ডিজিটাল বাংলাদেশ এই প্রপঞ্চটি বিগত দশকে দেশে সবচেয়ে আলোচিত একটি বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিানার নেতৃত্বে ২০০৮ সালে সরকার দেশ পরিচালনার শুরু থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ব্যাপক পরিসরে কাজ শুরু করে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১ কোটি লোককে বিভিন্ন প্রকার ভাতা ও অনুদান প্রদান করে থাকে। ভাতা গ্রহীতার নাম অন্তর্ভুক্তিকরণ, যাচাই ও ভাতা বিতরণ কার্যক্রম নিয়ে নান ধরনের ভোগান্তির কথা প্রচলিত ছিলো। সকল ধরনের ভাতাকে জি টু পি (গভর্নমন্টে টু পিপল) এর আওতায় সরাসরি সুবিধাভোগীদের হাতে পৌঁছে দিতে চলতি অর্থবছরের জুন মাসের মধ্যে শতভাগ ভাতা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদানের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এটুআই এর সহযোগতিায় ২০১৮ সালে সকল ভাতাভোগীদের ডিজিটাল তথ্যভান্ডার তৈরির পাইলটিং শুরু হয়। ২০১৮ সালে বিশ্বব্যবাংকের সহযোগিতায় সমাজসেবা অধিদফতেরর মাধ্যমে ক্যাশ ট্রান্সফার মডার্নাইজেশর (সিটিএম) প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়। যার মাধ্যমে ৪৯ লক্ষ বয়ষ্ক, ২০ লক্ষ ৫০ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা, ১৮ লক্ষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও ১ লক্ষ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী উপবৃত্তিসহ মোট ৮৮ লক্ষ ৫০ হাজার ভাতাভোগীর তথ্য ম্যানেজম্যান্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সকল ভাতাভোগীর মোবাইলে হিসাব খোলা হয়েছে। যার ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভাতাভোগীরাও এখন বিনা বিড়াম্বনায় ঘরে বসে মোবাইলের মাধমে প্রতিমাসে ভাতা পেয়ে যাবেন। সরকারের সেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে এটি একটি মাইলফলক অর্জন।
ভাতা কার্যক্রমের পাশাপাশি মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর সংস্থা সমূহের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা ও অন্যান্য সেবা কার্যক্রমেও এসেছে ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া। সকল মন্ত্রণালয়ের সেবাসমূহকে একটি সিঙ্গেল ইন্টিগ্রেটেড ডিজিটাল সার্ভিস প্ল্যাটফর্মের আওতায় আনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, আইসিটি বিভাগ ও এটুআই এর সমন্বয়ে প্রণীত রোডম্যাপ অনুযায়ী সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার আটটি ডিজিটাল সার্ভিসের ডিজাইন করা হয়েছে। অনুদান, ফেলোশিপ, বৃত্তি, শিক্ষা উপবৃত্তি, ইন্টার্ণশীপ ব্যবস্থাপনা; হাসপাতাল এবং প্রতিবন্ধী সেবা ব্যবস্থাপনা সিস্টেম; উৎপাদন, ব্র্যান্ডিং এবং বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনা; সচেতনতা তৈরি ও সহায়ক যন্ত্র ব্যবস্থাপনা; ট্রেনিং ও আবাসন ব্যবস্থাপনা; প্রতিবন্ধী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা ব্যবস্থাপনা; শিশু ব্যবস্থাপনা সিস্টেম এবং সামাজিক নিরাপত্তা ডেলিভারি অ্যাপ এ আটটি ডিজিটাল সার্ভিসের মাধ্যমে সমাজসেবা অধিদফতর, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, নিউরোডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ ও শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট এর সেবাসমূহ একটি সুইচের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। বর্তমানে এ আটটি সেবাকে ডিজিটালাইজড করার কাজ চলমান রয়েছে হচ্ছে। এই ইন্টিগ্রেটেড ডিজিটাল সার্ভিস ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম বাস্তবায়িত হলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার সেবাসমূহের শতকরা ৮৫ ভাগ ডিজিটাল হবে এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সেবাগ্রহীতাগণ বিনা ভোগান্তিতে সকল ধরনের সেবা পাবেন।
দুই.
বার্ষিক উদ্ভাবনী কর্মপরিকল্পনার আওতায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমকে ডিজিটাল করতে অর্থায়ন ব্যবস্থাপনা সিস্টেম সফটওয়ার, অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম ফর ডিসঅ্যাবিলিটি স্কুল অ্যাপ্রোভাল সফটওয়ার, থেরাপি সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়ার, অনলাইন ট্রেইনিং ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেম ফর সোশ্যাল সার্ভিস একাডেমি সফটওয়ার ও ই-বুলেটিন চালু করা হয়েছে। এ সফটওয়ারসমূহের মাধ্যমে সেবা প্রত্যাশিদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রমেও স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা এসেছে। সফটওয়ারের পাশাপাশি দুস্থ, অসহায়, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক সাহায্য ও চিকিৎসা অনুদান প্রদানের কার্যক্রমও অনলাইনে চালু করা হয়েছে। ক্যান্সার, কিডনি, লিভারসিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি সহজিকরণে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। এর ফলে প্রায় পাঁচ লক্ষ সেবা প্রত্যাশী উপকৃত হচ্ছেন।
তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হচ্ছে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রতিবন্ধী শণাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করেছে, এ কাজ চলমান রয়েছে। এ তথ্য ভান্ডার ব্যবহার করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও শিক্ষার্থীদের ভাতা-শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদানের পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং নিরক্ষরদের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ১০৯ টি পাঠ্য বইয়ের ডিজিটাল টকিং বুক চালু করা হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদর জন্য ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও বিতরণ করা হচ্ছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের চলাচল নিরাপদ করার জন্য বিভিন্ন আধুনিক সুবিধা সম্বালিত ডিজিটাল র্স্মাট হোয়াইট ক্যান বিতরণ করা হচ্ছে।
করোনা মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতিতে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে তার সরাসরি শিকার অসহায় জনগোষ্ঠী। সরকার ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়েছে। সুবিধাবঞ্চিতদের কাছে সরাসরি সেবা পৌঁছে দিতে ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকল্প নেই। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ ও এটুআই এর সহযোগতিায় শতভাগ সেবা কার্যক্রম ডিজিটাল করার জন্য কাজ করছে। চলতি অর্থবছরের মধ্যে শতভাগ ভাতাভোগী মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ভাতা পাবেন। সরকারের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী, এনজিও, বেসরকারি উদ্যোক্তা ও সচেতন মহলের সম্মিলিত প্রয়াস ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা সকলের কাছে পৌঁছে দিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
লেখক: তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২১
নিউজ ডেস্ক