ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

দশম সংসদ ‘মিনি ভার্সন’ সংসদ?

মনোয়ার রুবেল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৩
দশম সংসদ ‘মিনি ভার্সন’ সংসদ? ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: ২৪ই জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন না হলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আরো নব্বই দিন সুযোগ পাবে নির্বাচন কমিশন। তবে সেক্ষেত্রে আয়োজনটি হবে অনেকটা ‘হিল্লা’ বিয়ের মতো।



১২৩ অনুচ্ছেদের তৃতীয় দফা মোতাবেক, মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। তবে ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩(খ) তে অনেকটা ‘হিল্লা বিয়ের’ ব্যবস্থা আছে। সেখানে লেখা আছে।

১২৩ অনুচ্ছেন ৩ দফা মোতাবেক-
সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে (খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে।

এবার ‘হিল্লা বিয়ের’ ব্যাপারে আসি। ২৪ই জানুয়ারির আগে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিলে মেয়াদের আগেই সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে মর্মে নির্বাচন কমিশন আরো ৯০ দিন সময় পাবেন। সংবিধানের বিধানটি শাব্দিক অর্থে বৈধ জ্ঞান করে রাষ্ট্রের শান্তি শৃঙ্খলা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে হিল্লা বিয়ের মতো একটি আয়োজন করা যেতে পারে। তবে এ নিয়ে আরো আইনগত তর্কবিতর্ক করা যায়। তবে যাই হোক বর্তমান সময়ে নির্বাচন না হলে পরবর্তী নব্বইদিন নাটকীয়ভাবে ম্যানেজ করা যেতেও পারে।

সুস্থ স্বাভাবিক জ্ঞান সম্পন্ন সকলে জানে যে, দেশ এখন আওয়ামী লীগের সংশোধিত সংবিধানের জালে আটকে গেছে। তবে কোন অবস্থায়ই তাদের সংশোধন আইনত অবৈধ বলার সুযোগ নেই। এই সংবিধানে এখন নির্বাচন অনিবার্য। কিন্তু সরকার ও বিরোধীদল পরস্পর মুখোমুখি অবস্থানে। সবাই শঙ্কিত ও উৎসুক- সংঘাতময় এ পরিস্থিতিতে কী হতে পারে সমাধান?

এ মুহূর্তে দুটি জিনিস হতে পারে। এক. সংসদ ভেঙে দেওয়া। তার আগে বিরোধীদল বা সরকারি দলকে ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে। শেখ হাসিনা ব্যতীত অন্য কাউকে সরকার প্রধান করতে হলে তাকে অবশ্যই সংসদ সদস্য হতে হবে। সংবিধান তা-ই বলে। ৩শ’ জন সাংসদের মধ্যে একজন সর্বজনগ্রহণযোগ্য সম্মানিত ব্যক্তি বাছাই করতে হবে।

ধরুন যদি শেখ হাসিনা ব্যতীত দুই দলের কাছে গ্রহণযোগ্য সংসদ সদস্যকে সরকার প্রধান করার ব্যাপারে কোন ঐক্যমতে আসা যায় তখন সংবিধানের আরো ৯০ দিনের সুযোগ খোঁজার আয়োজন জরুরি হয়ে পড়বে। পুরো ব্যাপারটা দাঁড়াবে এমন, যে ওই সরকার হবে নির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। শুধু শেখ হাসিনা থাকবেন না এই যা। যে ১১ জন ব্যক্তি সরকার পরিচালনা করবেন (১ প্রধানমন্ত্রী +১০ মন্ত্রী) তারা নৈতিক অবস্থান থেকে নির্বাচনে না দাঁড়ালে ভালো হয়। শুধুমাত্র দেশ ও মাতৃকার প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে তারা এই নির্বাচন পরিচালনা করতে পারেন।

দুই. একটি বিষয় হলো যেহেতু বর্তমান সংবিধান মোতাবেক তত্ত্বাবধায়কের  সুযোগ নেই। তত্ত্বাবধায়ক আনতে হলে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক আনতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন একটি নির্বাচিত সংসদ। তাই যাচ্ছেতাই ভাবে হলেও এই নির্বাচনে বিএনপির মৌন সম্মতি থাকতে হবে। নির্বাচনের পরে ১ বছরের সময়ের মধ্যে (আরো বেশিও হতে পারে, কিংবা কম) সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক ফিরিয়ে আনতে হবে। দু’দলই আলোচনা এই সময়টা ঠিক করুক। এটা ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে আসার আর কোন বিকল্প নেই। এ পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগের আরো কিছুদিন সরকারে থাকার খায়েশ পূর্ণ হবে, বিএনপিরও তত্ত্বাবধায়কের আশা পূরণ হবে। তবে এক বছরের আগে নির্বাচন দেওয়া ঠিক হবে না। কেননা, একই বছরে দু’বার জাতীয় নির্বাচন করার মতো ধনী আমরা নই।  

এই সংকটে দু’পক্ষের একপক্ষকে ছাড় দিতেই হবে। প্রথম প্রস্তাবে হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে, এই পথ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এর পরিবর্তে একজন সংসদ সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে হবে। দ্বিতীয় বিকল্পে দশম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিকে ছাড় দিতে হবে এবং কিছুটা সময়ও ছাড় দিতে হবে। আওয়ামী লীগ যদি এতে সম্মত হয় তবেই তত্ত্বাবধায়ক ফিরে আসতে পারে।

গত কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের নেতাদের আলোচনা থেকে পাওয়া আভাস অনুযায়ী  দ্বিতীয় বিকল্পটিই গ্রহণযোগ্য বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় ওবায়দুল কাদের বলেছেন- দশম নয় একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এছাড়া বিএনপিরও বোধহয় আর কোনো রাস্তা খোলা নেই।

অনেকে টকশোতে গলা ফাটান এখুনি এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় তাদের বক্তব্য অসার। কেন না রাষ্ট্র চলে আইনের ভিত্তিতে, গলাবাজিতে নয়। আইনে যখন যা আছে তাই মানতে হয়। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে। এছাড়া বিকল্প নেই। এজন্য আইনতভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। অনির্বাচিত ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী  হওয়ার সুযোগ বর্তমান বিধানে নেই।  

অতএব বিধান সংশোধন জরুরি। আর সেটা হতে গেলে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে এবং সেটা দশম সংসদ নির্বাচনের পরেই।

যদি সেটাই হয়, তবে সময় বিবেচনায় হয়তো আমরা একটি ‘মিনিভার্সন’ সংসদ পেতে যাচ্ছি।

লেখক: মনোয়ার রুবেল
ইমেইল- [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।