ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার ধরে রাখতে হবে

মোহাম্মদ আল-আমীন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৭ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৩
মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার ধরে রাখতে হবে

রিয়াদ: বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। এখানে বৈধ-অবৈধ মিলে প্রায় ২৮লক্ষ বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত।

এক সময় এখানে বাংলাদেশিদের কদর থাকলেও নানান কারণে সেটা কমতে থাকে। একপর্যায়ে সৌদি কতৃপক্ষ বাংলাদেশিদের উপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলাদেশিদের নতুন ভিসা ইস্যু এবং ইকামা (ওয়ার্ক পারমিট বা কাজ করার ছাড়পত্র) ট্রান্সফারসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা স্থগিত করে।
 
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সরকারের কাছে প্রবাসীদের চাওয়া ছিলো যেনো তাদের ইকামা ট্রান্সফার এবং পেশা পরিবর্তনের সুযোগ দেয় সৌদি কতৃপক্ষ। এনিয়ে দু-দেশের উচ্চ পর্যায়ে চলে বৈঠকের পর বৈঠক। পিছিয়ে থাকেনি দূতাবাসও।

সর্বশেষ চলতি মাসের ৫ তারিখ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি জেদ্দায় বৈঠক করেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী,শ্রমমন্ত্রী সহ সরকারের নীতিনির্ধারকের সাথে। বৈঠকের পর ডাঃ দিপু মনি সাংবাদিকদের জানান খুব শিগগিরই বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর আসছে। সপ্তাহ না পেরুতেই এলো  লক্ষ প্রবাসীর সেই কাঙ্ক্ষিত সুখবর। সেই সাথে বাড়তি কিছু অকল্পনীয় সুযোগ সুবিধাও।
 
গত শুক্রবার সৌদি সরকারের স্বরাষ্ট্র এবং শ্রমমন্ত্রীর যৌথ ব্রিফিং থেকে যা বোঝা গেল তারা আর এখানে কোনো অবৈধ শ্রমিক রাখতে চান না। বিশাল ছাড়ের মাধ্যমে সবাইকে বৈধ হওয়ার আহবান জানালো সৌদি কতৃপক্ষ।

২০০৮সালে ৬ এপ্রিলের আগে যারা উমরাহ বা হজ ভিসায় এখানে এসে স্থায়ীভাবে কাজে লেগেছেন তাদের থেকে শুরু করে ২০১৩ সালের ৮এপ্রিলের আগ পর্যন্ত যারাই অবৈধ হয়েছেন তারা সবাই এই সুযোগে বৈধ হতে পারবেন। এমনকি যারা কফিলের কাছ থেকে পালিয়ে আসার কারণে অথবা অন্য কোনো কারণে কফিল(নিয়োগকর্তা) তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে রেখেছেন তারাও অন্যত্র স্থানান্তর হয়ে বৈধ হতে পারবেন।

কেউ যদি বৈধ হতে না চান তাহলে কোনো ধরনের জরিমানা ছাড়া বিনা বাধায় নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে পারবেন। এই সময় দুই মাস কার্যকর থাকবে। এর পরেও কেউ এখানে অবৈধভাবে ধরা পড়লে ১লক্ষ রিয়াল জরিমানা এবং দুই বছর জেলে খেটে দেশে ফিরতে হবে।

বাংলাদেশিদের সফলতায় যেমন বিদেশে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয় ঠিক তেমনি প্রবাসে এসে দুই একজনের অপকর্মের দায়দায়িত্ব বর্তায় পুরো জাতির ঘাড়ে। একজনের অপকর্মের কারণে নষ্ট হয় লক্ষ জনের কর্মস্থল, নষ্ট হয় বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম।
 
মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশিদের জন্য আঁধার কেটে আলো আসতে শুরু করছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর মালয়েশিয়াও শ্রমিক নেয়া শুরু করেছে। সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সৌদিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। দুবাই, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেরও বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ করা যাচ্ছে।

এই অবস্থায় সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে অতীত রেকর্ড না জেনে কোনো শ্রমিককে বিদেশে পাঠানো যাবে না। অনেক সময় দেখা যায় দেশের দাগি আসামিরা নিজেদের বাঁচানোর জন্য রাতের আঁধারে বিদেশে পাড়ি জমায় এবং দেশের মতো বিদেশে এসেও চালিয়ে যায় অপকর্ম।

অপর দিকে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে শপথ নিতে হবে  তারা যেদেশে থাকবে সেদেশের আইন-কানুনের প্রতি শতভাগ শ্রদ্ধাশীল হবে এবং অতিরিক্ত টাকার আশায় এমন কোনো কাজ করা যাবে না যা ঐদেশের আইনের চোখে অপরাধমূলক কাজ। নিজেরা ঝামেলায় না জড়িয়ে যেকোনো আইনি সমস্যার সমধান করতে শরণাপন্ন হতে স্থানীয় দূতাবাস বা কনস্যুলেট অফিসে।
 
তাহলেই বাংলাদেশি শ্রমিকরা ফিরে পাবে তার হারানো ঐতিহ্য আর বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাঁড়াবে লাল সবুজ পতাকার প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশ। সেই সাথে মজবুত হবে রেমিটেন্সের খুঁটি।  

লেখকঃ সৌদি আরব করেসপন্ডেন্ট
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।