খবরে প্রকাশ, সম্প্রতি গাজীপুরে ৩৫ জন জামায়াত শিবির-কর্মী ধরা পড়েছে। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা বাংলাদেশের ১৯টি জেলা থেকে আগত।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানিয়েছে, আগামী ১৬ জুন জামায়াত নেতা আলী-আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এর যুদ্ধাপরাধের মামলার আপিলের রায় হবে। তাই সারা দেশে ব্যাপক নাশকতা সৃষ্টির জন্য জামায়াত-শিবির প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে।
এরকম খবর অতীতেও অনেকবার পড়েছি, তাই এসব খবরে আজকাল আর তেমন আগ্রহ খুঁজে পাই না। কিন্তু ‘পরকালের পাসপোর্ট’ একটি অভিনব জিনিস, তাই আমার মধ্যে এ বিষয়ে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পরকালের পাসপোর্ট দেখতে অবিকল বাংলাদেশের পাসপোর্ট এর মতো। তার মানে এই চক্র বাংলাদেশের পাসপোর্ট বানাতে সক্ষম কিংবা তাদের সেই অভিজ্ঞতা আছে। মাথার মধ্যে নানান প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে; এই পাসপোর্ট কার জন্য? কি কাজে ব্যবহৃত হয় কিংবা হবে? আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের জন্য তৈরি করা হয়নি তো?
বেশ কয়েক বছর আগের একটি ঘটনা মনে পড়লো, একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী কিশোরের শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে; ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে; রক্তক্ষরণের ফলে যে কোনো সময় মৃত্যু হতে পারে। উদ্ধারকারীরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করছে, হঠাৎ জ্ঞান ফিরে পেলে সে জিজ্ঞেস করছে,
-আমি কোথায়? হুরপরীরা কই? হুজুরে কই?’
-কোন হুজুর?
-আমাগো মাদ্রাসার বড় হুজুর। টিফিন ক্যারিয়ারের বাটির মধ্যে বোমা দিয়া কইছে, ‘তুমি যাও, আমি আসতেছি, দেখা হবে বেহেস্তে...শীঘ্রই। ’
এসব কথা ভাবতে ভাবতে কল্পনায় সেই মৃত্যুপথযাত্রী অবুঝ কিশোরের মুখটি আবছা আবছা দেখতে পেলাম। তার জন্য ভীষণ মায়া হলো। এসব কিশোরের পরিচয় কি? তাদের ঠিকানা কোথায়? যদ্দুর জানি, তারা অধিকাংশই এতিম-মিসকিন। মা মারা গেছেন, বাবা দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় বিয়ে করেছেন। অথবা মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। তাই তাদের ঠিকানা লিল্লাহ-বোর্ডিং কিংবা কওমি মাদ্রাসায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেউ সমকামের শিকার, কেউবা বিক্রি হয়েছে কোনো-না-কোনো আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনাকারী্দের কাছে কিংবা কাউকে ব্যবহার করা হচ্ছে হেফাজতে ইসলামের মতো কর্মসূচিতে।
মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কবি’র সাথে কথা প্রসংগে বললাম ‘পরকালের পাসপোর্ট’ এর কথা। তিনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেয়া তো দূরের কথা, আমার মাথায় আরো কিছু নতুন প্রশ্ন ঢুকিয়ে দিলেন। তিনি বললেন,
-পরকালের পাসপোর্ট কথাটির মধ্যে ভুল আছে।
-কি রকম?
-পরকালের পাসপোর্ট বলতে কি বোঝায়? একটু চিন্তা করে দ্যাখেন।
-মানে?
-মানে, বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে আপনি কি করেন? বাংলাদেশের বাইরে অন্য কোনো দেশে যাওয়া-আসা করেন। এটা একটি আন্তর্জাতিক পরিচয়পত্র। যা বাংলাদেশ সরকার একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য (৫ বছর) দিয়ে থাকে।
-হু।
-তাহলে এবার বলেন, পরকালের পাসপোর্ট দিয়ে কি পরকালে যাওয়া-আসা করতে পারবেন? আপনি কি এটাকে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে যাওয়া-আসা মনে করেন?
-ভালো প্রশ্ন?
-আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আছে।
-বলেন, প্লিজ...
-‘পরকালের পাসপোর্ট’ কি ইহকাল থেকে কেউ পেতে পারে? বাংলাদেশের পাসপোর্ট পেতে হলে তো বাংলাদেশ থেকেই নিতে হয়। বাংলাদেশের পাসপোর্ট তো আপনি পাকিস্তান থেকে পাবেন না। বলেন, ঠিক বললাম কি না?
-ঠিকই বলেছেন।
-আরেকটি কথা...
-কি?
-এটা তো এক ধরনের শিরক করার শামিল।
-কি রকম?
-পরকালের পাসপোর্ট তো দিতে পারে একমাত্র আল্লাহ-রাব্বুল আল-আমীন। তিনিই কেবল কাউকে ইহকাল থেকে পরকালে এবং পরকাল থেকে ইহকালে যাওয়া-আসার পাসপোর্ট কিংবা ভিসা দিতে পারেন, আর কেউ নয়। কারণ তিনিই সর্বশক্তিমান।
-কথা সত্য।
-এখন আপনি আমারে বলেন, পরকালের পাসপোর্ট দেয়ার অধিকার কিংবা ডিলারশীপ জামায়াত শিবিরকে কে দিল? তারা কি আল্লাহর সাথে শিরক করলো না?
আমি একদম চুপ মেরে গেলাম। কারণ এসব প্রশ্নের উত্তর আমি কিভাবে দেব? উত্তর তো আমার দেয়ার কথা না।
লেখকঃ কথাসাহিত্যিক, একাডেমিক, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৫
জেডএম