ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

রায় নিয়ে বোবার ভূমিকায় বিএনপি

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৩
রায় নিয়ে বোবার ভূমিকায় বিএনপি

বোবার কোনো শত্রু নেই। এটা আমাদের সবার জানা।

বিএনপি এখন সচেতনভাবে এই বোবা অবস্থায়। তারা মূলত জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের রায় নিয়ে বোবা থেকেছে।

গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট বিভাগ জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করার পর  বোবা সেজেছে বিএনপি। এটা তাদের রাজনৈতিক অবস্থান। এতে যা প্রমাণিত হয় তা হলো তারা চুপ থেকে জনগণের মাঝে একধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে যে, এতে তাদের কিছু যায় আসে না। কিন্তু অতীত বলে এদেশে জামায়াতের উত্থানে প্রধান ও মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন জিয়াউর রহমান নিজে ও তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি।

রাজাকারকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন জিয়া, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশে চাকরি দিয়ে পুনর্বাসিত করেছিলেন জিয়া। গোলাম আযমকে এদেশে আসতে দিয়েছেন জিয়া, বিএনপিনেত্রী সেই ধারাই অব্যাহত রেখেছেন নানাভাবে, তাদের সাথে জোট করেছেন এবং সে-জোট আজ বড় হয়ে নামকাওয়াস্তে দল নিয়ে ১৮ দলীয় জোট হয়েছে। বিএনপিনেত্রী রোড র্মাচ করেছেন সেখানে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী দলের মুক্তি চেয়েছেন, সরাসরি বলেছেন, তারা ’৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে কোনো অপরাধ করেনি। বলেছেন তারা যুদ্ধাপরাধী নয়।

সাকা চৌধুরী তাদের দলের নেতা, তার মুক্তিও বিএনপি নেত্রী চেয়েছেন। রোডমার্চ লংমার্চ, জনসভা, ঢাকা অবরোধ প্রতিটি কর্মসূচিতে আমরা দেখেছি সভা বা মিছিলের অগ্রভাগে ছিলো জামায়াত-শিবির।

জামায়াত যখন দেশব্যাপী তাণ্ডব চালায় তখন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাদের সাথে ছিল বিএনপি। এটা তারা অস্বীকার করলেও কেউ মানবে না। হরতালে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। আবার পাশাপাশি জামায়াতের সাথে থেকে এই আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল মানসম্মত নয় বলে অপপ্রচারে চালিয়েছে। এখন বলছে ক্ষমতায় গেলে তারা এই ট্রাইবুন্যাল ও বিচার বিবেচনা করেও দেখতে পারে। এর এই মানেই  দাঁড়ায় যে, তারা হয়তো বিচার করবে না।

বর্তমানে বিএনপি দ্বিমুখী অবস্থান নিয়েছে, একদিকে ভেতরে ভেতরে এবং প্রকাশ্যে জোটের কর্মসূচিতে জামায়াতকে সাথে রাখছে, ভাঙচুরে অংশ নিচ্ছে ও অন্যদিকে আবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ে প্রতিক্রিয়াহীন থাকছে। এটা এক ধরনের রাজনৈতিক হার বলেই তাদের মেনে নিতে হবে। এক্ষেত্রে কৌশলী হওয়ার অর্থ হচ্ছে: আমরা যেভাবেই হোক জামায়াতের সাথে থাকবো ও তাদের থেকে সুবিধা নেবো বা দেবো। ১৮ দলীয় জোট মূলত তা-ই প্রমাণ করে; আর সাথে আছে নব্য গজিয়ে ওঠা হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতের কর্মসূচিতে বিএনপিনেত্রী ঢাকাবাসীসহ তার দলের নেতাকর্মীদের হেফাজতে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন যা ব্যর্থ হয়। কিন্তু ঢাকাকে জামায়াত-বিএনপি-হেফাজত মিলে যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরে পরিণত করে, কোরআন পোড়ায়, মসজিদে আগুন দেয়, কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট করে। এর দায় বিএনপি জামায়াত ও হেফাজতের। মুসলামান দাবি করে কেউ আর যাই হোক মসজিদে আগুন বা কোরআন শরীফ পোড়াতে পারে না। এটা কোনো ইসলাম নয় বরং এটা শান্তির ধর্ম ইসলামের অবমাননা ও পাপ। সে সময় বিএনপি সরব থেকেছে, ১৩ দফাকে তারা পরোক্ষভাবে সমর্থন করে। তাদের এমপিরা সংসদে ১৩ দফার পক্ষে বক্তব্য দিয়েছে।

জামায়াত ও হেফাজত নিয়ে তারা ৫টি সিটি করপোরেশনে অনেক অপপ্রচার চালিয়ে তার ফল ঘরে তুলতে পেরেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও জামাত আলবদর রাজাকার আল শামসরা একই ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছিল। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সবসময়ই ধর্মবিরোধিতার দায় দিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়। গণতন্ত্রে অপপ্রচার অপরাজনীতির রূপ মাত্র, বিএনপি জামায়াতের reactionary বা প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির অংশ হচ্ছে অপপ্রচার যাতে অবশ্যই সিদ্ধহস্ত বিএনপি জামায়াত।

এমকে আনোয়ার বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে আজান বন্ধ হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সকল প্রকার অপপ্রচারে বা ধর্মকে ব্যবহার করতে বিএনপি-জামায়াত সবসময় একাট্টা হয়ে একইভাবে কাজ করে থাকে, কিন্তু আজ এই প্রেমে কেন ভাটা, কেন বিএনপি রায় নিয়ে চুপ থাকে?

এই চুপ থাকাও প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির অংশ। কারণ বিএনপি এই জামায়াত ইস্যুতে নিশ্চুপ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, কেউ বা কোনো দল যদি এই নিয়ে কোনো ভুল কথা বলে তখন তাকে সামনে এনে বিএনপি প্রতিক্রিয়া দেখাবে যা তাদের অপকৌশল মাত্র, এ ফাদেঁ পা দেওয়া কারোরই উচিত হবে না।

যুদ্ধাপরীধের সাথে তাদের ঐতিহাসিকভাবেই অচ্ছেদ্য সম্পর্ক, তা যেকোনোভাবে সামনে আসবেই মানুষ টের পাবেই, তাই এই রায় বা নিবন্ধন বাতিলে বিএনপি রাজনৈতিক ফায়দা লোটার যে পথ বেছে নিয়েছে তা মানুষ বুঝতে পারে, মূলত যুদ্ধাপরাধীদের রায় ও জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল উভয় তাদের জন্য ক্ষতিকর ও গলার কাঁটার মতো। বিএনপি এই অবস্থা থেকে চাইলেও বেরিয়ে আসতে পারবে না।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকলেই প্রত্যাশা করে এই চেতনাকে বুকে নিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে আর এই উত্তরণে যারা প্রতিবন্ধক তাদের পরাজয় আমাদের কাম্য। আমাদের জয় হবেই হবে।

বিএনপি প্রতিক্রিয়া তাই দেখালেই কি আর না দেখাইলেই কি, বিএনপি জামায়াত ও যুদ্ধপরাধীদের পক্ষের ছিল আছে থাকবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
 
লেখক: পরিচালক, সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৩
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।