ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

রুখতে হবে অমানুষদের

ড. আবুল বাসার, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৩
রুখতে হবে অমানুষদের

আমি নিজে পারিনি একজন মানুষেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে। আর এ কারণেই, যারা উদ্যোক্তা এবং অন্যের কর্মসংস্থান করেন, তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতাবোধ অনেক।

কিন্ত আজ আমি তাদেরই এক অংশের অমানবিকতা, অবিমৃষ্যকারিতা, স্বার্থপরতা দেখে যারপরনাই বিস্মিত, ব্যথিত, ক্ষুব্ধ এবং ক্ষিপ্ত।

সাভারে লাশ হয়ে পড়ে আছে যে জমিলা কিংবা বিমলা সে আমার বোন। যে গজনফর আলী কিংবা রমেশ সেন হঠাৎ কংক্রিটের নীচে চাপা পড়ে আমাদের প্রতি রাগ আর ক্ষোভে আমাদের প্রতি শেষ গজরানি আর ধিক্কারটুকুও দেয়ার সু্যোগও পায়নি, সে আমার ভাই। ধ্বংসস্তুপের নীচে যারা জীবিত আটকা  পড়ে আছে তারা আমার আত্মার আত্মীয়, আমার বিবেকের দংশন। যে সমাজ এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা আমারই অনুজ এবং অগ্রজকে মৃত্যুকূপে নিক্ষেপ করেছে, আমি সেই সমাজ এবং রাষ্ট্রের অংশ, আর তাই অপরাধী।  

অপরাধী এজন্য যে, দিনের পর দিন যখন এ খেটে খাওয়া মানুষগুলো মানবেতর পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হয়েছে, আমরা তখন নির্বিকার থেকেছি। ওরা ঠিকমতো বেতনা না পেয়ে অভূক্ত থেকেছে, বাড়িওয়ালার ভাড়া ঠিক সময়ে দিতে পারেনি বলে গালি শুনেছে। আর এসব সইতে না পেরে যখন রাস্তায় নেমেছে, তখন পুলিশ ওদের পিটিয়েছে। আমরা নির্বিকার থেকেছি।

ওরা আগুনে পুড়েছে, মরেছে। আমরা আগুনের কারণ নিয়ে গালগল্প সাজিয়েছি। আর যে লোভী মালিকের অগ্নি-নির্বাপণ সংক্রান্ত নিয়ম নীতি না মানার জন্য এতগুলো মানুষ মারা গেলো, সে থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ নিয়ে কেউ কথা বলেনি- রাজনীতিবিদ, টকশোর বাগ্মী-বক্তারা, তৎপর মিডিয়া--- কেউ না। আলোর নাম নিয়ে যারা ‘বদলে যাই’ এর সওদা করে যাচ্ছে, সেই পত্রিকায় একবার এ বিষয়ে কলাম পাঠিয়েছিলাম। ছাপায়নি।

আমাদের নীরবতার কারণেই গতকাল কিছু অমানুষ নিরাপদ নয় জেনেও জোর করে বিভিন্ন কলা-কৌশলে শ্রমজীবী ভাই-বোনদের একটি ফাটল ধরা বিল্ডিংয়ে কাজে যোগ দিতে বাধ্য করে। আজ তাদের অনেকে চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। আর যারা বেঁচে আছেন, তাদের জীবন এবং জীবিকা বিপন্ন। কেবল অমানুষই পারে মানুষের এমন পরিণতি ঘটাতে।  
              
এ সম্মিলিত নীরবতা অপরাধ। এ অপরাধের বিরুদ্ধে দরকার সামাজিক আন্দোলন। রাষ্ট্র এবং সমাজের শক্তিশালী অংশের সহায়তা নিয়ে সমাজের একটি অংশ শ্রমজীবী মানুষের গণমৃত্যুর আয়োজন করবে, তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার বিষয়টি শুধুমাত্র শ্রমিক আন্দোলনের বিষয় নয়। বিষয়টি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। আর এ জন্য এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এখনই। ভবিষ্যতের কোনো প্রজন্ম যেন আমাদের অর্থগৃধ্নু, অমানবিক, এবং অপরাধের দোসর হিসাবে চিহ্নিত না করতে পারে সেই জন্যই আমাদের এখনি রুখে দিতে হবে আমাদের মধ্যেই এমন বৈশিষ্ট্যের মানুষগুলোকে। আর সেই আন্দোলন শুরু করতে হবেই এখনই, কোনো এক মানবিক চত্বর থেকে।

লেখক: ড. আবুল বাসার, ইমেইলঃ [email protected]
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।