ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

লোকগবেষণায় শামসুল আরেফীনের অবদান অমর-অক্ষয় হয়ে থাকবে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৭
লোকগবেষণায় শামসুল আরেফীনের অবদান অমর-অক্ষয় হয়ে থাকবে নিবিষ্ট মনে গ্রন্থ পাঠ করছেন লোকগবেষক শামসুল আরেফীন

স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের লোকগবেষণায় যারা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন বা রেখে চলেছেন, শামসুল আরেফীন তাদের অন্যতম। চট্টগ্রামে এই লোকগবেষণায় তার নাম সর্বাগ্রে উচ্চারণযোগ্য। চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের শতাধিক বিলুপ্ত ও বিস্মৃত লোককবি আবিষ্কার ও তাদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে গ্রন্থ প্রণয়ন করে তিনি লোকগবেষণায় যে অবদান রেখেছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য ও বিরল। এই অবদান বাংলা সাহিত্যে অমর ও অক্ষয় হয়ে থাকবে।

১৯৭৭ সালের ২০ নভেম্বর চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার সদর এলাকার আবদুল মোবিন ও তমনারা বেগম দম্পত্তির ঘরে শামসুল আরেফীনের জন্ম। ’৯০ দশকের প্রথমে ছড়া-কবিতা দিয়ে লেখালেখি শুরু।

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দৈনিক, সাহিত্যপত্রিকা, বিভিন্ন শিশুতোষ পত্রিকা ও ছড়াসংকলনে অনেক ছড়া ও কিশোর কবিতা লিখেছেন। ’৯০ দশকের মাঝামাঝি লোকগবেষণায় সম্পৃক্ত হন। বিলুপ্ত ও বিস্মৃতপ্রায় লোককবি ও তাদের রচনা উদ্ধারে দিনের পর দিন চট্টগ্রামের পথে-প্রান্তরে হেঁটে বেড়িয়েছেন এবং বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে ঘুরেছেন।

তার আবিষ্কৃত বা বর্ণিত বিলুপ্ত ও বিস্মৃতপ্রায় লোককবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-আস্কর আলী পণ্ডিত, শাহ্ আবদুল জলিল সিকদার, আমানুল্লাহ, আতর আলী, আবুল খায়ের নক্সবন্দি, ঈছা আহমেদ নক্সবন্দি, খাদেম আলী, আব্দুর রশিদ, আবদুল খালেক, ক্ষেমেশ চন্দ্র রক্ষিত, মোজহেরুল আলম ওরফে ছাহেব মিয়া, বজলুল করিম মন্দাকিনি, শেখ মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন, কাজল শীল, বাদশা আলম, ফকির ইয়াছিন শাহ্, হেফাজতুর রহমান খান, আবদুল জব্বার মীমনগরী, আবদুস সবুর মাখন, গোলাম গণি চৌধুরী, সাইদ মিয়া, আবদুল আজিজ পণ্ডিত, আতিকউল্লা শাহ্, মুন্সী আমিন শরীফ, মোরশেদ চাঁদ দরবেশ, দলিলুর রহমান পণ্ডিত, করিম শাহা, আফতাব উদ্দিন, আবদুল লতিফ শাহ্, আবদুল্লাহ বাঞ্জারামপুরী, মকবুল আহমদ পণ্ডিত প্রমুখ। তিনি আলী রজা ওরফে কানুফকির, আবদুল গফুর হালী প্রমুখকে নিয়েও আলোচনা করেন।

লোকগবেষণালব্ধ ৯টি গ্রন্থসহ শামসুল আরেফীনের মোট ১২টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। লোকগবেষণালব্ধ ৯টি গ্রন্থের মধ্যে ‘আস্কর আলী পণ্ডিত: একটি বিলুপ্ত অধ্যায়’ চট্টগ্রামের বলাকা প্রকাশন থেকে ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়।  

আস্কর আলী পণ্ডিত চট্টগ্রামের একজন শক্তিমান লোককবি। ১৮৪৬ সালে সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় এলাকায় জন্মগ্রহণ করে পরবর্তীতে পটিয়া উপজেলার শোভনদণ্ডি গ্রামে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। ১৯২৭ সালের ১১ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। ডালেতে লড়িচড়ি বৈও চাতকি ময়নারে, কী জ্বালা দি গেলা মোরে, এক সের পাবি দেড় সের খাবি ঘরত নিবি কী, কী লইয়া যাইয়ুম ঘরে সন্ধ্যাকালে আইলাম বাজারে প্রভৃতি তার রচিত কালজয়ী গান। তিনি অজস্র গানসহ একাধিক পুঁথিও রচনা করেন।

শামসুল আরেফীন এই বিলুপ্ত লোককবি সম্পর্কে আলোচনা ও তার প্রায় ৩০০ গান-কবিতা নিয়ে প্রকাশ করেন ‘আস্কর আলী পণ্ডিত: একটি বিলুপ্ত অধ্যায়’। আলোচনাটি পত্রিকায় ধারাবাহিক আকারে প্রকাশিত হয়। কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাশিল্পী জাকির তালুকদার ২০০৬ সালের ১১ আগস্ট একটি দৈনিক পত্রিকায় ‘আস্কর আলী পণ্ডিতের ভাবের জগত’ শিরোনামে গ্রন্থটির একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেন। তিনি প্রবন্ধটিতে লিখেন- ‘বাংলাদেশের অনেক বাউল ও লোককবির মতো আস্কর আলী পণ্ডিতেরও লোকবিস্মৃতির আশংকা দেখা দিয়েছিল। এ বিষয়ে জীবৎকালে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ক্রমশ বাংলাদেশের বিবেক হয়ে ওঠা আহমদ ছফা। তিনি চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংগঠন, লেখক ও গুণীজনদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন, আস্কর আলী পণ্ডিতের রচনা ও সঙ্গীতের আবাদ জারি রাখার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে। কিন্তু তার আবেদনে প্রতিষ্ঠিত কেউ এগিয়ে আসেননি। এগিয়ে এসেছেন তরুণ কবি ও স্বউদ্যোগী-স্বনিয়োজিত গবেষক শামসুল আরেফীন। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে তিনি সংগ্রহ করতে পেরেছেন আস্কর আলী পণ্ডিতের আংশিক জীবনী এবং ২৫৪টি গান। আস্কর আলী পণ্ডিতের জীবদ্দশায় প্রকাশিত কোনো গীতিগ্রন্থই অখণ্ড অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পঞ্চসতী প্যারজান, জ্ঞানচৌতিসা, বর্গসাস্ত্র, হাফেজ বাহাদুর, নন্দবিলাস প্রভৃতি গ্রন্থের বিভিন্ন ছিন্ন অংশ এবং স্থানীয় মানুষের স্মৃতি থেকে সংগৃহীত গানগুলোর সঙ্গে আস্কর আলী পণ্ডিতের সংক্ষিপ্ত জীবনকাল নিয়ে শামসুল আরেফীন প্রকাশ করেন ‘আস্কর আলী পণ্ডিত: একটি বিলুপ্ত অধ্যায়’ গ্রন্থটি। ১১২ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটিই এক বিস্মৃতপ্রায় লোককবিকে বিস্মৃতির অতল থেকে ফিরিয়ে আনার এখনো পর্যন্ত একমাত্র উদ্যোগ-স্মারক’।

গ্রন্থটির মাধ্যমে জানা যায়, শামসুল আরেফীনের তথ্যসহায়তা নিয়ে আস্কর আলী পণ্ডিত সম্পর্কে ২০০৪ সালের ৩০ এপ্রিল ‘মাটির গান’ নামে একটি অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে সম্প্রচারিত হয়। তাতে শামসুল আরেফীন আলোচক ছিলেন।

‘বাঙলাদেশের লোককবি ও লোকসাহিত্য ১ম খণ্ড’ বলাকা প্রকাশন ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। ১২৮ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থে ৯ জন লোককবি সম্পর্কে আলোচনা ও তাদের রচনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখানে মোয়াজ্জম রচিত ‘ভেলুয়া’ পুঁথি লিপিবদ্ধ করা হয়। পত্রিকায় মাহমুদ শাওন এ গ্রন্থের আলোচনা লিখেন।

‘বাঙলাদেশের লোককবি ও লোকসাহিত্য ২য়-৪র্থ খণ্ড’ বলাকা প্রকাশন থেকে ২০০৮ জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। ২৪০ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থে ১৭ জন লোককবি সম্পর্কে আলোচনা ও তাদের রচনা স্থান পেয়েছে। একটি জাতীয় দৈনিকে তারেক রেজা ‘উৎসের দিকে ফেরা’ শিরোনামে গ্রন্থটি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি লিখেন-‘গ্রামজীবনের নানা অনুষঙ্গে সমৃদ্ধ লোককবিদের সাহিত্যভাণ্ডার। শামসুল আরেফীনের বাঙলাদেশের লোককবি ও লোকসাহিত্য ২য়-৪র্থ খণ্ড বইটি লোকসাহিত্যের বিচিত্র বিষয় প্রকরণের সঙ্গে আমাদের নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়। লেখক লোককবিদের জীবনাদর্শন ও শিল্পভাবনা সম্পর্কেও বেশ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন, যা তাদের কবিতা অনুধাবনে সাহায্য করবে। এ গ্রন্থে ১৭ জন লোককবি ও তাদের রচনা সংকলিত হয়েছে। গ্রন্থভুক্ত কবিদের অধিকাংশই চট্টগ্রামের। এছাড়া বরিশাল, পটুয়াখালী, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ও নোয়াখালী অঞ্চলের কবিরাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। সংকলিত রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে জারিগান, বারমাসি, উপদেশ গীত, পুঁথি, পালাগান, আধ্যাত্মিক বিষয় অবলম্বনে সাধকতত্ত্ব। জীবন সম্পর্কে গভীরতর উপলব্ধিকেই ছন্দবদ্ধ করেছেন লোককবিরা। সেই সঙ্গে আধ্যাত্মিক চেতনাকে সম্পৃক্ত করেছেন তারা। বিলুপ্ত লোককবি আবদুল্লাহ বাঞ্জারামপুরীর দুটি চরণ: মানুষের ভিতরে মানুষ তার ভিতরে আছে সাঁই/ যে চিনিল সে কিনিল মাইজভাণ্ডার খেলে কানাই’।

‘আস্কর আলী পণ্ডিতের দুর্লভ পুথি জ্ঞানচৌতিসা ও পঞ্চসতী প্যারজান (সংগ্রহ ও সম্পাদনা)-বলাকা প্রকাশন থেকে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। ২৮০ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থ আস্কর আলী পণ্ডিতের জ্ঞানচৌতিসা ও পঞ্চসতী প্যারজান পুঁথিদ্বয় আলোচনা সহকারে সম্পাদিত। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের তুখোড় পণ্ডিত যতীন সরকার গ্রন্থটি পাঠ করে ‘আশীর্বাদ’ শিরোনামে একটি আলোচনা করেন। ২০১১ সালের ২৯ জুলাই ও ২০১২ সালের ২২ জুন আলোচনাটি দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত হয়। যতীন সরকার তাতে লিখেন: ‘জ্ঞানচৌতিসা নামে সৈয়দ সুলতান প্রমুখ কবিবৃন্দ যেসব কাব্য রচনা করেছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় এ-যুগেও আস্কর আলী পণ্ডিতের (১৮৪৬-১৯২৭) জ্ঞানচৌতিসা রচিত। ১৯৫১ সালে এই জ্ঞানচৌতিসা প্রথম মুদ্রিতরূপে প্রকাশিত হয়। এতে বোঝা যায়: বিশ শতকের গ্রামীণ পাঠকদের কাছেও এর সমাদর রয়ে গেছে এবং এই গ্রামীণ পাঠকরাই বাংলা কাব্যের মূলধারাটিকে আজও রক্ষা করে চলেছেন। শামসুল আরেফীন ১৯৫১ সালে মুদ্রিত জ্ঞানচৌতিসা সংগ্রহ ও সম্পাদনা করে প্রকাশ করেছেন ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এর মধ্য দিয়ে একটি অসাধারণ সারস্বত দায়িত্ব পালন করে তিনি আমাদের ধন্যবাদার্হ হয়েছেন’।

যতীন সরকার আরও লিখেন: ‘শামসুল আরেফীনের সম্পাদিত ও সংগৃহীত জ্ঞানচৌতিসা ও পঞ্চসতী প্যারজান হাতে পেয়ে আমি উল্লসিত হয়ে উঠেছিলাম। কারণ এই দুটো পুঁথি পাঠ করে আমার মনে হয়েছিল যে আরেফীনের সংগৃহীত পুঁথি দুটোতেও মূলধারার কবিতারই সন্ধান পাওয়া গেল। বয়সে জ্যেষ্ঠ হওয়ার সুবাদেই কনিষ্ঠ শামসুল আরেফীনকে আমি প্রাণভরে আশীর্বাদ জানাই। তার অনুসন্ধিৎসা তাকে সিদ্ধির দিগন্তে পৌঁছে দিক, আস্কর আলী পণ্ডিতের মতো আরও আরও বিস্মৃত-প্রায় কবির পরিচয় উদ্ঘাটন করে তিনি বাংলা সাহিত্যে গবেষণার জাড্য দূর করতে যত্নবান হোন এই আমার কামনা’।

বাংলাদেশের বিস্মৃতপ্রায় লোকসঙ্গীত ১ম খণ্ড (সংগ্রহ ও সম্পাদনা)-বলাকা প্রকাশন থেকে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়।   ৪৩২ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থে ২২ জন লোককবির ১৬০০ গান, শহিদে এমাম নামে ১টি জারি গান, জাহাঁগীর চরিত নামে ১টি জীবনীকাব্য, মেঘনা নদী ভাঙ্গনে হাতিয়া দ্বীপের করুণ কাহিনী নামে ১টি লোককবিতা অন্তর্ভুক্ত। এ গ্রন্থ নিয়ে কবি ও প্রাবন্ধিক জয়নাল আবেদীন শিবু ‘বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধকরণে শামসুল আরেফীনের সংগ্রহ ও সম্পাদনার এক ঋদ্ধভাণ্ডার বাংলাদেশের বিস্মৃতপ্রায় লোকসঙ্গীত’ শিরোনামে একটি আলোচনা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেন দৈনিক পূর্বকোণে। গ্রন্থটিতে আরেফীনের লেখা ভূমিকা ‘লোককবি ও লোকসঙ্গীত’ শিরোনামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন সম্পাদিত ‘উলুখাগড়া’-ফেব্রুয়ারি ২০১২ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। তারও আগে ভূমিকাটি রাজশাহীতে ‘লোকসঙ্গীতের স্বরূপ সন্ধানে’ শিরোনামে মোজাফ্ফর হোসেন সম্পাদিত ‘শাশ্বতিকী’-একুশে বইমেলা ২০১১ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।

বাঁশরিয়া বাজাও বাঁশি (পল্লীগানের গ্রন্থ)-২০১২ সালে ‘বাংলাদেশের বিস্মৃতপ্রায় লোকসঙ্গীত ১ম খণ্ড’ গ্রন্থভুক্তির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থে আরেফীন রচিত কিছু গান লিপিবদ্ধ হয়। আরেফীন বাংলাদেশ বেতারের অনুমোদিত গীতিকার। তিনি আধুনিক ও পল্লীগান রচনা করেন। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শব্দসৈনিক প্রবাল চৌধুরী ও মৃণাল কান্তি ভট্টাচার্য, এছাড়া সাইফুদ্দিন মাহমুদ খান, আবদুর রহিম, পাপিয়া আহমেদ, জালাল আহমেদ প্রমুখ তার গানে সুরারোপ করেছেন। তার গান গেয়েছেন প্রতীমা ঘোষ দস্তিদার, সুপর্ণা রায়, আসমা পারভিন, এস এম জাহাঙ্গীর সরকার, অনামিকা তালুকদার, রাজিব ভট্টাচার্য, সুতপা চৌধুরী মুমু প্রমুখ।

আস্কর আলী পণ্ডিত: ৮৬ বছর পর (সংগ্রহ ও সম্পাদনা) বলাকা প্রকাশন থেকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। ১৬০ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থে আস্কর আলী পণ্ডিতকে নিয়ে লেখা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লেখকদের প্রবন্ধ, আস্কর আলী পণ্ডিতের রচনা, তাকে নিয়ে পত্রিকায় চলা তর্ক-বিতর্ক, তার সম্পর্কিত চিঠিপত্র অন্তর্ভুক্ত হয়।

গাঙ্গেয় বদ্বীপের অনন্য সঙ্গীতজ্ঞ: স্বপন কুমার দাশ (সম্পাদনা)-সরগম একাডেমি আগ্রাবাদ থেকে ২০১৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়। ৩২ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থে স্বপন কুমার দাশকে নিয়ে লেখা ৮ জনের গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ স্থান পায়। ড. মনিরুজ্জামান, ড. মো. আবুল কাসেম, ড.এম আর মাহবুব, কল্যাণী ঘোষ প্রমুখ প্রবন্ধ লিখেছেন।

আঠারো শতকের কবি আলী রজা ওরফে কানুফকির-বলাকা প্রকাশন থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়।   ১২০ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে বেশ প্রশংসিত হয়। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে আলী রজার মৃত্যুবরণের প্রায় ১৮০ বছর পর ২০১৭ সালে তার জীবন ও সাহিত্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করে প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ এটি।

চন্দনাইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাছবাড়িয়া নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা শামসুল আরেফীনের ১২টি গ্রন্থের মধ্যে অন্য ৩টি গ্রন্থ হলো আহমদ ছফার অন্দরমহল (বলাকা, ২০০৪), রুবাইয়াত-ই-আরেফীন (কাব্য; বলাকা, ২০১৪) এবং বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার দুর্লভ দলিল (বলাকা, ২০১৬)।

শামসুল আরেফীন লোকগবেষক হলেও কবি হিসেবেও পরিচিত। তার ২৫৯টি রুবাই সম্বলিত ‘রুবাইয়াত-ই-আরেফীন’ কাব্য নিয়ে শাহিদ হাসান ‘শামসুল আরেফীনের রুবাই: উত্তর ঔপনিবেশিক চেতনায় বহমান’ শিরোনামে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রভাংশু ত্রিপুরা এই কাব্য সম্পর্কে বলেন: “খৈয়াম এবং হাফিজের ঘরানাকে অস্বীকার করে বাংলার লোকঐতিহ্য ও মিথ প্রভৃতি ব্যবহার করে শামসুল আরেফীন রুবাই রচনা করেছেন। এভাবে যে রুবাই রচনা করা যায়, তা আরেফীন প্রথম দেখালেন। গ্রন্থভুক্ত প্রতিটি রুবাইয়ে ছন্দ, অন্ত্যমিলও একেবারে নির্ভুল। রুবাইগুলোতে জীবন ও জগতের অজস্র দিক উন্মোচিত হওয়ায় মহাকাব্যের স্বাদও পাওয়া যায়। বস্তুত ‘রুবাইয়াত-ই-আরেফীন’ বাংলা সাহিত্যে নতুন সংযোজন। তা বাংলা সাহিত্য পরিমলে নবদিগন্তের সূচনা করেছে”।

শামসুল আরেফীন তার লোকগবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ লাভ করেন আস্কর আলী পণ্ডিত পদক-২০১১, শুভেচ্ছা স্মারক : দরিয়ানগর কবিতামেলা-২০১২,  চট্টগ্রাম নবকুঁড়ি পদক-২০১৫ এবং আহমদ ছফা সম্মাননা-২০১৫।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।