষও টিকে থাকবে তার পূর্ণাঙ্গ অবয়ব নিয়ে।

চলচ্চিত্রের উদ্ভব ও বিকাশ
ধরা যাক পৃথিবীর প্রথম প্রদর্শিত সেই চলচ্চিত্রের কথা। কী ছিল তাতে? পর্দা জুড়ে প্রচণ্ড গতির একটা পুরো ট্রেন এসে ঢুকছে স্টেশনে, এই হলো A Train Reaches the Station, সেই চলচ্চিত্রের প্রধান দৃশ্য। সে সময় আরো প্রদর্শিত হয়েছিল A Boat Leaves the Harbour, Baby at the Breakfast Table এবং Watering the Garden -এ ধরনের ছবিগুলোও। আজ মানব সভ্যতার জীবন্ত ইতিহাসের ধারক হয়ে উঠেছে সে দিনের প্রদর্শিত সেই চলচ্চিত্রগুলোই। তাঁদের এ উদ্ভাবনের ফলে ‘মৃত্যু আর চরম অন্ত রইল না’। সেদিন যে সব মানুষকে পর্দায় দেখা গেল—মৃত্যুর পরও তারা আমাদের মাঝে বেঁচে রইলেন, সেদিন সমুদ্রের যে ঢেউ গর্জে উঠেছিল যেন আজও তা উপকূলে আছড়ে পড়ে গর্জন তোলে। বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তাই ১৮৯৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর তারিখটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, কারণ এ দিবসের তাৎপর্য অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। সেদিন প্রদর্শনীর মাধ্যমে যে চলচ্চিত্র শিল্পের অভিষেক ঘটেছিল আজ মানুষের মনের সুপ্ত বাসনা, স্বপ্ন, বাস্তবতা ও ভবিষ্যতের কল্পনা তার সাথে মিশে গেছে। উপরন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের ফল হিসেবে চলচ্চিত্র বর্তমান পৃথিবীর এক অপ্রতিরোধ্য গণমাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাই চলচ্চিত্রকে আমি বলি গণসংস্কৃতি বিকাশের সাম্প্রতিকতম ও দ্রুত বিকশমান এক অপার সম্ভানাময় ধারা।

বিশেষত আলোক বিজ্ঞানের বিকাশ, অষ্টাদশ শতাব্দীতে বিদ্যুৎ শক্তির আবিষ্কার এবং পরবর্তীতে সেলুলয়েড-যৌগ (১৮৭২) ও প্রজেক্টরের আবিষ্কার চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে অভানীয় অবদান রেখেছে। চলচ্চিত্র তাত্ত্বিকদের ভাষায় লুমিয়েঁ ভাইদের ক্যামেরা, ইস্টম্যানের সংবেদনশীল সেলুলয়েড ফিল্ম আর আঁতিয়েন মারের প্রজেক্টরের সংমিশ্রণেই আজকের চলচ্চিত্রের জন্ম। সংশ্লিষ্ট সকলেই অবগত আছেন, বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় এ শিল্পমাধ্যমটির কারো একক অবদানের ফলে আবিষ্কৃত ও বিকশিত হওয়ার সুযোগ ঘটেনি। বরং বলা যায় হাজার বছর ধরে পৃথিবীর বহুদেশের বহু মানুষের বহুরকম ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফলে ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রের বিকাশ সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞানী, শিল্পী, চিকিৎসক, গবেষক, ধর্মযাজক, সঙ্গীতজ্ঞ, ইতিহাসবিদ, সমাজতত্ত্ববিদ, সাধারণ মানুষ, লোকশিল্পী, গণিতজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক, ব্যবসায়ী, সৈনিক, প্রকৌশলি, কবি, সাহিত্যিক, রাষ্ট্রনায়ক কার না অবদান আছে এ গণসংস্কৃতির উন্মেষ ও বিকাশে? জগৎ বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল, ইটালিয়ান রেনেসাঁর পুরোধা লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি থেকে শুরু করে ধর্মযাজক এথনিয়াস কারচার, সেনাপতি পোর্তো, বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস, কেপলার, রজার বেকন, টমাস আলভা এডিসন, ডিকসন, ট্যালবট, মেব্রিজ, প্রকৌশলি আইজাক, জুলেমার, ইস্টম্যান, পিটার রজেট আরও অগণিত নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে চলচ্চিত্র শিল্প বিকাশের ইতিহাসের সাথে।

ছায়ানৃত্য, ম্যাজিক লণ্ঠন, টকি বা বায়োস্কোপের যুগ পার হয়ে চলচ্চিত্র আজ পদার্পন করেছে একবিংশ শতকে। বিজ্ঞান, চিত্রকলা, সাহিত্য, নাটক, সঙ্গীত, নৃতত্ত্ব, ইতিহাস, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, দর্শন, মনস্তত্ত্ব সবকিছুই এখন চলচ্চিত্রের বিষয়। বিশেষত নান্দনিকতা ও চিত্রভাষা বিকাশে চলচ্চিত্র লুমিয়েঁ ভ্রাতৃদ্বয়, জর্জ মেলিয়েঁ, পোর্টার, গ্রিফিথ, চার্লি চ্যাপলিন, আইজেনস্টাইন, পুদোভকিন, কুলেশভ, দভজেঙ্কো, ফ্লাহার্টি, জিগাভের্তভদের কাছে ঋণী। এ শিল্পের বিকাশের বিভিন্ন পর্বে ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তবাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মানি, ইটালি, ব্রিটেন, সুইডেন, জাপানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তাত্ত্বিক ও চলচ্চিত্রকারগণ পথিকৃতের ভূমিকা রেখেছেন। কারিগরি উৎকর্ষ সাধনের পাশাপাশি এক্সপ্রেশনিজম, আভাঁগার্দ, সুররিয়ালজম, অথরিজম, নুভেলভাগ, নিও রিয়ালিজম, নিউ ওয়েভ, এক্সিসটেনশিয়ালিজম, সেক্সচুয়ালিজম, ফ্রি সিনেমা মুভমেন্ট, নতুন জার্মান সিনেমা, ওবার হাউজেন ঘোষণাসহ নানা ধরনের আন্দোলনের ঢেউ লেগেছে বিশ্ব চলচ্চিত্রের অঙ্গনে। বিভিন্ন ধরনের মতবাদ ও মতামতের পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রচলনের ফলে এখন চলচ্চিত্রের নানান ধরনের ফরম্যাট নিয়ে বিশ্বব্যাপী চলছে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এছাড়া নৈতিকতা, যৌনতা, অশ্লীলতা, অবক্ষয় ইত্যাদি বিতর্কও যথারীতি চালু আছে চলচ্চিত্র অঙ্গনকে ঘিরে।

চলচ্চিত্রের বাংলা ভ্রমণ
এবার দেখা যাক অভিষেক পর্বে চলচ্চিত্রের বাংলাদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটি কেমন ছিল। প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো, ফ্রান্সে যেমন লুমিয়েঁ ব্রাদার্স নিজেদের প্রজেক্টরে ছবি দেখিয়ে বিশ্বে চলচ্চিত্রের সূচনা করেছিলেন বাংলাদেশেও তার ঢেউ লেগেছিল প্রায় সাথে সাথেই। বাংলাদেশে ও ভারতবর্ষে চলচ্চিত্রের প্রথম নির্মাতা ও দেশীয় প্রদর্শকও সহোদর বাঙালি ‘দুই ভাই’ বা ‘সেন ব্রাদার্স’। এঁরা হলেন হীরালাল সেন ও মতিলাল সেন। বাংলাদেশের মাণিকগঞ্জের বগজুড়ি গ্রামের সন্তান হীরালাল ও মতিলাল সেন (১৮৬৬-১৯১৭)। বাংলাদেশে প্রথমে ১৮৯৬ সালে কলকাতায় স্টিফেন্স নামক জনৈক বিদেশি নাগরিক ও ১৮৯৮ সালে ভোলায় প্রথম বাঙালি হীরালাল সেন চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন। তিনি তাঁর ভাই মতিলাল সেনকে সাথে নিয়ে রয়েল বায়োস্কোপ কোম্পানি গঠন করে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান, কলকাতা এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভোলা, ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন শহরে ও মেলায় চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন। হীরালাল সেন শুধু চলচ্চিত্র প্রদর্শকই ছিলেন না, তিনি ‘এডওয়ার্ডস অ্যান্টি ম্যালেরিয়া স্পেসিফিক’, ‘জবাকুসুম তৈল’, ‘সালসা পিলাও’ নামে তিনটি বিজ্ঞাপন চিত্র, সম্রাট পঞ্চম জর্জের রাজ্যাভিষেক এবং বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদ মিছিল ও শোভাযাত্রার ওপর প্রামাণ্যচিত্রসহ ১৯০১ থেকে ১৯১২ সালের মধ্যে ১২টি কাহিনী চিত্র, ১০টি সংবাদচিত্র এবং ৩টি প্রচারচিত্র নির্মাণ করেন। এ সব ছবির দৈর্ঘ্য ছিল ৫০ থেকে ২৫০ ফুট। তাঁর আগে এ উপমহাদেশে আর কেউ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন নাই, তাই দাদাভাই ফালকে নন, বঙ্গসন্তান হীরালাল সেনই ভারতীয় উপমহাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের জনক। কিন্তু চলচ্চিত্র শিল্প বিকাশের ঊষালগ্নেই শিহরণ লাগলেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প বিশ্বচলচ্চিত্র শিল্পের অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি বিভিন্ন রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক ও ঐতিহাসিক কারণে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ দেশের চলচ্চিত্র শিল্প হয়তো বিশ্বমানে পৌঁছে যেত এতদিনে।

ঢাকায় চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রথম পরীক্ষামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেন নবাব পরিবারের কয়েকজন তরুণ - খাজা আজমল, খাজা আজাদ, খাজা আদেল, খাজা নসরুল্লাহ, খাজা জহির আর এদের সাথে যুক্ত ছিলেন জগন্নাথ কলেজের অম্বুজ গুপ্ত, আব্দুস সোবহান এবং আরো কয়েকজন। তাদের সে ছবির নাম ‘সুকুমারী’। এতে নায়িকা সেজেছিলেন একজন পুরুষ - আব্দুস সোবহান। এ গ্রুপের উদ্যোগে নির্মিত সফল প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ‘শেষ চুম্বন’ (দি লাস্ট কিস)। সে সমযে ঢাকার বাইরেও কতিপয় ব্যক্তি অভিনয় ও অন্যান্য সূত্রে চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রের সাথে সংযুক্ত হয়েছিলেন রোকেয়া খাতুন, দলিল আহমেদ, আব্বাস উদ্দিন আহমদ, ওবায়েদ-উল হক, উদয়ন চৌধুরী, ফতেহ লোহানী, বনানী চৌধুরী প্রমুখ। ত্রিশের দশকে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্রতী হয়েছিলেন। এমনকি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথও তাঁর জীবনের শেষদিকে চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, তাঁরা এ বিষয়ে যথেষ্ট মনোনিবেশ করতে পারেন নাই, পারলে হয়ত আমরা বিশ্বমানের অনেক বাংলা চলচ্চিত্রের দেখা পেতাম।

ঢাকার চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, খান আতাউর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ফরিদপুরের মোহন মিয়া (লাল মিয়া) প্রমুখের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এদেশে চলচ্চিত্র শিল্প বিকাশে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে ৩ এপ্রিল তদানীন্তন প্রাদেশিক পরিষদে বিল উত্থাপন করে ‘চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন’ (এফডিসি) প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেন। আব্দুল জব্বার খান, আবুল কালাম শামসুদ্দিন, নাজীর আহমদ, আবুল খায়ের প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ ঢকায় ইপিএফডিসি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জনসাধারণ, নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীদের অব্যাহত দাবির মুখে ১৯৫৭ সালে ৩ এপ্রিল সংসদে পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন বিল পাশ হলে এফডিসিকে কেন্দ্র করে এদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের সংগঠিত উদ্যোগ শুরু হয়। তার পর থেকে ঢাকায় চলচ্চিত্র শিল্পের এক শক্ত বুনিয়াদ গড়ে ওঠে। মুখ ও মুখোশ, আসিয়া, আকাশ আর মাটি, জাগো হুয়া সাভেরা, মাটির পাহাড়, এদেশ তোমার আমার, রাজধানীর বুকে, কখনো আসেনি, সূর্যস্নান, কাঁচের দেয়াল, নদী ও নারী এবং আরও পরে সুতরাং, জীবন থেকে নেওয়া ইত্যাদি কাহিনী নির্ভর বাণিজ্যিক ছবি নির্মাণের মধ্য দিয়ে কিছুটা সংগঠিত হয়ে ওঠে ঢাকার চলচ্চিত্র। কিন্তু একই সময়ে বাণিজ্যিক স্বার্থ আর মেধাহীন অনুকরণপ্রিয়তার কারণে স্থূল চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষয়রোগ ঢাকার চলচ্চিত্রকে পেয়ে বসে।

ঢাকার চলচ্চিত্রে শিক্ষিত তরুণ মধ্যবিত্তের আগমন ঘটে ষাটের দশকের শেষদিকে, যাদের হাতে বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র রূপ পরিগ্রহ করতে শুরু করে। ষাটের দশকে জহির রায়হান, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, কবির চৌধুরী, ওয়াহিদুল হক, আলমগীর কবির, কলিম শরাফী, মাহবুব জামিল প্রমুখ বরেণ্য ব্যক্তিদের দেখা যায় সিনেক্লাব, ফিল্ম সোসাইটি ইত্যাদি সংগঠনের নেতৃত্বদানকারী হিসেবে।

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে অভিষেক ঘটে যে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের সেই নতুন দেশে নতুন প্রজন্মের চলচ্চিত্র নির্মাতারাই পরবর্তীতে এদেশে বিকাশমান বিকল্প চলচ্চিত্র ধারা গড়ে তোলেন। সামাজিক সম্ভাবনা, মুক্তিযুদ্ধ, প্রগতি, গণমুক্তির বিষয়ে অঙ্গীকার নিয়ে তাঁরা চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে এসেছেন। বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র কর্মীদের এই আন্দোলন ও প্রচেষ্টার ফলে এদেশে একটি ফিল্ম আর্কাইভ গড়ে উঠেছে। অপর পক্ষে মূলধারা নামে এফডিসি কেন্দ্রিক বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্র এদেশে কিছু হাতেগোণা ব্যতিক্রম ছাড়া ক্রমেই হয়েছে দিশাহারা ও লক্ষ্যচ্যুত। ফলে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সৃষ্ট অভূতপূর্ব শিল্পসম্ভাবনা থেকে দেশের মানুষ বঞ্চিত হলো। গণবিনোদনের অপার সম্ভানাময় এ শিল্পখাতটি আজ তাই মৃত্যুপথযাত্রী।

আমরা জানি, ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ চলার সময়ই শুরু হয়েছিল এক নতুন ধারার চলচ্চিত্রের পথ চলা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে নির্মিত হয় ‘স্টপ জেনোসাইড’। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যা ও শরণার্থীদের মৃত্যুর প্রতিরোধ স্পৃহার ওপর ভিত্তি করে এ ছবিটি নির্মিত হয়েছে, যা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দেয়। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে গড়ে ওঠে বিশ্ব জনমত। স্বাধীনতার পর নির্মিত হয় একগুচ্ছ মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও আমাদের চলচ্চিত্রে জীবনঘনিষ্ঠ সমাজ বাস্তবতা দেখতে চেয়েছিলেন দেশের মানুষ ও বিশ্ববাসী। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর একের পর এক এ দেশে নির্মিত হয়েছে মুনাফা অর্জনকারী ফর্মুলাভিত্তিক নকল চলচ্চিত্র। এসব চলচ্চিত্রে মানুষ সমাজ বাস্তবতার স্পর্শ পায়নি। ষাটের দশকে আমাদের দেশের সোনালী দিনের চলচ্চিত্র যেন নির্বাসিত হয় কালো অন্ধকারে। অবশ্য আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে একদল তরুণ নির্মাতা সামাজিক বাস্তবতাকে আবারো সেলুলয়েডের ফিতায় তুলে ধরেন। তারা দেশে নতুন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহী হন। চলচ্চিত্র সংসদের আন্দোলনের পটভূমিতে এ ধারা দেশে নান্দনিক ধারার অনেক চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছে। কিন্তু এ ব্যতিক্রমটুকু ছাড়া দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের অন্ধকার কাটেনি।

তরুণদের মনে স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে হবে
দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের অন্ধকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে। আমাদের চলচ্চিত্র যেন দেশের গণমানুষের জীবন, স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে ওঠে সে বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। উন্নত ও আলোকিত চলচ্চিত্র নির্মাণ করে তা দেশময় ছড়িয়ে দিতে হবে।

এক সময় প্রত্যেক বাঙালি তরুণের মনে যেমন কবিতা লেখার স্বপ্ন ছিল। তাই আমরা সাহিত্যে এশিয়ার মধ্যে প্রথম এবং সারা বিশ্বে অশ্বেতাঙ্গ হিসেবে প্রথম নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে পেয়েছিলাম। তেমনি এখন বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণ-তরুণীর বুকে ঘুমিয়ে আছে স্বপ্নের চলচ্চিত্র নির্মাণের বাসনা। তাদের সে বাসনা পূরণের সুযোগ করে দিতে হবে। তাই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ও স্বপ্ন বুকে নিয়ে সকলে মিলে জাতীয় স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একসাথে কাজ করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গণে এফডিসিকেন্দ্রিক ও এফডিসিবহির্ভূত চলচ্চিত্রকারদের মধ্যকার বিভাজন রেখা বিলীন করে দিতে হবে কারণ শেষ বিচারে উন্নতমানের ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণই চূড়ান্ত বিবেচ্য হওয়া উচিত।

আমাদের মনে রাখতে হবে, বিদেশে প্রায় এক কোটি বাঙালি বসবাস করেন। তাদের কথাও মাথায় রেখে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে। বিদেশে দেশীয় চলচ্চিত্র উৎসব করার বিষয়ও চিন্তা করা যেতে পারে। শিল্পসম্মত ও প্রতিনিধিত্বমূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং রুচিশীল দর্শক সৃষ্টিতে চলচ্চিত্রের পদ্ধতিগত অধ্যয়ন, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রদর্শনীর যাবতীয় সুযোগ সম্বলিত আধুনিক ও পূর্ণাঙ্গ ফিল্ম ইনস্টিটিউট, ফিল্ম আর্কাইভ, ফিল্ম সেন্টার, ফিল্ম মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলে দেশীয় চলচ্চিত্রে রুগ্‌ণ দশা ঘুচে যাবে। এসব সুবিধা শুধু রাজধানীতে থাকলে চলবে না, দেশের প্রত্যন্ত— অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গণমুখী কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ভালো ছবির ব্যাপারে ইতিবাচক প্রচারণা এবং খারাপ ছবির বিপক্ষে সামাজিক প্রতিরোধ তৈরিতে গণমাধ্যমকে আরও সোচ্চার হতে হবে। এজন্য সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র আন্দোলন গড়ে তোলা এবং চলচ্চিত্র সাক্ষরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে চলচ্চিত্র অধ্যয়নের ব্যাপক সুযোগ তৈরির কথা চিন্তা করা যেতে পারে।

বাংলাদেশের সকল সিনেমা হলে পাশাপাশি সনাতন ও ডিজিটাল পদ্ধতির চলচ্চিত্র প্রদর্শনের সুযোগ তৈরি করতে হবে। কারণ প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে নির্মাতারা অনেকেই এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন। এসব চলচ্চিত্র প্রদর্শনের সুযোগ সৃষ্টি করতে পুরনো হলগুলোর সংস্কার সাধন ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রদর্শন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। সিনেমা হলগুলো যাতে স্বাস্থ্যসম্মত, উন্নত ও নিরাপদ হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি জেলা সদরে নতুন আঙ্গিকে অন্ততপক্ষে একটি আধুনিক ডিজিটাল সিনেমা হল তৈরি করার বিষয় বিবেচনা করতে হবে।

জাতীয় ও বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস
দেশীয় চলচ্চিত্রের অবক্ষয়ের এ সঙ্কটময় সময়ে যুগস্রষ্টা নির্মাতা, অভিজ্ঞ, দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ চলচ্চিত্র শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজনীয হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশার কথা ঢাকাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য বড় শহরেও আজ চলচ্চিত্র শিক্ষার অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিভাগ চালু হয়েছে। চলচ্চিত্র বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণকারী তরুণদের অনেকে প্রত্যক্ষভাবে চলচ্চিত্র শিল্পের বিভিন্ন শাখার পাশাপাশি সম্প্রতি গড়ে ওঠা অনেক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে কাজ করছেন। সম্প্রতি সরকারি অর্থায়নে ‘চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট’ খোলার বিল মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। সবচেয়ে খুশির খবর সরকার প্রতি বছর ৩ এপ্রিলকে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসেই এটা এ ধরনের একমাত্র ঘটনা।

শুরুতে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে প্রাপ্ত তথ্যমতে দেখা যায়, বাংলাদেশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট (চলচ্চিত্র শিক্ষক তানভীর মোকাম্মেলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান)-এর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন’ (BFIAA) ২০০৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সর্বপ্রথম ‘বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস’ উদযাপন করে। অনুষ্ঠানে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, তানভীর মোকাম্মেল, তারেক মাসুদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। আমি নিজে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে একটি ‘বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবসের তাৎপর্য ও বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক প্রবন্ধ (জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ নামে রচিত) পাঠ করি সে অনুষ্ঠানে। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর ‘বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস’ উদযাপনের উদ্যোগ ও কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ জন্য পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তন ভাড়া নেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে আয়োজিত সেমিনারে শর্ট ফিল্ম ফোরামের নেতা জাহিদুর রহিম অঞ্জনকে একটি প্রবন্ধ লেখার অনুরোধ জানানো হয়। অনুষ্ঠান আয়োজনের শেষ পর্যায়ে চিহ্নিত হয়, এ ধরনের কোনো দিবস ইউনেস্কো তথা বিশ্বসংস্থা জাতিসংঘের তালিকাভুক্ত নেই। শর্ট ফিল্ম ফোরামের নেতৃবৃন্দ বিষয়টি ফিল্ম আর্কাইভ কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়। এ বিষয়ে তৃতীয় উদ্যোগ আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটির পক্ষ থেকে। তারা ২০০৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে ‘বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস’ উদযাপন করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী। চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক হিসেবে আমি নিজে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি নাহাদ-উল কাশেম। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে আমরা উক্ত সোসাইটিকে বাংলা চলচ্চিত্রের একটি পোস্টার প্রদর্শনী আয়োজনেও সহায়তা করেছিলাম। আমার জানা মতে প্রতি বছর ২৮ ডিসেম্বর নিজেদের মতো করে ‘বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস’ উদযাপন করার ধারা আজও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটি অব্যাহত রেখেছে। এ উদ্যোগটি লালন করা প্রয়োজন। ক্রমান্বয়ে তা সরকার, সকল চলচ্চিত্র সংগঠন ও সংস্থার মধ্যে সঞ্চালিত করতে হবে। প্রথমে দেশের সর্বত্র এবং কালের ব্যপ্ত পরিসরে তা বাংলাদেশ থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশই হবে এ উদ্যোগের চালিকা শক্তি। একদিন ২৮ ডিসেম্বর সারা দুনিয়ায় ‘বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস’ হিসেবে উদযাপিত হবে এ স্বপ্ন আজ আর অলীক কল্পনা নয়।

উপসংহার
বাংলাদেশে বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন করা আরেকটি কারণে খুবই প্রাসঙ্গিক। তা হলো ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বুকের রক্ত দিয়ে বিশ্বে মাতৃভাষার মর্যাদা ও দাবি প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন একমাত্র বাঙালিদের দ্বারাই সম্ভব হয়েছিল। আজ সারা পৃথিবীতে তাই ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে শ্রদ্ধার সাথে পালিত হয়। এ ক্ষেত্রে বাঙালিরাই বিশ্ববাসীকে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাই বিশ্বের কোথাও যা হয় নাই, বাংলাদেশ আবারও তা করে দেখাবে। সংস্কৃতির নতুন শিশু, চলচ্চিত্রকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে, বিশ্বসভায় চলচ্চিত্র ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় ২৮ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘বিশ্ব চলচ্চিত্র দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের যে অভিযান তা বাংলাদেশ থেকেই শুরু হলো এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন : লেখক ও গবেষক
[email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।