খুলনা: অনেকটা নীরবে, নিভৃতে, অভিমানে চলে গেলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট শেখ তৈয়্যেবুর রহমান।
শুক্রবার (১ জানুয়ারি) দিনগত রাত ১১টায় নগরীর নার্গিস মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)।
ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এক ছেলে ও তিন মেয়ের জনক ছিলেন তৈয়্যেবুর রহমান।
মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু জানান, শনিবার (২ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর হাদিস পার্কে মরহুমের প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। বাদ আসর বাগেরহাটের করোরী গ্রামে নিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে শেখ তৈয়্যেবুর রহমানকে দাফন করা হবে।
১৯৩৬ সালের ২১ অক্টোবর বাগেরহাট সদরের কররী গ্রামে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সাবেক রাষ্ট্রদূত শেখ তৈয়্যেবুর রহমান বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
১৯৬৩ সালে তিনি আইন ব্যবসায় যোগ দেন। জীবনের শুরুতেই ন্যাপের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে জাগদল ও বিএনপিতে যোগদান করেন। তিনি সেনেগালসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ১৯৯১ সালে কেসিসি’র মনোনীত, ১৯৯৪ ও ২০০২ সালে মেয়র নির্বাচিত হন।
মেয়র থাকা অবস্থায় সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবন, পদ্মার এপারে নারী শিক্ষার সর্ববৃহৎ কলেজিয়েট স্কুলসহ আধুনিক খুলনার অবকাঠামোগত বিভিন্ন উন্নয়ন করেছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
একটানা ১৯ বছর রাষ্ট্রীয় পতাকা বহন করেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট শেখ তৈয়্যেবুর রহমান। শেষ বয়সে এসে তার শরীরে নানা অসুখ বাসা বাঁধে। একাকী চলার শক্তিও হারিয়ে ফেলেন।
খুলনায় বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে যৌবনের অনেক সময় ব্যয় করেছেন তিনি। এক সময়ের দাপুটে এই রাজনীতিক এক প্রকার নিভৃতে খুলনা শহরের ১৫/১ গগণ বাবু রোডের মতি মঞ্জিলের নিজ বাড়িতেই স্ত্রী লায়লা রহমানকে নিয়ে বসবাস করতেন। ৬৫ সালে ন্যাপের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ন্যাপের খুলনা জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আইন পেশার কারণে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিও ছিলেন।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। খুলনায় বিএনপির ঘাঁটি গড়তে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তার হাতে গড়া অনেক রাজনীতিক নেতাই এখন খুলনা বিএনপিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অথচ জীবনের সায়াহ্নে তারই খোঁজ কেউ রাখেনি এমন অভিযোগ রয়েছে তৈয়্যেবুর রহমানের স্বজনদের।
২০০৭ সালে দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৯০ সালের ১৫ ডিসেম্বর খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনোনীত হন। সেই থেকে ২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত একটানা প্রায় ১৭ বছরের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সেনেগালের রাষ্ট্রদূত হন। তিনি নিটক অতীতে খুলনার রাজনীতিতে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন। তার রাজনৈতিক জীবনে নির্বাচন করে পরাজয়ের কোনো রেকর্ড নেই।
দেশে সম্ভাবত তিনিই একমাত্র বিএনপি নেতা, যিনি একটানা প্রায় ১৯ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় পতাকা বহন করেছেন। ওয়াল ইলেভেনের সময় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করায় তৈয়্যেবুর রহমানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের ছন্দপতন ঘটে। দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে দূরে সরে যান তিনি।
২০০৭ সালের ২ নভেম্বর ওয়ান ইলেভেনের সময় খুলনা মেয়রের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হন তৈয়্যেবুর রহমান। তাকে মাদকদ্রব্যসহ নানা অভিযোগের ১৫টি মামলার আসামি করা হয়। এরপর থেকে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পরেন। এবং অনেকটা নিভৃতে চলে যান।
এদিকে খুলনার সাবেক মেয়র তৈয়্যেবুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, দৈনিক খুলনাঞ্চলের প্রধান সম্পাদক মো. খবিরুজ্জামান, সম্পাদক মিজানুর রহমান মিলটন, নির্বাহী সম্পাদক মো. সরোয়ার হোসাইন, বার্তা সম্পাদক এনামুল হকসহ কর্মরত সব সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
তৈয়্যেবুর রহমানের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতাল ও নগরীর গগণবাবু রোডের বাসভবনে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৪১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৬
এমআরএম/জেডএস
** খুলনার সাবেক মেয়র তৈয়্যেবুর রহমান আর নেই