ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মুক্তমত

বঙ্গবন্ধু: মহাকালের মহামানব ।। প্রফেসর মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৪
বঙ্গবন্ধু: মহাকালের মহামানব ।। প্রফেসর মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৯তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে জাতির এই মহান সন্তানকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। সেই সঙ্গে অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে আমরা বঙ্গবন্ধু-পরিবারের শহীদ সদস্যদেরকেও স্মরণ করছি এবং সকলের প্রতি জানাচ্ছি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সম্মান।

কামনা করছি তাদের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি ও কল্যাণ।

বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। দুখিনী বাংলার স্বাধীনতা ও মুক্তির স্বপ্ন-পুরুষ। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের তিনি স্থপতি। বাঙালি জনগোষ্ঠীর শোষণ-বঞ্চনার মুক্তিদূত তিনি। পরাধীন মানুষের তিনি মুক্তিদাতা। বাংলার ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম মহামানব তিনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনোই তাঁর মতো মহান নেতা, মহামানব বাংলার সবুজ-শ্যামল প্রান্তরে দেখা যায়নি। বঙ্গবন্ধুর তুলনা বঙ্গবন্ধু নিজেই। তাঁর সঙ্গে তুলনা করা যায়, এমন আর কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায় না। বঙ্গবন্ধুর সত্ত্বা ও ব্যক্তিত্বের ছায়াপাত দেখতে পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রক্ত ও আদর্শের উত্তরাধিকার জননেত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে। জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং অসমাপ্ত কাজ শেষ করার মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর উপযুক্ত ডিজিটাল ও অগ্রসর বাংলাদেশের প্রতিচিত্র সফল করাই আজকে তাঁর একমাত্র ব্রত। বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের সংগ্রামের মূলমন্ত্র ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠাই আজ বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার অভীষ্ট লক্ষ্য।

এ কথা সকলেরই জানা যে, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীন বাংলাদেশে অন্ধকারের যুগ কায়েম করা হয়। সামরিক-বেসামরিক স্বৈরশাসন, নীতি ও আদর্শ বিচ্যুত রাজনীতির সূচনা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেও হত্যার চেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতা-বিরোধী, লুটেরাচক্রের অভয়ারণ্য। যারা সেদিন গণতান্ত্রিক আদর্শবাহী আওয়ামী লীগ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে রক্তাক্ত ষড়যন্ত্রের পথে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে, তারা শোষণে-লুণ্ঠনে বাংলাদেশকে জর্জরিত করেছিল। জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল। ভাতের ও ভোটের অধিকার হরণ করেছিল। দীর্ঘ অন্ধকার যুগের পর বঙ্গবন্ধু-কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জাতীয় দাবি ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার’ কার্যে মনোযোগী হয়। মানবতা-বিরোধী হত্যাকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত একাত্তরের ঘাতকদের প্রত্যক্ষ সহযোগিদের বিচারকার্য শুরু করা হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে উদ্যোগ চলছে জোর কদমে। দেশে খাদ্য-শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং কর্মসংস্থান বাড়িয়ে ক্ষুধা, দারিদ্র, বেকারত্ব নিমূর্লে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ আজ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে সম্মানের সঙ্গে মাথা-উঁচু করে আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভের সংগ্রামের সামনের কাতারে রয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সামনে উদারতা, উন্নয়ন, শান্তি ও কল্যাণের উজ্জ্বল মডেল। খাদ্য, কর্মসংস্থানের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী ও শিশু উন্নয়নের পথে সাফল্যজনকভাবে ক্রমঅগ্রসরমান একটি সম্ভাবনাময় দেশের নাম বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের আজকের অত্রযাত্রার পথে বার বার মনে পড়ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কথা। যেমন মনে পড়ে তাঁর সাহস জাগানিয়া বজ্রকণ্ঠ। ১৯৭১ সালে আমরা যখন রণাঙ্গণে প্রত্যক্ষভাবে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করছি জীবন বাজি রেখে, তখনও আশায় আর সাহসে বুক বেঁধেছিলাম বঙ্গবন্ধুর কথায়। পুরো জাতিকে সেদিন যুদ্ধের মাঠে অদৃশ্য নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। বিজয়ীর বেশে দেশে ফিরে জাতি গঠনের কাজেও নেমেছিলাম বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও প্রেরণায়। চট্টগ্রাম অঞ্চলে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে কাজ করার প্রেরণাও পেয়েছি মুজিবাদর্শের কাছ থেকে।

আজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানরূপে গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় আমাদের প্রধান অনুপ্রেরণা ও পৃষ্ঠপোষক আমার নেতা বঙ্গবন্ধু-কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমার সহকর্মী, ছাত্রগণ, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ, তথা স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধ-প্রগতিপন্থী আমরা সকলেই বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা পর্যন্ত প্রবহমান রাজনৈতিক আদর্শ ও ঐতিহ্যের পরম্পরার অবিচ্ছেদ্য অংশীদার। জানি, ১৯৭৫ সালের মতোই আমাদের মধ্যে লুকানো প্রতিবিপ্লবী আছে, গুপ্ত ষড়যন্ত্রী আছে, ক্ষমতালোভী চক্র আছে, স্বার্থবাদী গোষ্ঠী আছে, চাটুকারের দল আছে, বন্ধুবেশী অসংখ্য শত্রুও রয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি এটাও জানি যে, ব্যক্তিগত ত্যাগের সর্বোচ্চ অবদান, প্রতিনিয়ত সংগ্রাম আর আদর্শের পথে, সততার পথে শত শত অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ বঙ্গবন্ধু-কন্যাও আমার সামনে নেতৃত্বের আসনে আছেন। তিনি জাতির যে কোনো প্রয়োজনে, সঙ্কটে সঠিক নেতৃত্ব দিতে জানেন।
বাংলাদেশকে আর এ জাতিসত্ত্বাকে সকল প্রতিক্রিয়াশীল আঘাত থেকে বাঁচাতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এবারের ১৫ আগস্টে তাই বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃতে জাতীয়-শোককে জাতীয়-শক্তিতে পরিণত করে সকল প্রতিক্রিয়াশীল-শত্রুপক্ষীয় বাধা গুড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নেওয়া শপথ নিতে হবে।




লেখক: মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, ভাইস চ্যান্সেলর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়





বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৪  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।