ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

বিজন ভট্টাচার্যের মৃত্যুবার্ষিকী, পৈত্রিকভিটা উদ্ধারের দাবি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৭
বিজন ভট্টাচার্যের মৃত্যুবার্ষিকী, পৈত্রিকভিটা উদ্ধারের দাবি

রাজবাড়ী থেকে: উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পস্রষ্টা বিজন ভট্টাচার্যের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি)। তার রাজবাড়ীর খানখানাপুরের পৈত্রিক ও জন্মভিটার সম্পত্তি উদ্ধার করে স্মৃতি ও সংগ্রহশালা স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সংস্কৃতিসেবীরা।

অভিনয়, সংগীত, নাটক, চলচ্চিত্র ও শিল্পকলার মতো সব শক্তিশালী মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন বিজন ভট্টাচার্য।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর গ্রামে ১৯০৬ সালের ১৭ জুলাই জন্মগ্রহণকারী বিজন ভট্টাচার্য ছিলেন বৈচিত্র্যময় শিল্পজীবনের অধিকারী।

তার বাবা খানখানাপুর সুরাজ মোহিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্ষিরোদ বিহারী ছিলেন জমিদার শ্রেণীভূক্ত ও শিল্পরসিক। সঙ্গীতপ্রিয় ও যাত্রাশিল্পের অনুরাগী বাবার শিক্ষকতার চাকুরির সুবাদে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়ে লোকশিল্প ও সংস্কৃতির সঙ্গে বিজন ভট্টাচার্যের প্রাথমিক পরিচয় ঘটে।


১৯৩০ সালে কলকাতা গিয়ে প্রথমে আশুতোষ কলেজে ও পরে রিপন কলেজে অধ্যাপনা করেন বিজন ভট্টাচার্য। ১৯৩৮ সালে আনন্দবাজার পত্রিকায় যোগ দেন সাংবাদিক হিসেবে এবং সেখানেই তার সাহিত্য সাধনার সূচনা হয়। তার প্রথম গল্প ‘জালসত্ত্ব’ আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালে। ওই সময় কমরেড মোজাফ্‌ফর আহমেদের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে এবং তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন।

১৯৪২ সালে বিজন ভট্টাচার্য কমিউনিস্ট পার্টির সার্বক্ষণিক কর্মীর দায়িত্ব নেন। ১৯৪৩ সালে প্রখ্যাত লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের একমাত্র সন্তান বিখ্যাত লেখক নবারুণ ভট্টাচার্য ১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

ভারতবর্ষ ভাগাভাগির পরে তাদের পরিবার পশ্চিম বাংলায় চলে যায়।

বিজন ভট্টাচার্যের প্রথম নাটক ‘আগুন’ ১৯৪৩ সালের ২৩ এপ্রিল বিখ্যাত ‘অরণী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং ওই বছরেই আগুন মঞ্চস্থ হলে নাট্যকার হিসেবে তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। অরণীতে তার দ্বিতীয় নাটক ‘জবানবন্দী’ প্রকাশিত হয় ১৯৪৩ সালেই। পঞ্চাশের মন্বন্তরের (তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ) পটভূমিতে কৃষক সমাজের দুর্দশার চিত্র তিনি তার নবান্ন (১৯৪৪) নাটকে তুলে ধরে বাংলা নাট্যধারায় এক নতুন যুগের সূচনা করেন।

কলকাতায় তিনি নবনাট্য আন্দোলনের পুরোহিত হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন বিজন ভট্টাচার্য। নবান্ন নাটকের মাধ্যমেই তিনি নাট্যকার হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্থান করে নেন। নাটক রচনায় তিনি মার্কসবাদকে আশ্রয় করেন।

১৯৫০ সালে তিনি ক্যালকাটা থিয়েটার গ্রুপ গড়ে তোলেন। তার রচিত ২০টি নাটকের মধ্যে জনপদ (১৯৪৫), কলংক (১৯৪৬), মরাচাঁদ (১৯৪৬), অবরোধ (১৯৪৭), গোত্রান্তর (১৯৬০), ছায়াপথ, মাস্টার মশাই, ধর্মগেল, জননেতা, আজ বসন্ত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  


তিনি কেন্দ্রীয় সঙ্গীত নাটক একাডেমি, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য একাডেমি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরস্কার ও সম্মাননা পান।

১৯৭৮ সালের ১৯ জানুয়ারি কলকাতায় পরলোক গমন করেন বিজন ভট্টাচার্য।

বিজন ভট্টাচার্য ও তার পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া খানখানাপুরের ৩ একর জমি ও বাড়ি-ঘর এখন বেদখলে চলে গেছে। বিজন ভট্টাচার্যের বাবা ক্ষিরোদ বিহারী ভারত ভাগের পরে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে পরিবারের অন্য সদস্যরা এখানে বসবাস করতেন।

১৯৬৪ সালের পরে বিজন ভট্টাচার্যের জন্মভিটা সরকারিভাবে খাস করা হয়। ভট্টাচার্য পরিবারের পক্ষে মামলা করা হলে সরকার হেরে গিয়ে ওই জমিকে আবার ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে তালিকায় আনলে অবৈধ দখলে চলে যায়।

ভট্টাচার্য পরিবারের দুই উত্তরসুরী গোবিন্দ মোহন ও হাসিরানী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। বিজন ভট্টাচার্যের জন্মভিটার জমি-জমা উদ্ধারের চেষ্টায় দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালাতে গিয়ে তার উত্তরসূরী-জ্ঞাতি প্রণব কুমার এখন ক্লান্ত-অবসন্ন।

বিজন ভট্টাচার্যের ছেলে নবারুণ ভট্টাচার্য মৃত্যুর কিছুদিন আগে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি পূর্বপুরুষের ভিটা দেখতে গিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। বাস্তব পরিস্থিতি জানার পর তিনি কেবল গোপনে অশ্রু মোচন করেছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।