ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

বিদেশ থেকে বলছি, দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনুন

সাজেদুল চৌধুরী রুবেল, আয়ারল্যান্ড থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৫
বিদেশ থেকে বলছি, দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনুন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আমার বড়ো ভাই ঢাকার একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন। কথা হল তার সঙ্গে।

বললেন, “আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে বেঁচে গেলাম। আগুন ধরিয়ে দেওয়া বাসটির যাত্রী হিসেবে প্রায় মরতে বসেছিলাম। স্বয়ং আল্লাহ এসে যেন রক্ষা করলেন। ”

ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু বিপুলের সঙ্গে কথা হলো। তার ভাষায়, “দুর্বৃত্তরা যা শুরু করেছে তাতে দেশে বসবাস করাটাই এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাতবিরাতে বাসায় ফিরতে হয়। জানিনা কখন যে কি ঘটে যায়! দোয়া রাখিস প্রতিদিন কাজ শেষে যেন বউবাচ্চাদের কাছে সহিসালামতে ফিরে আসতে পারি। ”

স্কুলবন্ধু মাসুম এখন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। শঙ্কা মিশ্রিত কণ্ঠে বলল, “বন্ধু বিদেশে আছিস সেই ভালো। আপাতত দেশে আসার নাম ভুলেও নিসনা। নিজ দেশে হলিডে কাটাতে এসে যদি সন্তানাদি নিয়ে অবরোধের আগুনে পুড়ে মরিস তা হবে গোটা দেশের জন্য কলঙ্কের। তার চেয়ে ভিনদেশে বসে বসে শুভ্র তুষার পড়ার যে দৃশ্য দেখছিস তাই ঢের ভালো!”

মামাতো ভাই মেহেদি হাসান। এম বি বি এস ডাক্তার। ময়মনসিংহের চড়পাড়া হসপিটালে কর্মরত। অনেকটা নিরাশ কণ্ঠেই বলল, “ দেশের এ পরিস্থিতির উত্তরণ না ঘটলে আমার মতো একজন ডাক্তারকেও যে কোনও সময় আহত রোগী হয়ে হসপিটালের বেডে শুতে হবেনা তার কোন গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবেনা। ”

অনুজপ্রতিম আকাশ। একটি জাতীয় দৈনিকের বিশেষ প্রতিনিধি। ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর, “ভাইয়া, জানটা সারাক্ষণ নিজের হাতে নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াই। তাই ভালো বলার অবকাশ কোথায়?”
ব্যবসায়ী ভগ্নিপতিতো কেঁদেই ফেললেন। “সরকারি বাহিনীর কড়া প্রহরার মাঝেই বিএনপি-জামাতের পাষণ্ডরা আমার দুটো গাড়িই জ্বালিয়ে দেয়। আমি এখন কি করবো কী করবো ভাইজান?”
       
একা আমার পরিবারের মানুষই এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, এভাবেই শঙ্কিত।

আর এ শঙ্কা, আতঙ্ক ও আহাজারি যে কেবল আমার ভাই-বন্ধু বা স্বজনদের মধ্যেই সীমিত তা নয়, বিরাজ করছে গোটা দেশের মানুষের মধ্যেই। কেবলমাত্র দেশটাকে যারা এই অবস্থায় নিয়ে গিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটতে চায় তারা ছাড়া দেশের অন্য সকল সাধারণ মানুষই এ অবস্থা থেকে মুক্তি চায়। শান্তিপূর্ণ ভাবে বাচতে চায়।

দেশের একজন নাগরিক হিসেবে তাদের এ চাওয়াটা নিশ্চয় অমূলক নয়। কিন্তু প্রশ্ন হল- নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ জীবনের গ্যারান্টি কে দেবে তাদের?

আন্দোলনের নামে যারা সন্ত্রাস ও রাহাজানি চালিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে গত তিন চার দিন আগে সরকারের তিন বাহিনীর প্রধান এক হয়ে কঠোর প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এর পরও কি দুর্বৃত্তদের দুর্বৃত্তায়ন থেমে রয়েছে? দেখা গেল এরপরদিনই ঢাকা শহরে দগ্ধ হল ইডেন কলেজের দুই ছাত্রী, পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে নিহত হল সোহাগ নামের এক ট্রাক হেল্পার। গত ৫ জানুয়ারি থেকে দেশ ব্যাপি যে হৃদয় বিদারক নৈরাজ্য চলছে আজ পর্যন্ত এর কোন কমতি দেখা যায়নি বরং বাড়ছে।

পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ সংশ্লিষ্ট ঘটনায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ জনকে প্রাণ হারাতে হয়েছে যাদের মধ্যে ২৫ জনই ছিল অরাজনৈতিক সাধারণ নাগরিক। ভাংচুর কড়া হয়েছে ২১ টি ও আগুনে পুড়ানো হয়েছে ২৬৭ টি যানবাহন। এসব ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও তাদের এ হরতাল-অবরোধের ফলে দেশের অর্থনীতির যে বারোটা বাজছে সে কথা আর বলার অবকাশ রাখেনা। ঢাকা চেম্বারের হিসেব অনুযায়ী একদিনের হরতাল বা অবরোধে ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় প্রায় এক হাজার ছয়শ কোটি টাকা। তাদের এ তথ্য যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে অদ্যাবধি অর্থাৎ এ সতের দিনে ক্ষতির পরিমান দাঁড়িয়েছে প্রায় সাতাশ হাজার দুশ কোটি টাকা যা কিনা পদ্মাসেতু নির্মাণের খরচকেও ছাড়িয়ে গেছে। এভাবে আর কিছুদিন চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতিতে যে লালবাতি জ্বলবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

যে আন্দোলন পুরো দেশ জুড়ে অশান্তির আগুন ছড়ায়, মানুষকে পুড়ে মারে, জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়, অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়, নিস্পাপ শিশুকেও বিদগ্ধ হওয়া থেকে রেহাই দেয়না তা আর যাই হোক কোন গণতান্ত্রিক আন্দোলন হতে পারেনা। অথচ এ ধরনের নির্মম আন্দোলনকেই অব্যাহত রাখার জন্য নির্দয় নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া।

কী নিষ্ঠুর নিয়তি! মানবতাবোধের বিন্দু পরিমান তোয়াক্কা না করে ক্ষমতায় যাওয়ার মোহে মরিয়া একজন। অন্য নেত্রী ক্ষমতায় টিকে থাকতে করে দিচ্ছেন এমন সন্ত্রাসের  সুযোগ। সামান্য জনসভা করতে দিতেও তার আপত্তি। গণতান্ত্রিক দেশে তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
 
বিএনপি নেত্রীকে অনুরোধ করবো, দয়া করে এ মরন খেলা থেকে বেরিয়ে আসুন। দোহাই আপনার, জীবনের এ সন্ধ্যা বেলায় নিজেকে আর কলঙ্কিত করবেননা।

আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া, দেশে সুষ্ঠু স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা আপনার সাংবিধানিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে ক্ষমতায় থাকা আপনার জন্যও সমীচিন নয়।

দুই নেত্রীকেই বলবো, যেমন করেই হোক দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনুন।   

সাজেদুল চৌধুরী রুবেল – আয়ারল্যান্ড প্রবাসী লেখক
[email protected]

বাংলাদেশ সময় ০৯৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।