ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

‘সবাই ভুলে গেছে, এখন আমার খবর কেউ রাখে না’

এনামুল হক, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১২
‘সবাই ভুলে গেছে, এখন আমার খবর কেউ রাখে না’

আবদুশ শহীদ একজন মুক্তিযোদ্ধা। বাড়ি ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের রাজার গাঁও গ্রামে।

স্বাধীনতা যুদ্ধে ছাতক অঞ্চলে সম্মুখ পানে অংশ গ্রহণ করেছিলেন তিনি। শ্বাসকষ্ট, ডায়বেটিকসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন এই মুক্তিযোদ্ধা। আর তাই মহান স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার আকুতি জানিয়েছেন তিনি।

অসুস্থতার খবর শুনে প্রবীণ এই মুক্তিযোদ্ধাকে দেখতে তার গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। দীর্ঘ কাঁচা রাস্তা পায়ে হেঁটে ছাতক শহরের অদূরে রাজার গাঁও গ্রামে তার বাড়িতে পৌঁছি। ভেতরে ঢুকে দেখলাম অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা আবদুশ শহীদ টিলা ঘেরা বাড়ির উঠানের এক পাশে চাদর গায়ে চেয়ারে বসে আছেন।

পরিচয় দেওয়ার পর হাত ধরে টেনে কাছে নিয়ে বসালেন। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘সবাই ভুলে গেছে, এখন আমার খবর কেউ রাখে না। ’

তার অসুস্থতার কথা জানতে চাইলে অঝোরে কেঁদে উঠলেন। জানালেন, বেশি সময় কথা বলতে পারেন না। বাড়ির বাইরে খুব বেশি এখন আর যাওয়া হয় না। বাড়ির উঠানে হাঁটাহাঁটি করেই সময় পার করেন। কিছু দিন আগে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত আসনগুলোর মধ্যে একটি আসনও পেয়েছিলেন। হাসপাতালের ডাক্তাররা যথেষ্ট সম্মানও করেছেন। কিন্তু প্রতিদিন প্রায় ২শ টাকার ওষুধ খেতে হয় তাকে। ওষুধের টাকা জোগাড় করার সামর্থ্য নেই তার।

আক্ষেপ করে প্রবীণ এই মুক্তিযোদ্ধা বললেন, ‘অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করলাম, স্বাধীন দেশ উপহার দিলাম। আর এখন বেঁচে থাকার জন্য ওষুধ খাওয়ার টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ’

তিনি জানালেন, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা মাসিক ২ হাজার টাকা ছাড়া আর কোনো উপার্জন নেই তার। ১১ জন ছেলে থাকলেও ১০ জনই বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে।
    
মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে দিতেই আঁতকে উঠলেন। বললেন, তার সামনেই তার মাকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এ কথা বলেই রাগে থরথর করে কেঁপে উঠেন ’৭১-এর রণাঙ্গনের এই বীর সৈনিক।

জানালেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। ৫নং সেক্টর কমান্ডার মীর শওকত আলী, সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন হেলালের নেতৃত্বে ছাতক অঞ্চলে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। দলের নেতা ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীকের নেতৃত্বে ৩৬ জন যোদ্ধাকে নিয়ে গড়া হয় একেকটি প্লাটুন। এরকমই একটি প্লাটুনের প্লাটুন কমান্ডার ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুশ শহীদ।

তার নেতৃত্বে অপারেশন চালানো হয় ছাতক উপজেলার বেতুরা, উলুর গাঁও, খাড়–ল গাঁও, হাদা, লক্ষিবাউর, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, নোয়ারাই, দোয়ারা বাজার উপজেলার টেংরা এলাকায়।

স্বাধীনতার ৪০ বছর পর বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে আক্ষেপ করে বলেন, ‘যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম তা আজও পূরণ হয়নি। আজও বিদেশের কাছে আমাদের সাহায্যের জন্য হাত পাততে হয়। এখনও চুরি, ডাকাতি, হানাহানি, রাজনৈতিক সংঘাত লেগেই আছে। ’

তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আবদুশ শহীদ বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। এখন এই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে তরুণদের। প্রবীণরা যা পারেননি নবীনদের তা করতে হবে। কাজ করতে হবে দেশের জন্য। বাংলাদেশকে তুলে ধরতে হবে বিশ্ব দরবারে। ’

অসহায় মুক্তিযোদ্ধা আবদুশ শহীদ বেঁচে থাকতে চান সুস্থভাবে। আর তার এই সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন আমাদের সবার সহযোগিতা। আমরাই পারি একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে বীর এই মুক্তিযোদ্ধাকে স্বাভাবিক সুন্দর জীবন ফিরিয়ে দিতে। আসুন  স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার জীবন মান উন্নয়নে সহযোগিতার হাত বাড়াই।

আবদুশ শহীদের মুক্তিযোদ্ধা নং ২০, মুক্তি বার্তা নং ০৫০২০২০৪২৬, গেজেট নং-১১১২।

মুক্তিযোদ্ধা আবদুশ শহীদকে সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করুন এই মোবাইল নম্বরে- ০১৮২৭ ১০১ ১০১

লেখক : এনামুল হক, স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক জালালাবাদ, সিলেট
[email protected]

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৮ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।