ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

‘ব্যথিত’ পার্থ

ডঃ আবুল হাসনাত মিল্টন, অস্ট্রেলিয়া থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১১
‘ব্যথিত’ পার্থ

বাঙালির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক চর্চ্চার প্রতিচ্ছবি শেখ হাসিনা। তিনি কেবল আওয়ামী লীগ সভানেত্রীই নন, নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীও।

তিনি গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।

অস্ট্রেলিয়ার পার্থে এসেছেন শেখ হাসিনা। উদ্দেশ্য কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের সম্মেলনে যোগদান। পার্থ অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমের এক রাজ্য। বাঙালি অধ্যুষিত সিডনি-মেলবোর্ন থেকে পাক্কা পাঁচ ঘন্টার ফ্লাইট। সিংগাপুর থেকে আসতে লাগে পাক্কা পাঁচ ঘন্টা। বাঙালি অধ্যুষিত সিডনি-মেলবোর্ন থেকেও লাগে একই সময়। সেই দূরত্ব ভেঙ্গে শ’দুয়েক বাঙালি উড়ে এসেছিলেন প্রিয় নেত্রীকে দেখতে। জনমানুষের এই নেত্রী ছিলেন প্যান প্যাসিফিকে। আর তাঁর সফরসঙ্গীরা ছিলেন উল্টোদিকের নভোটেলে। সেখানেই মধ্যরাত অব্দি মিলেছে বালী বাঙালিদের জমজমাট হাট। প্রিয় নেত্রীকে এক নজর দেখার জন্যে আশায় বুক বেঁধেছিলেন।

শেষাবধি দূর দূরান্ত থেকে উড়ে আসা বাঙালিদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে শনিবার বিকেলে। বিকেল চারটা খেকে বিভিন্ন দলে শিশু-নারী-পুরুষ ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির মানুষদের সাথে শেখ হাসিনা দেখা দিয়েছেন হাসি মুখে। অথচ পরিশ্রমের ভারে তিনি ছিলেন ক্লান্ত। ধৈর্য্য সহকারে তিনি বাংগালীদের সুখ-দূঃখ শুনেছেন দু’ঘন্টা ধরে। স্হানীয় বাংলাদেশ দূতাবাস দর্শনার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করে। আমলা ও কুটনীতিকরা তালিকাটা কাটছাঁট করার চেষ্টা চালান বারবার। প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নিয়েও দূতাবাস বিভিন্ন ক্যাচাল-প্যাঁচাল করে। শংকর রাজনৈতিক মতাদর্শের সংগঠনকে ’হাতে-পায়ে’ ধরে দূতাবাস আয়োজন ক’রে প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা। অথচ বংগবন্ধু পরিষদ এবং অস্ট্রেলিয়া শাখা আওয়ামীকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে দূতাবাস। সামান্যতম যোগাযোগ রাখা হয়নি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক আদর্শের কোনো সংগঠনকে।

অস্ট্রেলিয়ার বাঙালি অভিবাসীদের মধ্যে রয়েছে হাজার খানেকের বেশি গুণী সন্তান। নামীদামী লেখক-সাংবাদিক ছাড়াও আছেন বিজ্ঞানী, গবেষক। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর সম্পর্কে  সব  বাঙালিরই অল্প-বিস্তর জানা আছে। কেউ নিশ্চিত ছিলেন না পার্থে নিজ খরচে এলে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ মিলবে। এই গুনী বাঙালিদের আমন্ত্রন-নিমন্ত্রন কোনটাই জানায়নি দূতাবাস।
বিজ্ঞানী নিজাম ও ডঃ একে আজাদ, কৃষিবিদ আবেদ চৌধুরী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সুশাসন বিশেষজ্ঞ ডঃ রফিক প্রমূখ। তালিকাটা নেহায়েত ছোট নয়। উপেক্ষিত হয়েছেন আওয়ামী ঘরাণার বুদ্ধিজীবী খ্যাতিমান এম আর আক্তার মুকুলের জামাতা কাইয়ুম পারভেজ, ডঃআবুল হাসনাত মিলটন সহ আরো অনেকে।

বাঙালিরা এখন অস্ট্রেলিয়ার মূলধারার রাজনীতিতে হাটিহাটি পা পা করছে। পুরো অস্ট্রেলিয়ায় একমাত্র নির্বাচিত বাঙালি জনপ্রতিনিধি প্রবীর মৈত্র। খ্যাতিমান রণেশ মৈত্রের সন্তান প্রবীর মৈত্র এই অস্ট্রেলিয়ায় বাংগালীদের গণতান্ত্রিক মানসিকতা ও চর্চার প্রতীক। অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন অগ্রজপ্রতিম লেখক ও খ্যাতিমান সাংবাদিক আবিদ রহমান। বাংলা নিউজের প্রদায়ক সম্পাদক আবিদ ভাই নিজ খরচে উড়ে এসেছেন পার্থে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সংগ্রহে। উনাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততা থাকলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মণির সাথে গুণী সব বাঙালির জন্য এক চা-চক্রের আয়োজন করা যেতো। কিছুই করেনি দূতাবাস।

নিজ চ্যানেল ও পত্রিকার খরচে আসা তরুন সাংবাদিকেরা মিডিয়া সেন্টার থেকে বেরিয়ে অসহায় মধ্যরাতে প্রবাসী বাংগালীদের কৃপানির্ভর থেকেছেন। একটি বাড়তি গাড়ি ভাড়া কী সাধ্যের অতীত ছিলো। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের বিল অডিট হলে দেখা যাবে সিংহভাগ ব্যয় হয়েছে দূতাবাসের কর্মাকর্তাদের আবাসন-আপ্যায়ন ও যাতায়াতে।

পার্থ সফর শেষ হলো দূতাবাসের বিমাতাসুলভ হামবড়া ভাবের বিড়ম্বিত ও বিব্রত হওয়ার মধ্য দিয়ে।

ইমেলঃ [email protected]
বাংলাদেশ সময় ১৯৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।