ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

একটি দিন নয়, সারা বছর বাবা-মা-সন্তানের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১১ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৭
একটি দিন নয়, সারা বছর বাবা-মা-সন্তানের একটি দিন নয়, সারা বছর বাবা-মা-সন্তানের

আয়োজন করে দিবস পালনের রেওয়াজ বাড়ছেই। প্রতিদিনই কোনো না কোনো দিবসও থাকছেই। কয়েকদিন আগে গেল বাবা দিবস। ভালোবাসা, বন্ধুত্ব- ইত্যাদি দিবসের এন্তার আয়োজনে বছরই পার হয়ে যায়!

আমরা কি দিবসের অন্তর্নিহিত মর্ম অনুভব করি? আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে আমরা কি দিবসের মূল চেতনাকে বড় করতে পারি?

অনেকের আবার বাবা-মায়ের জন্য একটি দিনের বরাদ্দ পছন্দনীয়ও নয়। আসলেই তো, একটি দিন নয়, সারা বছর বাবা আর মায়ের জন্য হওয়াই উচিত।

আধুনিক ক্রিকেটের বরপুত্র শচীন টেন্ডুলকার মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। বিত্তবান ছিলেন না বাবা, মোটামুটি সচ্ছল। কলেজে পড়াতেন, থাকতেন ‘সাহিত্য সহবাস’ সমবায় আবাসনে‌। শচীন যখন প্রচুর উপার্জন করতে শুরু করলেন, সবার আগে ভাবলেন, মা–বাবার কথা।

বিশ্বকাপ চলার সময়ে জীবনাবসান হয় রমেশ টেন্ডুলকারের। সে শোক বহন করেও সেঞ্চুরি করেন শচীন। মা বলেছিলেন, ‘দেশের হয়ে সেঞ্চুরি করো, সেটিই হবে বাবাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য’।

ক্রিকেটার ইরফান-ইউসুফ পাঠানরাও সবার আগে স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করেছেন মা-বাবার। বাবার ঘরটি কেমন হবে ইরফান নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বুঝিয়েছেন নির্মাতাদের। টেস্ট ম্যাচ দেখাতেও নিয়ে গেছেন বাবাকে।

মুনাফ প্যাটেলও দরিদ্র পরিবারের। দাদু থেকে বাবাসহ সব আত্মীয়ের দেখ-ভাল করেছেন, নিজের জীবন যাপনে আড়ম্বর আসতে দেননি।

দরিদ্র কৃতী ছাত্রটিও সাক্ষা‍ৎকারে প্রায়ই বলেন, ‘যদি বড় হতে পারি, প্রথমে কুঁড়েঘর থেকে পাকা বাড়িতে নিয়ে যাবো মা-বাবাকে’।

মুদ্রার উল্টা পিঠও আছে অন্য ধরনের অভিজ্ঞতা নিয়ে। একসময় অবস্থা ভালো ছিল, নাম-ডাকও ছিল- এমন মানুষ চূড়ান্ত দারিদ্র্যে লাঞ্ছিত হচ্ছেন, এমন ঘটনা কতো! দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জিতেছেন যিনি, তিনি রিকশা চালিয়ে গ্রাসাচ্ছাদন করছেন- এমনটিও ঘটে আমাদের দেশে বা উপমহাদেশে।

বৃদ্ধাশ্রমে বা  অন্যের বাড়িতে কাজ করে শেষ জীবন চালাচ্ছেন অনেক কৃতী মানুষের হতভাগ্য বাবা-মা। সন্তানের জন্য সব কিছু করেছেন, সন্তান সফল হয়েছেন। তিনি আর পেছনে দেখার সুযোগ পান না, সামনেই চলেন। পেছনে পড়ে থাকেন নিঃস্ব মা-বাবা!

এক সময় বড় ব্যবসা ছিল ভারতের গুজরাটের সঙ্কোত সিং বুমরা‌র। ছেলের মৃত্যুর পর প্রচণ্ড ভেঙে পড়েন, ভেঙে পড়ে ব্যবসাও। এখন বৃদ্ধ বয়সে দিন গুজরান করেন অটো চালিয়ে। অথচ তার দিনগুলো মসৃণভাবে চলতে পারতো। তার পৌত্র ভারতীয় ক্রিকেট তারকা জশপ্রীত বুমরা পিতামহের খবরই নেন না! ঠাকুরদাকে অটো চালনায় রেখে অনেক গুরুতর অন্যায় করে যাচ্ছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে ‘নো’ বল করে দলকে ডুবিয়েছেন, অনেক বড় ‘নো’। সমালোচনা প্রচুর, কিন্তু ইচ্ছে করে তো করেননি। আমি নিজেই সাম্প্রতিককালে ভারতে গিয়ে সামাজিক মিডিয়ায় এ নিয়ে তীব্র কটাক্ষ দেখেছি।

ভালো-মন্দ মিলেই আমাদের পারিবারিক-সামাজিক সম্পর্কগুলো চলছে। আনন্দ-বেদনায় বইছে যাপিত জীবন। পেছনে তাকালে দিব্যি বলতে পারি, আমাদের জীবনের শুরুর দিকে একমাত্র মনীষীদের ছাড়া জন্মদিন পালনেরও কোনো রেওয়াজ ছিল না। বাবা-মায়ের নামে বিশেষ দিন উৎসর্গ করা তো অনেক পরের কথা। এখন আমরা জানি, জুন মাসের তৃতীয় রোববার হল ‘ফাদার্স ডে’। জুনের আগের মে আর পরের জুলাই মাসেও থাকে সে দিবসের আবেগ ও উচ্ছ্বাস।

বিশেষভাবে লক্ষ্য করেছি, এ দিনের মন্তব্য ও উপলব্ধিতে মানুষের হাহাকার ও বেদনারাই পুঞ্জিভূত হয়। খুব কাছে ও সব সময় থাকলে যেমন মহার্ঘ্য বস্তুর মর্যাদাও আমরা বুঝি না, মা-বাবার বিষয়টিও তেমনি। তারা না থাকার সময় সন্তানের উপলব্ধি বড্ড বেদনার সঙ্গে শোনা যায়। হায়! তখন আর কিছুই করার থাকে না!

কেন এবং কিভাবে বাবা দিবস- সেটিও অনেকে বুঝতে চান না। দিবসটি পালনের পর বাসায় বা গ্রামের বাড়িতে বাবা ও মায়েরা বছরের বাকি দিনগুলোতে সাধারণ হয়ে যান। ইতিহাসটাও অনেকেই কষ্ট করে জানতে চান না। যার হাত ধরে, যার প্রশ্রয়ে, যার আদরে-শাসনে বড় হয়ে ওঠা- সেই বাবার প্রতি ভালোবাসা জানাতে পুরো একটি দিন!

শুরুটা করেছিলেন ওয়াশিংটনের মেয়ে সোনোরা লুইস স্মার্ট ডড। মাহারা পাঁচ ভাইয়ের সঙ্গে সোনোরাকেও মানুষ করেন তার বাবা। মায়েদের মতো বাবাদেরও যে সংসারে অবদান কম নয়, সেটি বোঝাতেই সনোরা ঠিক করেন- ১৯ জুন বাবার জন্মদিনে ‘ফাদার্স ডে’ পালন করবেন।

১৯১০ সালের ১৯ জুন প্রথমবারের মতো আমেরিকায় বাবা দিবস পালিত হয়। অবশ্য তার আগে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার রবার্ট ওয়েব ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই ফাদার্স ডে পালনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু সে উদ্যোগ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি বলে জুন মাসের তৃতীয় রোববার ফাদার্স ডে হিসেবে ধরা হয়।

একটি দিন নয়, সারা বছর বাবা-মা-সন্তানের

১৯৬৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন ফাদার্স ডে’কে ছুটির দিন ঘোষণা করেন। পশ্চিমের দেশগুলোতে ছুটি কাটানোর মতো করেই আনন্দে তাই দিনটি কাটে। পিকনিক, বার বি কিউ বা রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া। শুধু বাবা নয়, পরিবারে যারা বাবার মতো, তাদেরকেও উপহার-গ্রিটিং কার্ড দিয়ে ভালোবাসা জানান ছেলে-মেয়েরা।  

এশিয়া বা আফ্রিকার তুলনায় মার্কিন পরিবারের সন্তানেরা একটু তাড়াতাড়িই স্বাবলম্বী হয়ে পড়েন। কলেজে পড়ার সময়ই বাড়ির বাইরে থাকতে শুরু করেন। ফলে মা-বাবার সঙ্গে সব সময় দেখা হয় না তাদের। তাই দিনটি কাছে আসার, সম্পর্কের বাঁধনগুলো আরেকটু মজবুত করে নেওয়ার।

পশ্চিমের একটি ভালো গুণ হলো, সব কিছুকেই গবেষণার দৃষ্টিতে দেখা। এসব সামাজিক অনুষ্ঠানের ভালো-মন্দ দিক নিয়ে তথ্যমূলক গবেষণাও কম হচ্ছে না।

সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমেরিকায় যে সন্তানেরা বাবা ছাড়াই বড় হয়েছে বা বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে, তাদের মানসিক চরিত্র গঠন সব সময় স্বাভাবিক হয় না। আর্থিক সচ্ছলতা কমে যায় বলে তাদের কারও কারও মধ্যে অপরাধ প্রবণতাও বেড়ে যায়। কেউ মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে, লেখাপড়ায় মন বসাতে পারে না। অনেকেই সফল হতে পারে না পেশাদার জীবনে।

মানসিক শূন্যতা আর হতাশার জায়গা থেকে নিজেরাও একদিন বান্ধবী, প্রেমিকা বা স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। হয়তো নিজেরাও চূড়ান্ত বিষাদ নিয়ে পরিবার ছেড়ে চলে যান। মানুষের অসংলগ্ন আচরণের পেছনেও যে একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে- গবেষণা সেটিই প্রমাণ করে।

পরিসংখ্যান আরো জানাচ্ছে যে. আমেরিকায় যে সব ছেলে-মেয়ে মাঝপথে হাইস্কুল ছেড়ে দেয়, তাদের ৭ শতাংশের‌ পরিবারে বাবা নেই। ৬৩ শতাংশ আত্মহত্যা ঘটে বাবাহীন পরিবারে। শিক্ষক হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, বহু ছেলে-মেয়ে মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদের পর ভীষণ একাকিত্ব ও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। স্বাভাবিক জীবনও বিনষ্ট হয তাদের।

সম্ভবত এসব নেতিবাচক দিকগুলোকে বিবেচনায় রেখে ২০১৩ সালে হোয়াইট হাউসে ফাদার্স ডে উদযাপনের ভাষণে প্ৰাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন যে, তার বাবা যদি তার জীবনে আরও বেশি জড়িত থাকতেন, তা হলে হয়তো তার জীবন আরো বেশি সমৃদ্ধ হতো।

ওবামা নিজে ছোটবেলায় বাবাকে সেভাবে কাছে পাননি। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হওয়ায় আত্মীয়দের কাছে বড় হন। সেদিন ওবামা বলেছিলেন, ‘ছোটবেলায় বাবা কাছে না থাকার শূন্যতা সব সময় অনুভব করেছি। সন্তানের জীবনে মায়ের সঙ্গে বাবার উপস্থিতিও জরুরি। যৌথ চেষ্টাতেই সন্তানের সাফল্য আসে। আমার দুই কন্যার জীবনের সেই গুরুদায়িত্ব ভাগ করে নিতে পেরে আমি সবচেয়ে খুশি’।

সমাজতাত্ত্বিকরা বলছেন, বাইরে থেকে আপাতভাবে মার্কিনি জীবনযাত্রা যতোই আধুনিক মনে হোক, সেদেশে পরিবারকে সব সময়ই গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে যিনি নির্বাচিত হন, তিনি আদর্শ বাবা কি-না- সেটিও বিচার করেন জনগণ। সেজন্যে ভোটের আগে সব প্রার্থী স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে প্রচারণা চালান।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাবাদের নিয়ে চমৎকার লিখেছেন ঐতিহাসিক-সাংবাদিক জশুয়া কেন্ডেল। তার ‘ফার্স্ট ড্যাডস্‌- প্যারেন্টিং অ্যান্ড পলিটিক্স’ বইয়ে সেই প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন থেকে ওবামা পর্যন্ত একজন বাবা ও একজন রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব ও কর্তব্যের যে প্রতিনিয়ত সংঘাত- তার ব্যাখ্যা করেছেন। লিখেছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপিতা একাধারে যেমন তার সন্তানের বাবা, তেমনই তিনি সমগ্র জাতির পিতৃসমান।

বাবা শব্দের মধ্যে যে আধিপত্য উহ্য, সেই আধিপত্য যিনি রাষ্ট্রের মাথা, তার মধ্যেও আছে। একজন শিশুর চোখে বাবা পরিবারের সবচেয়ে ক্ষমতাবান, গুরুত্বপূর্ণ সদস্য- যার কথার ওপর কথা চলে না। রাষ্ট্রপ্রধান যিনি, তারও সেই একই গুরুত্ব।

সাধারণ মানুষের চোখে প্রেসিডেন্ট তার সন্তান বা পরিবারের প্রতি যতো বেশি দায়িত্বশীল, নাগরিকদের প্রতিও ততোটাই দায়িত্ববান। আমেরিকায় একজন প্রেসিডেন্টকে হতে হয় এক নম্বর বাবা ও দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

সাধারণ বাবা-মায়েরা যেখানে ঘর ও বাইরের নানা দিক সামলাতে হিমশিম খান, সেখানে একজন রাষ্ট্রপতিকে কতো ধরনের ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, কূটনৈতিক সংঘাত সামাল দিয়ে চলতে হয়, সেটি বোঝাই যায়। সমাজ ও রাজনীতির যোগসূত্র ধরে মানুষ সেসব নিরীক্ষণ করেই নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
 
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেমস গারফিল্ড সন্তানদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিছানার ওপর লাফাতেন। আবার প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাংকলিন রুজভেল্ট এতোটাই কাজ পাগল ছিলেন, যে তার সদাব্যস্ত জীবনে ছেলে-মেয়েরাও আর পাঁচজনের মতো অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে দেখা করতে আসতেন!‌ দেশের মানুষের কাছে তিনি আদর্শ রাষ্ট্রপতি, কিন্তু নিজের সন্তানের জন্য তার সময় ছিল না।

রিচার্ড নিক্সন নাকি প্রায় রাতেই ওভাল অফিসে ঘুমাতেন। দুই মেয়ের জন্য তার সময় ছিল না। রোনাল্ড রিগান দেশের মানুষের চোখে রক্ষণশীল ও পারিবারিক মূল্যবোধের প্রতীক ছিলেন। কিন্তু আদতে নিজের সন্তানদের সঙ্গে তার দুস্তর দূরত্ব ছিল।

অন্যদিকে, নিজের মেয়েদের সঙ্গে খুব সুন্দর সম্পর্ক ছিল হ্যারি ট্রুম্যানের। মেয়ে মার্গারেটকে একবার চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘তুমি যতোই বড় হও, আমার কাছে তুমি চিরকাল সেই ছোট্ট খুকিই থাকবে’।

থিওডর রুজভেল্ট মাত্র ৪২ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। পরিবারের সঙ্গে তিনি এতো বেশি জড়িয়ে থাকতেন যে, প্রতিদিন বিকেলে ওভাল অফিস ছেড়ে সন্তানদের সঙ্গে খেলতে আসতেন। ছেলে-মেয়ের সঙ্গে ‘পিলো ফাইট’ করতেন ছেলেমানুষের মতো।

বারাক ওবামা ও বিল ক্লিনটন- এ দুই প্রাক্তন প্রেসিডেন্টও পারিবারিক মানুষ। বিল ক্লিনটন নিজের মেয়ে চেলসিকে নিয়ে সব সময় গর্ব করেছেন। ছোট থেকেই চেলসির লেখাপড়ার দিকে তার নজর ছিল। একবার হোয়াইট হাউসে সবাই যখন টিভিতে ‘ল্যারি কিং লাইভ’ অনুষ্ঠানে অ্যাল গোর আর রস পেরোর বিতর্ক দেখতে ব্যস্ত, ক্লিনটন তখন চেলসিকে অংক করতে সাহায্য করছিলেন। চেলসির বিয়ের দিন তিনি বলেছিলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্টের আগেও তিনি একজন মেয়ের বাবা। মেয়েকে বড় করে তোলা ও বিয়ের দিনে বাবার ভূমিকা পালনের যে আনন্দ, তা আর কিছুতেই নেই!‌’

বারাক ওবামা তো মেয়েদের ডায়াপারও বদলেছেন। ওভাল অফিসে কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও চাইতেন পরিবারের সবার সঙ্গে বসে ডিনার খেতে। গত বছর ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্কের শতবর্ষ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার সময় স্ত্রী মিশেল ও মেয়েদেরও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানেই ফাদার্স ডে’র ছুটি কাটান ওবামা।

জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গেও তার মেয়েদের চিরকালই কাছের সম্পর্ক। ‘পিপল ম্যাগাজিন’ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার স্ত্রী লরা বুশ বলেন ‘জর্জ নাতনিদেরও খুব আদর দেন। তাদের সঙ্গে ভিডিওগেম খেলতে বা আইসক্রিম খেতেও সব সময় রাজি’।

হালের আলোচিত-সমালোচিত প্রেসিডেন্ট  ডোনাল্ড ট্রাম্পও বাবা হিসেবে খুব দায়িত্ববান। বিয়ে করেছেন তিনবার। প্রথম স্ত্রী চেক অ্যাথলেট, মডেল ইভানা জেলনিকোভার সঙ্গে তিনটি সন্তান- ডোনাল্ড জুনিয়র, ইভাঙ্কা ও এরিক। ১৯৯০ সালে তাদের বিয়ে ভেঙে যায়। কিন্তু তিন সন্তানকেই বড় করে তোলার দায়িত্ব নিয়েছেন ট্রাম্প। তারাও ট্রাম্পের বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য পরিচালনায় বাবাকে সাহায্য করেন।

একবার সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড জুনিয়র বলেছিলেন, বাবার সঙ্গে কোনোদিনই বাড়ির পেছনের বাগানে বেসবল খেলা, বা বার বি কিউ করার মতো সম্পর্ক ছিল না। সাধারণত ব্যবসার জায়গাতেই তারা একসঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। বোর্ডরুমে বাবা যখন কোনো ব্যবসায়িক চুক্তি করছেন, তারা তখন হয়তো খেলনা ট্রাক নিয়ে মেঝেতে খেলা করেছেন।

তার ভাই এরিকও বলেছেন, তাদের জন্য বাবার কোনো সময় ছিল না। তিনি বড় হয়েছেন ভাই ডোনাল্ডের সঙ্গে। এখন এরিক ট্রাম্পের সংস্থার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট। প্রায়ই বাবার সঙ্গে সফরে যান, যার সবই ‘বিজনেস ট্রাভেল’। তবে এর মধ্যেও দুঃখের কাঁটা কি কোথাও খচ খচ করে না!‌

ডোনাল্ড জুনিয়র ১২ বছর বয়সে ‘ভ্যানিটি ফেয়ার’ পত্রিকাকে সাক্ষাৎকারে বলে ফেলেছিলেন, ‘বাবা টাকা ছাড়া জীবনে কাউকে ভালোবাসেন না, এমনকি নিজেকেও না!‌’

কোনো বাবাই চাইবেন না, তার ছেলে এমন কথা বলুক। কোনো বাবাই শুধু একটি দিনেও থাকতে চাইবেন না। কোনো সন্তানও বছরে মাত্র একটি দিন বাবার জন্য অপেক্ষায় থাকতে চাইবে না।

একটি দিন নয়, সারা বছর বাবা-মায়ের জন্য, সন্তানের জন্য, পরিবারের জন্য। তাহলেই দিনগুলো, মাসগুলো, বছরগুলো এবং সমগ্র জীবনটাই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠবে!

বাংলা‌দেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।