ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

অনন্য বেলাল চৌধুরী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৮
অনন্য বেলাল চৌধুরী বেলাল চৌধুরী ও তার বইয়ের প্রচ্ছদ। ছবি: সংগৃহীত

কবি-লেখক-সম্পাদকের পরিচিতি ছাপিয়ে উষ্ণ, হৃদয়বান, মজলিসি বেলাল চৌধুরী অনেক বেশি স্পষ্ট ও অনন্য। উভয় বাংলার কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে ছিল তার সুনিবিড় সংযোগ। মানুষকে আপন করে কাছে টেনে নেয়ার জাদুকরী গুণ ছিল তার। সামান্য পরিচয়কেও দীর্ঘদিন স্মৃতিপটে ধরে রাখতে পারতেন তিনি।

তখন তিনি 'ভারত বিচিত্রা'-সম্পাদক, বসতেন ধানমন্ডির ২নং সড়কে। আশির দশকের সেই দিনগুলোতে তিনি পেরিয়ে এসেছেন তার জীবনের পশ্চিমবঙ্গ পর্ব।

সাপ্তাহিক সচিত্র সন্ধানী'র দিনগুলোও তখন অতীত। একটি দূতাবাসের অবাণিজ্যিক সাময়িকী নিয়ে তখন তার প্রাত্যহিক কাজ-কারবার।  

কিন্তু কে বলবে, তিনি একটি ডিপ্লোম্যাটিক ভবনের চৌহদ্দিতে! বারোয়ারী মানুষের ভিড়। লেখা আর ভিসার তদবির চলছে পাশাপাশি। জনসংযোগের এমন ঈর্ষণীয় ক্ষমতা খুব কম মানুষের মধ্যেই দেখা যায়।  

কতো রকম মানুষের কতো রকম বিষয় যে বেলাল ভাই সামাল দিয়েছেন, ভাবলে অবাক হতে হয়। এসব নানাবিধ কাজ করেও তিনি 'ভারত বিচিত্রা'কে উচ্চাঙ্গের পত্রিকায় পরিণত করেন। বেলাল ভাই জানতেন, কার হাতে কোন লেখাটি ভালো হবে।  

কাকে কোন লেখার সুযোগ দিতে হবে। আমাকে দিয়ে চট্টগ্রামে প্রায়-অজ্ঞাতবাসে থাকা সুচরিত চৌধুরীর গল্প, স্মৃতি ইত্যাদি সংগ্রহ করেও ছাপিয়েছেন। এমনই তীক্ষ্ণ নজর দিয়ে তিনি দুর্লভ লেখা সংগ্রহ করিয়েছেন।

অফিস ছাড়াও পুরানা পল্টনে তার পুরনো বাড়িতে গিয়েছি, যেখানে তার ছোট ভাই সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরী বসবাস করতেন। দুই ভাইয়েরই ছিল বিশাল জনসংযোগ সাম্রাজ্য। হাজার মানুষের শত রকমের তদবিরে চৌধুরী ভ্রাতৃদ্বয় ছিলেন অক্লান্ত।

কখনো শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোডে কফিপানের জন্য বসেছি আমরা। সেসব দিন আজকের মতো ভিড়াক্রান্ত ছিল না; 'লাটিমী' নামে একটি খাবারঘরে আমরা নিয়মিত বসেছি। দোকানটি এখন আর নেই। কিন্তু তার আলাপের তরঙ্গ এখনো তাজা। কত মানুষের কত বিচিত্র তথ্য যে তিনি জানতেন! 

পশ্চিমবঙ্গের কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের সম্পর্কে বেলাল চৌধুরীর ছিল এনসাইক্লোপেডিক জ্ঞান। একটি উল্লেখযোগ্য সময় কলকাতায় বসবাসের সুবাদে সেখানকার সাহিত্য-পরিমণ্ডলের যাবতীয় তথ্য ছিল তার নখাগ্রে।  নিখুঁত ও নিটোল বিবরণে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিষয়কে তুলে ধরতে পারতেন। কবি বিষ্ণু দে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি রিখিয়া ও উশ্রী নদীর যে নান্দনিক চিত্র উপস্থাপন করেন, তা এখনো আমার স্বপ্নে কড়া নাড়ে।

বেলাল চৌধুরীর মৃত্যুর পর আমার সংগ্রহে 'প্রাণের পত্রাবলি' নামে তাকে লেখা দুই বাংলার কবি-লেখকদের পত্রগুচ্ছ সংগ্রহটি আবার হাতে নিয়ে স্মৃতিস্রোতে ভেসে গেলাম। আলাপে-আড্ডায় তিনি যতো মানুষের গল্প করেছেন, তারও চেয়ে বেশি মানুষের সঙ্গে ছিল তার সখ্য, সংযোগ ও সম্পর্ক। বেলাল ভাইকে লেখা চিঠির হাত ধরে যেন খুলে গেছে একেকজন চেনা মানুষের অজানা-অদেখা জগৎ।

বেলাল চৌধুরীর মৃত্যুতে একটি বর্ণময় অধ্যায়ের অবসানই শুধু হয়নি, বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যের সংযোজক সেতুটিও কেঁপে উঠেছে। তার মতো বর্ণিল মানুষের দেখা খুব সহজেই পাওয়া সম্ভব হবে না। বহু বহু বছর পর বেলাল চৌধুরীর মতো অনন্য মানুষের দেখা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৮
এমপি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।