ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ফ্যাসিস্ট শাসনের পুনরাবৃত্তি চাইলে বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে: জোনায়েদ সাকি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪
ফ্যাসিস্ট শাসনের পুনরাবৃত্তি চাইলে বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে: জোনায়েদ সাকি

ঢাকা: যারা বাংলাদেশকে আবার ফ্যাসিস্ট শাসনে নিয়ে যেতে চায় কিংবা তারই পুনরাবৃত্তি চায়, তাদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেঙ্গলী মিডিয়াম হাই স্কুলে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

 

২৪'র গণঅভ্যুত্থানে মোহাম্মদপুর-আদাবর অঞ্চলে আহত-নিখোঁজ ও শহীদদের তালিকা প্রকাশ ও এই স্মরণ সভার আয়োজন করে গণসংহতি আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানা।

স্মরণ সভায় জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশকে নতুন করে গড়তে হলে, নতুন রাজনৈতিক শক্তি দরকার। সেই রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে আগামীদিনে বাংলাদেশের যাত্রা হবে।

তিনি বলেন, যখন মানুষ ব্যক্তি স্বার্থ অতিক্রম করে সকলের স্বার্থে, সকলের মর্যাদার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে পারে, নিজের জীবন উৎসর্গ করার মতো সাহস দেখাতে পারে এবং জাতির প্রয়োজনে বুক চেতিয়ে দাঁড়িয়ে যায়, এটাই হচ্ছে সর্বোচ্চ মানবিক মুহূর্ত। আমাদের দেশের ছাত্র-তরুণরা, তারা কেউ শিক্ষার্থী, কেউ শ্রমজীবী মানুষ, নানা পেশায় লিপ্ত- তারা জাতির প্রয়োজনে ঐতিহাসিক মানবিক মুহূর্ত তৈরি করেছে। এর চাইতে বড় আত্মত্যাগ এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত প্রেরণার আর কিছু হতে পারে না। সেই কারণেই এই সমস্ত আত্মাহুতি দানকারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুতর দায়িত্বের মধ্যে একটি এদের জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়া। তাদেরকে আগামী প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার জায়গায় হাজির করা।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক বলেন, যারা শহীদ হয়েছেন, এটা কোনো সংখ্যা নয়। প্রত্যেকটি একেকটি সম্ভাবনাময় জীবন। যাদের পরিবারের ছিল, মা-বাবা, ভাই-বোন, সন্তান, স্বামী-স্ত্রী ছিল। কাজেই প্রত্যেকেই একেকটি পরিবার, একেকটি ইতিহাস। তাদের প্রত্যেকের মর্যাদা দরকার। এবং প্রত্যেকটি মৃত্যুর যেন বিচার হয়।

তিনি আরও বলেন, ন্যায় বিচার ছাড়া নতুন বাংলাদেশ হতে পারে না। বাংলাদেশের আগামী যাত্রার প্রথম বিন্দু হবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। অতীতেও বহু ঘটনা ঘটেছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে এদেশে ন্যায়বিচার একটি অধরা বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। যে দেশে ন্যায় বিচার নেই, সেই দেশ জনগণের দেশ হয় না। আজকে আমরা যখন নতুন বাংলাদেশের যাত্রার কথা বলছি, তখন ন্যায়বিচারকে পাটাতন হিসেবে নিতে হবে৷ আর এই কারণেই যারা এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, নির্দেশ দিয়েছে- শেখ হাসিনাসহ প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জুনায়েদ সাকি বলেন, আপনাদের অনেক জটিল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হচ্ছে। কথিত স্বৈরাচার প্রতি মুহূর্তে ষড়যন্ত্র করছে৷ রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের লোকজন আছে। তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে অকার্যকর করার চেষ্টা করছে। আজকে আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুরে বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা দেখছি৷ শ্রমিকদের আন্দোলন ন্যায্য। তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই। পাশাপাশি শ্রমিক ভাইদের বলি, কারখানা বন্ধ করে দিলে দেশের অর্থনীতিতে ধস নামবে। তাতে কথিত স্বৈরাচারী ও তার দোসররা সফল হবে৷

তিনি আরো বলেন, আমরা অবিলম্বে একটি কমিশন বা কর্তৃপক্ষ চাই, যারা সমস্ত শহীদদের তালিকা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করবে৷ একজন শহীদও যেন তালিকা থেকে বাদ না যায়। একজন শহীদ পরিবারের মাঝেও যেন কোনো আক্ষেপ না থাকে। এই দেশ তাদের সন্তানের স্বপ্ন অনুযায়ী চলবে।

স্মরণ সভায় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় নিহত, আহত ও নিখোঁজদের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের মোহাম্মদপুর-আদাবর থানার সংগঠক ফাইয়াজ ফিরোজ বলেন, নিরস্ত্র জনগণের ওপর এই গুলিবর্ষণ এবং সশস্ত্র হামলার ফলে মোহাম্মদপুর, আদাবর এবং বেড়িবাঁধসংলগ্ন এলাকায় প্রচুর মানুষ আহত, নিহত এবং নিখোঁজ হয়েছেন। আমাদের কাছে তালিকাভুক্তির ফলে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা এখনো পর্যন্ত ২২ জন নিহত, ২২৭ জন আহত এবং ২ জন নিখোঁজ ব্যক্তির তালিকা করতে পেরেছি। এই তালিকা ডিজিটালাইজেশনের কাজও চলছে। আগামী সপ্তাহে সাপোর্টিং ডকুমেন্টসসহ এই তালিকা সামারি করে স্বরাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এ সময় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ৭ দফা দাবিও তুলে ধরেন ফাইয়াজ ফিরোজ। দাবিগুলো হলো-

১) এই হামলা এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকল ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা।

২) নিহতদের শহীদের মর্যাদা দানের ঘোষণা দেয়া।

৩) নিখোঁজদের সন্ধান বের করার জন্যে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া।

৪) আহতদের রাষ্ট্রীয় খরচে যথাযথ সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

৫) রাষ্ট্রীয়ভাবে নিহত, নিখোঁজ এবং গুরুতর আহতদের পরিবারের দায়িত্ব নেয়া।

৬) শহীদদের স্মরণে মোহাম্মদপুরের রাস্তাগুলির নামকরণ।

৭) রাষ্ট্রীয় খরচে বেড়িবাঁধ তিন রাস্তার মোড়ে, মোহাম্মাদপুর বাস-স্ট্যান্ডে, শিয়া মসজিদ মোড়ে এবং শ্যামলী মোড়ে শহীদদের নামের তালিকা সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা।

গণসংহতি আন্দোলনের মোহাম্মদপুর-আদাবর থানার আরেক সংগঠক হাসান আল মেহেদীর সঞ্চালনায় স্মরণসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক আশরাফ কায়সার, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দিন পাপ্পু, গণসংহতি আন্দোলনের উত্তরের আহ্বায়ক মনিরুল হুদা বাবন, সদস্য সচিব মাহবুব উদ্দিন রতন, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া।

স্মরণ সভায় গণঅভ্যু্ত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা স্মৃতিচারণ করেন এবং আহতরা তাদের ওপর হামলার বর্ণনা দেন। এ সময় তারা এই ঘটনার বিচার দাবি করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪
এসসি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।