মানবসভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানগুলোর একটি হচ্ছে গণতন্ত্র। পাশ্চাত্যে এর সূচনা হলেও বর্তমানে পৃথিবীর সবর্ত্রই এর বিকাশ ঘটেছে।
রাষ্ট্র পরিচালনায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার গঠনে দু’টি পদ্ধতি চালু রয়েছে:
(১) রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার (Presidential Form of Government) :
যেমন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, শ্রীলংকা। রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার-ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকলেও সেখানে জনগণের নির্বাচিত আইনসভার ভূমিকা সুদৃঢ় ও কার্যকর। এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি এবং তার মন্ত্রিপরিষদকে নির্বাচিত জন-প্রতিনিধিদের কাছে জবাবদিহি করতে হয় এবং জন-প্রতিনিধিদেরকে ও জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রপতিশাসিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচিত আইনসভার ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে। কিন্তু সমস্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে এবং স্বচ্ছতার প্রমাণ দিতে হয়।
(২) সংসদীয় গণতন্ত্র :
যেমন: যুক্তরাজ্য, ভারত, বাংলাদেশ, জাপানসহ পৃথিবীর আরও অনেক দেশ। সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রয়োগে সরকারের পন্থা সুনির্দিষ্ট এবং সংবিধান কর্তৃক সুনিয়ন্ত্রিত। রাষ্ট্রপরিচালনার নির্বাহী কর্তৃত্ব ন্যস্ত থাকে মন্ত্রিপরিষদের ওপর এবং মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণ সরকারের নীতি এবং কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ব্যক্তিগতভাবে এবং যৌথভাবে দায়ী থাকেন সংসদের কাছে এবং চুড়ান্ত পর্যায়ে দায়ী থাকেন জনগণের কাছে। জন-প্রতিনিধিগণ তাদের দায়িত্ব পালনে সরাসরি দায়ী থাকেন জনগণের কাছে। জনগণের কাছে সরাসরি জবাবদিহিতার এ ব্যবস্থার জন্য সংসদীয় গণতন্ত্র বর্তমান বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয়। সংসদীয় ব্যবস্থায় সরকারের সামগ্রিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু হল সংসদ। এ ব্যবস্থায় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুও সংসদ। তবে জনগণের নির্বাচিত আইনসভার কাছে নির্বাহী বিভাগকে সরাসরি এবং সামষ্টিকভাবে দায়বদ্ধ রাখার বিধান সংসদীয় ব্যবস্থারই একক ও অনন্য বৈশিষ্ট্য। এই ব্যবস্থায় সরকারী নীতি নির্ধারিত হয় সংসদে এবং তা বাস্তবায়নে মন্ত্রিপরিষদ সংসদের কাছে দায়বদ্ধ থেকে কর্তৃত্ব প্রয়োগ করে থাকে। সংসদ প্রসঙ্গে তাই Liod George বলেন, “The house is the sounding board of the nation; it both speaks for and speaks to the people”.
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক কর্তৃত্বের মতো প্রশাসনিক কর্তৃত্বের উৎস ও হল সংসদ। ১৯৮১ সালে আমেরিকার সিনেট কমিটির এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিভাগ এবং বিভাগীয় কর্মকর্তারা কোন প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়।
১লা অক্টোবরের নির্বাচনের পর জোট সরকার সংসদকে অকার্যকর করে ফেলেছে। সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলেছে। প্রশাসনে সৃষ্টি হয়েছে চরম দুর্নীতি সীমাহীন অরাজকতা। চারদিকে ব্যর্থতা। রাষ্ট্রের ভূমিকা হারাতে যাচ্ছে। মানুষ অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে সংগ্রাম করে যাচ্ছে । সরকার জনগণের দাবি আদায়ের আন্দোলনকে প্রশাসন ব্যবহার করে অন্যায়ভারেব দমনপীড়নের নীতি গ্রহণ করে চলেছে। মানুষের অধিকার পদদলিত হচ্ছে। রাষ্ট্র অকার্যকর হবার পথে এগুচ্ছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে গণতন্ত্র আজ বিপন্ন হবার পথে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সদস্যগণ নিন্মে বর্ণিতভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন:
১. মন্ত্রীগণ স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ে প্রধান নির্বাহী হিসেবে মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাদের কার্যের জন্য সংসদের নিকট এককভাবে দায়ী থাকেন।
২. সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ সংবিধানের ৭৬(১) ধারায় সংসদ-সদস্যদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। বর্তমানে সরকারী হিসাব কমিটি, বিশেষ অধিকার কমিটি ইত্যাদি ছাড়াও প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকারের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের পরিবর্তে সংসদ সদস্যদের এ সকল স্থায়ী কমিটিতে সভাপতি নিয়োগ করেছে। সংবিধানের ৭৬(২ও ৩)-তে এ সকল কমিটির কার্যাবলী নির্ধারিত করো হয়েছে। যেমন:
ক) খসড়া বিল ও অন্যান্য আইনগত প্রস্তাব পরীক্ষা করিতে পারিবেন;
খ) আইনের বলবৎ করণ পর্যালোচনা এবং অনূরুপ বলবৎকরণের জন্য ব্যবস্থাদি গ্রহণের প্রস্তাব করিতে পারিবেন;
গ) জনগুরুত্ব সম্পন্ন বলিয়া সংসদ কোন বিষয় সম্পর্কে কমিটিতে অবহিত করিলে সেই বিষয়ে কোন মন্ত্রণালয়ের কার্য বা প্রশাসন সম্বন্ধে অনুসন্ধান বা তদন্ত করিতে পারিবেন এবং কোন মন্ত্রণালয়ের নিকট হতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির মাধ্যতে প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি সংগ্রহের এবং প্রশ্নাদি মৌখিক বা লিখিত উত্তর লাভের ব্যবস্থা করিতে পারিবেন।
ঘ) সংসদ কর্তৃক অর্পিত যে কোন দায়িত্ব পালন করিতে পারিবেন।
৩) সংসদ আইনের দ্বারা এই অনুচ্ছেদের অধীন নিযুক্ত কমিটিসমূহকে
ক. স্বাক্ষীদের হাজিরা বলবৎ করিবার এবং শপথ, ঘোষণা বা অন্য কোন উপায়ের অধীন করিয়া তাঁহাদের স্বাক্ষ্যগ্রহণের;
খ) দলিলপত্র দাখিল করিতে বাধ্য করিবার ক্ষমতা প্রদান করিতে পারিবেন ।
(১) নবগঠিত এই সকল কমিটিগুলোর কাজের ব্যাপ্তি অনেক বিস্তৃত হলেও কমিটিগুলোতে কোন প্রফেশনাল (Professional) লোকবল বা লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া হয়নি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিকাশে এবং সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এ সকল কমিটিগুলোকে আরো বেশী সংগঠিত করা প্রয়োজন। কেননা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কমিটি প্রথা হল অন্যতম পদ্ধতি যা দিয়ে সংসদ প্রশাসনিক কর্মকা- নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মন্ত্রণালয়ের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মন্ত্রীদের নিয়ন্ত্রণ স্থাপনে মন্ত্রীদের Principal Accounting Officer নিয়োগ করা প্রয়োজন। সংসদীয় কমিটিগুলো নিয়মিতভাবে কাজ করে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জন-প্রতিনিধি ও জনপ্রশাসকের সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করা একান্ত বিবেচ্য। রাজনৈতিক নেতৃত্বাধীনে জনপ্রশাসকরা আনুগত্যশীল হবেন এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সুনির্দিষ্ট যোগ্যতার পরিচয় প্রদান একান্তভাবে আবশ্যক। কারণ জনপ্রতিনিধিগণ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে অস্থায়ী এবং জনপ্রশাসকগণের পদ স্থায়ী। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বৃটিশ পার্লামেন্টের ঐতিহ্য এক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রসিদ্ধ লাভ করেছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলে জনপ্রতিনিধি ও জন প্রশাসকদের ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলে স্বেচ্ছাচারিতা থাকে না, এই জনো বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশের আইনসভা কর্তৃক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সভাপতি স্থায়ী কমিটির আইনসভার পক্ষে কার্য পরিচালনার জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে সরকারের জন-প্রতিনিধিও জন অর্থেই প্রশাসনিক কর্তৃত্বের অধিকারী নয়: তারা কংগ্রেসপ্রণীত আইনের সৃষ্টি (They are the creatures of the laws of Congress) । জাতীয় অর্থের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকল্পে গ্লাডস্টোনের (Gladstone) নেতৃত্বে কমন্স সভায় ১৮৬২ সালে যে আইন প্রণীত হয় তার ও মূল লক্ষ্য ছিল প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ক্ষমতা সংসদের আইন থেকে উদ্ভূত। তখন থেকেই গণতান্ত্রিক বিশ্বে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানেও এই সুর পরিলক্ষিত হয়। সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘‘এই সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে সাসংদ আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন। ” এখানেও প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের নিয়োগ এবং তাদের কর্মের শর্তাবলী নির্ধারণের দায়িত্ব সংসদের নিকট ন্যস্ত আছে। গণতন্ত্রের প্রকৃত শাসন হল আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আইন/ নীতি প্রণীত হয় সংসদে। তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকে জন-প্রশাসনের ওপর। নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য/ উপাত্ত সংগ্রহ, সমন্বয় এবং সরবরাহ করে থাকেন প্রশাসকগণ। এখানে লক্ষণীয় যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংসদ যেহেতু দলীয় সেহেতু নীতি নির্ধারিত হয়ে থাকে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। কিন্তু তার প্রয়োগকারীগণ অর্থাৎ প্রশাসকগণ থাকেন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনের প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন কার্যকর সংসদ (Legislature) এবং দক্ষ ও নির্দলীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা। একটির অভাবে অন্যটির কার্যক্রম কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। সরকারী কার্যক্রম বাস্তবায়নে চাই এ দুয়ের মধ্যে সমন্বয় এবং সু-সম্পর্ক, যা আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। বাংলাদেশের মতো সীমিত সম্পদের দেশে সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য এর প্রয়োজন আরো বেশী। আমাদের আজকের আলোচনাটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে হলেও এ লেখাটি উপস্থাপন করা হল মূলত: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিকাশঃ
দীর্ঘ রক্তাক্ত সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। ১৯৭২ সালের ১৪ এপ্রিল নির্বাচিত গণপরিষদে গৃহীত হয় বাংলাদেশের সংবিধান। আর ১৯৭২ সালের সাময়িক সাংবিধানিক আদেশ (provisonal constitutional ordinance,1972) বলে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় সংসদীয় গণতন্ত্র। রক্তক্ষয়ীযুদ্ধের পর স্বাধীনতা ও বিজয়লাভের সূচনাতেই সংবিধান এবং সংসদীয় গণতন্ত্রলাভের এরূপ দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানকে অত্যন্ত যুগোপযোগী এবং শ্রেষ্ঠ সংবিধান সমূহের একটি বলে আখ্যায়িত করা হয়। এ সংবিধানের মূল বক্তব্যই হচ্ছে সংসদীয় গণতন্ত্র। প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ এবং জাতীয় সংসদের কাছে দায়ী মন্ত্রিপরিষদ---এটাই হচ্ছে সংবিধানের মূল বক্তব্য। বাংলাদেশের সংবিধান দেশের সমস্ত কর্তৃত্ব জনগণের উপর ন্যস্ত করেছে।
১৯৭২ এর সংবিধানে সকল রাজনৈতিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু বলে চিহ্নিত করা হয় সাংসদকে এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সৃষ্টির মাধ্যমে মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহের প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ন্যস্ত হয় এ সংসদের উপর। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে গণতান্ত্রিক চর্চা শুরু হলেও তা ব্যাহত হয় কিছুদিনের মধ্যেই। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে হত্যা এবং তারপর সামরিক শাসন জারি এবং সংবিধানকে অকার্যকর (Suspended) করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক চর্চা ব্যাহত হওয়া শুরু হয়। সুদীর্ঘকাল ধরে সংবিধানকে অকার্যকর (Suspended) করে রাখার ফলে সাংবিধানিক চর্চা ব্যাহত হয়। এদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের দুর্বার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯০ সালে পতন ঘটে স্বৈরাচারী সরকারের। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত্বাবধানে ১৯৯১ সালে ২৭ শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। নির্বাচিত জাতীয় সংসদে ১৯৯১ সনের ৬ আগস্ট সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় দ্বাদশ সংশোধনী আইন এবং ১৯৯১ সনের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে আবার ও প্রতিষ্ঠিত হয় সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ফসল। গণতন্ত্রমনা বাংলাদেশের মানুষ ইতিপূর্বে ১৯৫৪ সালে ও ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছিল। কিন্তু স্বৈরশাসন বারবার গণতান্ত্রিক চর্চা ব্যর্থ করে দিয়েছে। আজকের প্রেক্ষাপটকে গণতন্ত্রের বিকাশের চরম অবস্থা বলে মনে হচ্ছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকার আজ ফ্যসিবাদী চরিত্র ধারণ করেছে। স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা বাংলাদেশে নেই। বরং জনগণের পরিবর্তে সরকারই দেশের মালিক বনে গেছেন। ফলে দূনীতি বাড়ছে সীমাহীনভাবে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সালের মেয়াদে পাঁচ বার দুর্নীতিতে শীর্ষে। শুধু স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে আজ সঠিকভাবে গণতন্ত্রের চর্চা ব্যাহত।
মানবসভ্যতার প্রাচীনতম শাসনপদ্ধতির অন্যতম হল আমলাতন্ত্র (Bureuncracy)। সরকারের কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম অঙ্গ হচ্ছে আমলাতন্ত্র। প্রাচীন এই পদ্ধতি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানে বিশ্বে সর্বত্রই প্রচলিত আছে। Maxweber তার Hydraulic state গবেষণায় উল্লেখ করেন যে, well organised centralised bureucracies were well in place in ancient India and China। রাজা অশোক- এর আমলে সু-শৃঙ্খল কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র ভারতে এবং মেন্ডারিনের আমলে চীনে পরিলক্ষিত হয়। সরকারের নীতি বাস্তবায়নে আমলাতন্ত্র প্রধান ভুমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমলাতন্ত্রের ভুমিকা আরো বেশী। একটি টিপিক্যাল (Typical) উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে আমরা প্রশাসনের নিরবচ্ছিন্ন ভূমিকা দেখতে পাই। বাংলাদেশে আমরা যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা দেখতে পাই তা মূলতঃ বৃটিশ উপনিবেশিক আমলে এদেশ শাসনে বৃটিশরা যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করেছিল তারই উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা এটি। বৃটিশরা এ শাসনের জন্য যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা স্থাপন করে পরবর্তীকালে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পরও পাকিস্তানি সরকার কর্তৃক তা চলতে থাকে। ১৯৪৭ সালের পর পরবর্তী সময়ে তৎকালীন পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু না হওয়ার কারণে দেশের প্রধান নির্বাহীর ইচ্ছানুযায়ী প্রশাসকগণ কাজ করতেন। বৃটিশ শাসনামলে তাই আই,সি,এস (ICS) অফিসাররা স্থানীয় মন্ত্রীদের উপর মর্যাদা পেতেন এবং পাকিস্তান আমলেও আমরা দেখতে পাই যে warrant of Precedence এ সংসদ সদস্যদের অবস্থান ছিল যুগ্ম সচিবের সমপর্যায়ে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পদ মর্যাদা সচিবের ওপর নির্ধারিত হয়। তাছাড়া সংসদ সদস্যদের মেয়াদ খণ্ডকালীন এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা স্থায়ী বলে উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রশাসকগণই মূল ভূমিকা পালন করে আসছেন। প্রশাসকদের অবস্থান এবং স্থায়িত্বের কারণে মাঠপর্যায়ে জনগণ প্রশাসকদেরই সরকার মনে করে থাকে। তাই সচারচর রাজনীতিবিদ, গবেষক বিভিন্ন পেশাজীবী গ্রুপ আমলাতন্ত্রকে সমালোচনা করলেও আজ পর্যন্ত তারা এর কোন বিকল্প ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে পারেনি। প্রকৃতপক্ষে আমলাতন্ত্রের কোন বিকল্পের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন হচ্ছে আমলাতন্ত্রকে জনগণের কল্যাণে কাজে লাগানো। এর জন্য চাই সংসদ এবং আমলাতন্ত্রের মধ্যে সমন্বয়। বাংলাদেশ সংবিধানের ৫৫(৬) ধারাবলে ১৯৭৫ সালে যে রুলস অব বিজনেস (Rules of Business,1975) প্রণীত হয়েছিল তা মন্ত্রণালয়ের সকল কার্যক্রমে প্রধান নির্বাহী ছিলেন সচিবগণ এবং সচিবগণ ছিলেন মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকতা (Principal Accounting Officer )। ১৯৯৬ সালে রুলস অব বিজনেস পরিবর্তন করে মন্ত্রীদের মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহী করা হলেও সচিবগণ এখনও Principal Accounting Officer হিসেবে কাজ করেন।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিকাশের পূর্বশর্ত হচ্ছে দক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা। বৃটিশ শাসনামল থেকে পাকিস্তান আমল এবং বাংলাদেশে ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে এদেশে স্বৈরশাসন পরিচালনার কারণে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিকাশ লাভ করতে পারেনি। উপরন্তু আমলা এবং রাজনীতিকদের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। পক্ষান্তরে যুক্তরাজ্য, ভারত, মালয়েশিয়ার মত দেশ দীর্ঘ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু থাকার কারণে পরস্পরের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ এবং বিশ্বাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশে জোট সরকার এই প্রশাসনকে সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করেছে। দলের আজ্ঞাবহ অযোগ্য লোক বসানো হয়েছে প্রশাসনে। তাতে দুর্নীতি বাড়ছে সীমাহীনভাবে। জনগণ রাষ্ট্রীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ২০০৮ থেকে গণতন্ত্রের সত্যিকারে চর্চার ফলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সর্বক্ষেত্রে। বাংলাদেশ আজ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ।
বাংলাদেশ উন্নয়নে আজ বিশ্বের কাছে রোল মডেল
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই স্পষ্ট যে, প্রশাসকগণ তাদের অবস্থান, স্থায়িত্ব, এবং ধারাবাহিকতার কারণে উন্নয়ন কার্যক্রমে মূল ভূমিকা পালন করে আসছেন। বিগত বছরগুলোতে এদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিকাশ না হওয়াতে উন্নয়ন কার্যক্রমে সংসদের ভূমিকা ছিল অতি গৌণ। তাই বর্তমানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় চাই সংসদ এবং প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের পর জোট সরকার সংসদকে অকার্যকর করে ফেলে। সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলে। প্রশাসনের সৃষ্টি হয় চরম,দুর্নীতি সীমাহীন অরাজকতা। চারিদিকে ব্যর্থতা। রাষ্ট্রের ভূমিকা যাচ্ছিল হারিয়ে। মানুষ অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে সংগ্রাম করে যাচ্ছিল। সরকার জনগণের দাবি আদায়ের আন্দোলনকে প্রশাসন ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে দমনপীড়ন নীতি গ্রহণ করে। মানুষের অধিকার তখন পদদলিত। রাষ্ট্র অকার্যকর হবার পথে এগুচ্ছিল। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে গণতন্ত্র তখন বিপন্ন হবার পথে। ২০০৮ সালের পর এই দৃশ্যপট বদলে গেছে। বাংলাদেশ আজ এগুচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সদস্যগণ নিম্নবর্ণিতভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে থাকেনঃ
১) মন্ত্রীগণের স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ে প্রধান নির্বাহী হিসেবে মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাদের কার্যের জন্য সংসদের নিকট একক ভাবে দায়ী থাকা।
২) সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ সংবিধানের ৭৬(১) ধারায় সংসদ সদস্যদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। বর্তমানের সরকারী হিসাব কমিটি, বিশেষ অধিকার কমিটি ইত্যাদি ছাড়াও প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকারের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের পরিবর্তে সংসদ সদস্যদের এ সকল স্থায়ী কমিটিতে সভাপতি নিয়োগ করেছেন। সংবিধানের ৭৬( ২ও ৩) তে এ সকল কমিটির কার্যাবলী নির্ধারিত করা হয়েছে।
য়েমনঃ
ক) খসড়া বিল ও আইনগত প্রস্তাব পরীক্ষা করিতে পারিবেন;
খ) আইনের বলবৎ করণ পর্যালোচনা এবং অনুরুপ বলবৎকরণের জন্য ব্যবস্থাদি গ্রহণের প্রস্তাব করিতে পারিবেন;
গ) জনগুরুত্বসম্পন্ন বলিয়া সংসদ কোন বিষয় সম্পর্কে কমিটিতে অবহিত করিলে সেই বিষয়ে কোন মন্ত্রণালয়ের কার্য বা প্রশাসন সম্বন্ধে অনুসন্ধান বা তদন্ত করিতে পারিবেন এবং কোন মন্ত্রণালয়ের নিকট হতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি সংগ্রহের এবং প্রশ্নাদি মৌখিক বা লিখিত উত্তর লাভের ব্যবস্থা করিতে পারিবেন।
ঘ) সংসদ কর্তৃক অর্পিত যে কোন দায়িত্ব পালন করিতে পারিবেন।
৩) সংসদ আইনের দ্বারা এই অনুচ্ছেদের অধীন নিযুক্ত কমিটিসমূহকে
ক) স্বাক্ষীদের হাজিরা বলবৎ করিবার এবং শপথ, ঘোষণা বা অন্য উপায়ের অধীন করিয়া তাঁহাদের স্বাক্ষ্যগ্রহণের;
খ)দলিলপত্র দাখিল করিতে বাধ্য করিবার ক্ষমতা প্রদান করিতে পারিবেন। (১) নবগঠিত এই সকল কমিটিগুলোর কাজের ব্যাপ্তি অনেক বিস্তৃত হলেও কমিটিগুলোতে কোন প্রফেশনাল (Professional) লোকবল বা লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া হয়নি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিকাশে এবং সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এ সকল কমিটিগুলোকে আরো বেশী সংগঠিত করা প্রয়োজন। কেননা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কমিটি প্রথা হল অন্যতম পদ্ধতি যা দিয়ে সংসদ প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মন্ত্রণালয়ের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মন্ত্রীদের নিয়ন্ত্রণ স্থাপনে মন্ত্রীদের (Principal Accounting Officer) নিয়োগ করা প্রয়োজন। সংসদীয় কমিটিগুলো নিয়মিতভাবে কাজ করে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জন-প্রতিনিধি ও জনপ্রশাসকের সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করা একান্ত বিবেচ্য। রাজনৈতিক নেতৃত্বাধীনের জনপ্রশাসকরা আনুগত্যশীল হবেন এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সুনির্দিষ্ট যোগ্যতার পরিচয় প্রদান একান্তভাবে আবশ্যক। কারণ জনপ্রতিনিধিগণ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে অস্থায়ী এবং জনপ্রশাসকগণের পদ স্থায়ী। উদাহরন স্বরুপ বলা যায় - বৃটিশ পার্লামেন্টের ঐতিহ্য এক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রসিদ্ধ লাভ করেছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলে জনপ্রতিনিধি ও জন প্রশাসকদের ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা হয়। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলে স্বেচ্ছাচারিতা থাকে না , এজন্য বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশের আইনসভা কর্তৃক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সভাপতি স্থায়ী কমিটি আইনসভার পক্ষে কার্যপরিচালনার জন্যে নির্বাচিত হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে সরকারের জন-ত প্রতিনিধি ও জন প্রশাসকগণ নিয়ন্ত্রিত থাকেন। অনেক গণতান্ত্রিক দেশে ন্যায়পাল (Ombudsman) প্রতিষ্ঠা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ন্যায়পাল হলো সাংবিধানিক সংসদীয় কার্যালয় বা সরকারী প্রশাসন কর্তৃক জনগণের বিরুদ্ধে কৃত অন্যায় অসুবিধার বিরুদ্ধে আইনসভা থেকে জনগণের পক্ষে এসব অনিয়ম প্রতিকারের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের সংবিধানে ও এ বিধান রাখা হয়েছে(৭৭)।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জন-প্রতিনিধি ও জন-প্রশাসকদের সু-সম্পর্কের উপর নির্ভর করে সমস্ত জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মানের ভিত্তিতেই এ সম্পর্ক গড়ে ওঠা সম্ভব। দেশ ও দেশের জনগণ সবকিছুর উর্ধ্বে--- এ ধারণা থেকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা মানুষের জন্য কার্যকর ও অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করতে পারে। জন-প্রতিনিধিদের চিন্তা-চেতনার ফসল থেকে সৃষ্ট নীতিসমূহ বাস্তবায়িত হয় জনপ্রশাসকদের দ্বারা। সেক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি ও জনপ্রশাসকদের মূল লক্ষ্য দেশ এবং মানুষের কল্যাণ। এ প্রয়াসকে সামনের রেখেই জন-প্রতিনিধি ও জন-প্রশাসকদের ভূমিকা কার্যকর করাই দেশ ও মানুষের জন্য কল্যাণকর।
উপসংহারঃ
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য চাই কার্যকর সংসদ এবং দক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা। জনপ্রতিনিধিগণ সংসদে আইন প্রণয়ন করে থাকেন আর জন-প্রশাসকগণ আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে যাবতীয় তথ্যাদি উপস্থাপন এবং মাঠ পর্যায়ে সরকারী নীতি বাস্তবায়ন করে থাকেন। অন্যদিকে সাংসদগণ কমিটির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তাই সরকারের নীতি বাস্তবায়নের একমাত্র সফল জন-প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনে সহায়ক হতে পারে। আর দক্ষ জন প্রশাসন ছাড়া গণতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ সম্ভব নয়। আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাই একমাত্র জনপ্রতিনিধিদের ও জনপ্রশাসকদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে সবচেয়ে সুদৃঢ়ভাবে। তাই আজকের পরিবর্তিত বিশ্ব-আঙ্গিকের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার ওপরই সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর একবিংশ শতাব্দির বড় চ্যালেঞ্জ হবে মানুষের সৃজনশীলতার প্রতিযোগিতা। সেই জন্যই মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রশ্নটি আজ বিশ্ব পরিমণ্ডলে স্থান পাচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে। বিশ্বের কোনো দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে বিশ্ব-বিবেককে সোচ্চার হতে দেখা যায়।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাই জন-প্রতিনিধি ও জন-প্রশাসকগণের সুষ্ঠ সমন্বয় সাধন করে মানুষের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। তাই প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে সঠিক ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন: Democracy is the Government of the people,by the people and for the people .জনপ্রতিনিধি ও জন-প্রশাসনের সঠিক প্রতিফলন এবং তাদের সুষ্ঠ সমন্বয়ই অধিকতর কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে।
অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ, এম পি
সাবেক ডেপুটি স্পিকার
E-mail: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, ১৮ নভেম্বর, ২০১৫
জেএম/