ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুই মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। দলটির মতো তাদের শরিক ১৪ দলীয় জোটেরও আতঙ্ক সীমাহীন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার গদি থেকে ছিটকে পড়েন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগের পর উৎখাত হয় তার সরকার। একই পরিস্থিতির শিকার হন ১৪ দলের শরিকরাও। তাদের প্রায় সবার নামে মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট।
মামলার হয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (ইনু) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে।
হেভিওয়েটদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন ইনু-মেনন। তাদের কয়েক দফায় রিমান্ডও হয়েছে। এখন তারা কারাভোগ করছেন। মঞ্জুকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাকে পরে জামিন দেওয়া হয়েছে শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধ হওয়ায়।
সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের নামে মামলা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। জোটের শরিক দলগুলোর সাবেক এমপি ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের নামেও মামলা হয়েছে। ওয়ার্কাস পার্টির অন্তত ১০ জন, জাসদের ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে দল দুটি থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ দুই দলের নেতারা জানিয়েছেন, তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে মামলার আতঙ্কে রয়েছেন। কার বিরুদ্ধে কখন মামলা হয়, কোন মামলা হয়- এগুলো নিয়ে তারা ভয় পাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক জোট শরিক এক নেতা বলেন, আমাদের কার নামে মামলা হয়েছে, কার নামে হয়নি- সেটা বোঝা যাচ্ছে না। শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের কোনো নেতার বিরুদ্ধে মামলা থাকলে সেগুলোয় কাগজ পেলে বোঝা যাবে ১৪ দলের কারও নাম আছে কিনা। হাসিনার নামে দুশোটির বেশি মামলা হয়েছে। কোন মামলায় আমাদের কোন নেতার নাম আছে- তা স্পষ্ট নয়।
জোটের আরেক নেতার কাছে কার কার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত মামলা হয়েছে জানতে চাওয়া হয়। উনি কোনো নেতার নাম প্রকাশ করতে চাননি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এক মামলায় একজনের নাম এলে পরের আরও মামলায় তার নাম দেওয়া হচ্ছে।
১৪ দলের আরও কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, বুঝতে পারছেন না। কেন্দ্র থেকে জেলা পর্যন্ত তাদের মধ্যে একটা ভীতি কাজ করছে। দলীয় কোনো সভা তারা করতে পারছেন না। শরিক হলেও আনুষ্ঠানিক কোনো আয়োজন করা যাচ্ছে না। নেতাদের অনেকে অফিস করতে পারছেন না। এভাবে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অনেকটাই কঠিন।
তারা আরও বলেন, লুকিয়ে বা সংক্ষিপ্ত আকারে আমরা সভা করলেও সেটি কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের মধ্যে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান ও ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ভবিষ্যৎ রাজনীতি, জোট, নির্বাচনের চেয়ে এখন দল টিকিয়ে রাখাই বড় সংগ্রাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৪ দলের শরিক একটি দলের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কঠিন সময় পার করছি। পার্টি টিকিয়ে রাখাই বড় সংগ্রাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২৪
এসকে/এমজে